Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে জরুরি অবস্থা ঘোষণায়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে জরুরি অবস্থা ঘোষণায়

ছবি: সংগৃহীত

জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)-এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে। বিষয়গুলো হলো-অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে। এছাড়া জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা অংশগ্রহণ করেন, সেজন্য যেন তাকে আহ্বান জানানো হয়। এসব সংযুক্ত করা হয়েছে।

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের ১২তম দিনের সংলাপ শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জরুরি অবস্থা চলাকালে অনুচ্ছেদ ৪৭(ক) এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাবে না। অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, রাজনৈতিক দল এবং জোটসমূহ প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৫ এ সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে।

এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেবেন। তবে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে সংবিধানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন-এমন বিধান সংযোজন করতে পারবে। অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে অভিযোগে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

রোববারের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসাবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সীমাহীন ক্ষমতা আর্টিকেল ৯৫-এ রয়েছে। সাংবিধানিকভাবে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বাধ্যবাধকতা রাখি। আলোচনায় একটি জায়গায় এসেছিলাম-সিনিয়র মোস্ট দুজনের মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ করার। তবে কোনো দল নির্বাচন ইশতেহারে বিষয়টি উল্লেখ করে ম্যান্ডেট পেলে দুজনের প্রভিশনটা সংবিধানে রাখতে পারবে। ৭০ অনুচ্ছেদে যেমন নোট অফ ডিসেনে আমরা একমত হয়েছিলাম-এটাও অনেকটা তার কাছাকাছি। জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা একমত হয়েছি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতিকে রাখা ঠিক হবে না। তাকে না রাখতে পারলেই ভালো। এর পরও ঐকমত্যে আসা না গেলে একদম লাস্ট অপশন হিসাবে একটা ইনস্টিটিউশন প্রধানকে রাখা যায়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি-অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বেশি হবে না তাদের মধ্য থেকে একজন নিয়োগ করা। এর পরও যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতিকে রাখা বা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত যেটা হয় সেটা নিতে পারে।

জরুরি অবস্থা জারি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের আর্টিকেল ১৪১-এর ‘ক’ তে কী কী বিষয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায় তা আছে। যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ- এরপর একটি অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কথা বলা আছে। এর পরিবর্তে এখানে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তাব ছিল। এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের বিধান আছে। এক্ষেত্রে শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের বিধান না রেখে কমিশনের প্রস্তাব ছিল মন্ত্রিসভার অনুমোদন। তো সেই বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। এ বিষয়ে সর্বসম্মত ঐকমত্য হয়েছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা যেন অংশগ্রহণ করেন, তাকে আহ্বান জানানো হয়। সেটা সংযুক্ত করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বিদ্যমান আইনে জরুরি অবস্থা জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এতে শুধু স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা বলেছি, এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ডেকে নিয়ে বিরোধীদলীয় প্রধানেরও মতামত নিতে হবে। কোনো কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকলে বিরোধীদলীয় উপনেতার মতামত নিতে হবে। আর তখন সংসদ কার্যকর না থাকলে সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সংসদের সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অর্থাৎ সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থাকতে হবে।

বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য জাবেদ রাসিম বলেন, আমরা জরুরি অবস্থাকে তিনটি ভাগ করতে বলেছিলাম- যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের পরিবর্তে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বা ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে জরুরি অবস্থা জারির মত পরিস্থিতি দেখা দিলে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবে। আগে যেমন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারতেন, সেখানে সেটা মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কলেবর একটু বর্ধিত করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা এনসিপি একমত পোষণ করেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি রূপরেখা এনসিপি দিয়েছে জানিয়ে রাসিম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ বিচারাঙ্গনে নিয়ে আসার কারণে যে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে আমরা সেটার ঘোর বিরোধী। আমরা বিচারাঙ্গনকে এ ভূমিকায় দেখতে চাই না।

এর আগে বৈঠকের সূচনায় কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে। সেটার লক্ষ্য ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায়। বড়জোর ৩১ জুলাইয়ে যেতে পারি। আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসের মধ্যে যেভাবে হোক একটি যৌক্তিক জায়গায় আসা। তা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম