Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এনবিআরের নিরীহ আন্দোলন সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রে রূপ নেয়: ফাওজুল কবির খান

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এনবিআরের নিরীহ আন্দোলন সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রে রূপ নেয়: ফাওজুল কবির খান

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরীহ আন্দোলন শুরু করলেও পরে তা সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে রূপ নেয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। রোববার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সভাকক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের আন্দোলন পরে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে রূপ নেয় তা দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি (গত ৮ জুলাই এনবিআর আন্দোলনের ৬১ দিন : ‘কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্র’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়) আমলে নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রতিবেদন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। যুগান্তরের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, সরকার চাইলে প্রতিবেদনটির তথ্য তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিষয়টি যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ কারণে উপদেষ্টা কমিটি সুপারিশ আকারে তা অর্থ উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি জারি করা রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় ‘চতুরতার আশ্রয়’ নেওয়া হয়েছিল। এ কারণে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে এবং এর মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার, শুল্ক ও কর ক্যাডারের কোনো আধিপত্য থাকবে না। যৌক্তিক বিবেচনায় বিষয়টির সমাধান করা হবে। তিনি জানান, রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাসংক্রান্ত অধ্যাদেশে দুই বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের যেমন আধিপত্য থাকবে না, তেমনি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও আধিপত্য থাকবে না। রাজস্বনীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদ ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আলাদা একটি নীতিমালার পরামর্শ দেওয়া হবে। সচিব পদে ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে পৃথক করে অধ্যাদেশ জারি হয়। যা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের দ্বন্দ্বের কারণে।

তিনি বলেন, এনবিআর থাকবে না। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে মানুষ অট্টহাসি দেয়। কেন দেয়, তা সবার জানা আছে। এই নাম না থাকলেই সবার জন্য ভালো। উপদেষ্টা পরিষদে কীভাবে এই অধ্যাদেশ পাশ হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, উপদেষ্টারাও তো ভবিষ্যৎ দেখতে পান না। মানুষ হিসাবে তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। এ জন্যই সরকার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সবার ভুল হয়, উপদেষ্টাদেরও ভুল হয়েছে। সেটা সংশোধন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এনবিআরের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যবহার করার বিষয়ে কথা হচ্ছে। সরকার দুদককে মোটেও ব্যবহার করেনি। এই প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল; এনবিআর কর্মকর্তাদের আচরণ এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। যদি তারা নির্দোষ হন, দুদক তাদের দায়মুক্তি দেবে।

তিনি জানান, এনবিআরের কর্মকর্তারা সরকারের আস্থা হারিয়েছেন। আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাদের রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে হবে। তারা কেউ শিশু নয়। আন্দোলনের শুরুর দিকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারা দুই মাস আন্দোলন করেছে। এটা খাতুনগঞ্জের আড়ত নাকি? সবাই কাজকর্ম ফেলে আন্দোলনে নেমেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন তাদের উচিত হবে, সরকারের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফেরাতে। এটা তো ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ে বাধা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করতে আন্দোলনের নামে তারা সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সরকার অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দ্রুত অর্থ উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে।

রাজস্ব আহরণের গতি কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব দেখতে তারা মাঠপর্যায় পরিদর্শনে যাবেন। আগে কী সেবা দেওয়া হতো, আর এখন কী সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং রাজস্ব আহরণে গতি কেমন, তা দেখতে যাবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কহার নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা অন্ধকারে রয়েছেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে থাকার কোনো সুযোগ নেই। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা বাণিজ্য আলোচনার চেয়েও ব্যাপক। শুধু শুল্ক নয়, সেখানে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পর্ক রাখছেন, সেটাও তারা দেখছে। এই নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সেটাও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। শুধু শুল্ক নয়, অশুল্ক বাধা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-উপদেষ্টা কমিটির সদস্য গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম