যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তারা
এ সময়ে বড় প্রয়োজন ছিল নুরুল ইসলামের
স্বপ্নদ্রষ্টার আদর্শ ও দিকনির্দেশনায় আগামী দিনে যমুনা গ্রুপকে আরও এগিয়ে নিতে চাই-সালমা ইসলাম * তিনি যেখানেই হাত রেখেছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে; ব্যর্থতার সঙ্গে তার দেখা হয়নি-আবদুল হাই শিকদার
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোববার যুগান্তর কার্যালয়ে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে মোনাজাত করছেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম, গ্রুপ পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম, সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম, এসএম আব্দুল ওয়াদুদ, কামরুল ইসলাম ও যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলামের ছোট ছেলে আরশান আরিফ ইসলাম এবং যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদারসহ যুগান্তর ও যমুনা টিভি পরিবারের সদস্যরা -যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই বিপ্লবের রক্তে রঞ্জিত এই মুক্ত বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের অনেক প্রয়োজন ছিল। আজ বেঁচে থাকলে অনেক অবদান রাখতে পারতেন দেশের জন্য। যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষ্যে রোববার দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনসহ যমুনা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল-বনানী কবরস্থানে প্রয়াত চেয়ারম্যানের কবর জিয়ারত, যুগান্তর কার্যালয়ে স্মরণসভা, প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন, কুরআন খতম এবং মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল। এ সময় শোককে শক্তিতে পরিণত করে অভিভাবকের (নুরুল ইসলাম) রেখে যাওয়া কাজ সামনে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা এবং হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় দেশের শিল্প খাতের অগ্রদূত, সফল স্বপ্নসারথি এই আপসহীন উদ্যোক্তাকে। অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার স্বজন, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহীরা অংশ নেন। ঢাকার বাইরেও সারা দেশেই বিভিন্ন স্থানে কুরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে নুরুল ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে তার সহকর্মী ও স্বজনরা বলেন, সাহসী এই শিল্পোদ্যোক্তা আজ সশরীরে বেঁচে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন তার অমর সৃষ্টি বিশাল কর্মযজ্ঞ যমুনা গ্রুপের ৪২টি প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনন্তকাল মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। যার সওয়াব নুরুল ইসলামের আমলনামায় যোগ হবে।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় যুগান্তরে বিশেষ দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিমের উপস্থাপনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেন-যমুনা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নুরুল ইসলামের আদর্শ ও দিকনির্দেশনা বিবেচনায় রেখে আগামী দিনে যমুনা গ্রুপকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।’ যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেন, নুরুল ইসলাম যেখানেই হাত রেখেছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। জীবনে ব্যর্থতার সঙ্গে তার কোনোদিন দেখা হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক-মনিকা নাজনীন ইসলাম, সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম, এসএম আবদুল ওয়াদুদ, কামরুল ইসলাম, জাকির হোসেন, নুরুল ইসলামের দৌহিত্র আরশান আরিফ ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন-যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর এবং যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের উপসম্পাদক-আহমেদ দীপু, এহসানুল হক বাবু ও দেওয়ান আসিফ রশীদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুর রহমান ও নগর সম্পাদক মিজান মালিক।
এর আগে সকালে বনানী কবরস্থানে নুরুল ইসলামের কবর জিয়ারত ও আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করে যমুনা-যুগান্তর পরিবার। সকালে নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত, দোয়া ও মোনাজাত করেন যমুনা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম ও যমুনা গ্রুপের পরিচালক মেহনাজ ইসলাম তানিয়া। এরপর যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদারের নেতৃত্বে কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা।
সালমা ইসলাম বলেন, নুরুল ইসলাম এমন একজন মানুষ ছিলেন, যাকে আল্লাহ ছায়া দিয়ে সহায়তা করেছেন। তাকে দিয়ে আল্লাহ অনেক কাজ করিয়েছেন। না হলে এক জীবনে একজন মানুষের পক্ষে এত বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আল্লাহই তাকে (নুরুল ইসলাম) এত কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আল্লাহ কিছু ভালো মানুষকে দিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করিয়েছেন। আমরা বুঝতে পারি এই ভালো মানুষের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সাহেব ছিলেন। তিনিই আমাদের যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা। সহধর্মিণী হিসাবে আমি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। কারণ স্বামী হিসাবে স্ত্রীকে সম্মান দিতে পেরেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমাকে কখনো কষ্ট দেননি। আমাকে কোনো কাজ করতে দিতেন না। অনেক স্মৃতি বারবার আমার মনে দোলা দেয়। এই স্মৃতি সবসময় অম্লান হয়ে থাকবে। সালমা ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে বলি, তিনি (আল্লাহ) কেন আমার আগে আমার স্বামীকে নিয়ে গেলেন। নুরুল ইসলাম বেঁচে থাকলে পৃথিবীকে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন। যুগান্তরের প্রকাশক বলেন-জীবিত অবস্থায় নুরুল ইসলাম আমাদের অনেক দিকনির্দেশনা দিতেন। আজকে তিনি নেই। কিন্তু তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের সন্তানরা এখন একসঙ্গে বসে সব সিদ্ধান্ত নেয়। কীভাবে যমুনা গ্রুপকে আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে, তা সবাই (সন্তানরা) আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন বলেই আজকে আমার সন্তানরা ভালো আছে। ভালো কাজ করার জন্য পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছে। আপনারা দোয়া করবেন। সালমা ইসলাম বলেন, নুরুল ইসলামের আদর্শ ও দিকনির্দেশনা বিবেচনায় রেখে আগামী দিনে যমুনা গ্রুপকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা এবং দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া কামনা করছি।
স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন-যুগান্তরের সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, বিশেষ প্রতিনিধি-শেখ মামুনুর রশীদ, মাহবুব আলম লাবলু, মিজান চৌধুরী, তোহুর আহমেদ, মতিন আব্দুল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম ও কাজী জেবেল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কপি এডিটর শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক জোহায়ের ইবনে কলিম, মফস্বল বিভাগের ইনচার্জ নাঈমুল করিম নাঈম, স্পোর্টস ইনচার্জ পারভেজ আলম চৌধুরী, অনলাইন ইনচার্জ আতাউর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) হুমায়ূন কবির, হিসাবপ্রধান সাইফুল ইসলাম, প্রেস ম্যানেজার নাজমুল আলম খান, সার্কুলেশন ম্যানেজার আবুল হাসান ও সাইদুল হক, যুগান্তরের সম্পাদনা সহকারী বিভাগের প্রধান আতিকুর রহমান চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মোরশেদ আলম। কম্পিউটার বিভাগের ইনচার্জ শাহদাত হোসেন, সিটিপি ইনচার্জ ওয়াসেক আল আজাদ। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা তোফায়েল গাজ্জালী। এ সময় নুরুল ইসলামের কর্মের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। সেখানে নুরুল ইসলামের সততা, আদর্শ ও দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরা হয়।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, মৃত্যুকে পরোয়া না করে যারা ৭১ সালে মাতৃভূমির স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, সেই যুদ্ধের অন্যতম বীর ছিলেন নুরুল ইসলাম। এত বড় একজন মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধের পর তিনি যদি আর কিছু নাও করতেন, তারপরও গৌরবের আসন চিরকাল নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকত। কিন্তু তিনি সেখানে থেমেননি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূমিতে অনুভব করেছিলেন প্রধান সমস্যা এখন দেশটাকে গড়ে তোলা। সেজন্য বিশাল শিল্পায়ন দরকার। যুগান্তর সম্পাদক বলেন, একটি দেশকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যেতে শিল্প বিপ্লব ছাড়া উপায় নেই। এজন্যই তিনি একাত্তরের অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধে নেমেছিলেন। এই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ফসল আজকের যমুনা গ্রুপ। তিনি বলেন, কী করেননি নুরুল ইসলাম। আমার মনে হয় তার হাত ছিল সোনা দিয়ে বানানো। যেখানে হাত রেখেছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। জীবনে ব্যর্থতার সঙ্গে তার কোনোদিন দেখা হয়নি। তিনি জানতেন কীভাবে লড়াই করতে হয়। কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়। দেশের অনেকেই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু রাতের বেলা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। সেই স্বপ্ন দিনের বেলা অর্থহীন হয়ে যায়। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম স্বপ্নগুলো দেখেছেন এক ঠান্ডা মাথায় জেগে থেকে সুপরিকল্পিতভাবে। জুলাই বিপ্লবের রক্তে রঞ্জিত এই মুক্ত বাংলাদেশে আমরা আজকে তার অভাব প্রচণ্ডভাবে অনুভব করছি। আরও কত কিছু দেওয়ার ছিল তার। তবে যতটুকু দিয়ে গেছেন সেটার ঋণ তো শোধ করার মতো নয়। তার মতো মানুষের জন্যই বোধ করি আধুনিক চীনের নির্মাতা কমরেড মাও সেতুং একটি কথা বলেছেন-বেশির ভাগ মৃত্যু হলো পাখির পালকের মতো হালকা, আর কোনো কোনো মৃত্যু যেন থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী। আবদুল হাই শিকদার আরও বলেন, দেশের অনেক বড় বড় মানুষ ছিল, যাদের মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে জন্তু-জানোয়ারের মতো কামড়াকামড়ি করে মারা গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু অনুপম মাধুর্য দিয়ে নুরুল ইসলাম তার পরিবারকে সুশিক্ষিত করেছেন। এমন প্রেমময় প্রাণময় এমন সুশৃঙ্খল মমতাময় একটি পরিবার তৈরি করে দিয়ে গেছেন, সে পরিবারটির দিকে তাকালেও শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে। যে মানুষটি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে সফল, সে তো কর্মজীবনে সফল হবেনই।
যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আমাদের মরহুম চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের অনেক প্রয়োজন ছিল। এমন একটি সময়ের অনুভব করতেন তিনি। আজ বেঁচে থাকলে দেশের জন্য অনেক অবদান রাখতে পারতেন। বিএম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘নুরুল ইসলামকে আমরা যারা ভালোবাসি, তারা দুটি কাজ করতে পারি। এর মধ্যে-গোপনে সদকা, নফল রোজা ও নামাজ পড়ে তার বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করব। আর দ্বিতীয়ত শুধু কথায় নয়, মরহুম চেয়ারম্যানের ভালো কাজগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করব। এভাবে তাকে স্মরণ করলে আমাদের জীবন সার্থক হবে। তিনি বেঁচে থাকলে যেভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন, আমাদেরও সেভাবে করতে হবে। বিএম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘মরহুম চেয়ারম্যানের সান্নিধ্যে বহু সময় আমার কেটেছে। তার সঙ্গে মিশতে না পারলে জীবন অপূর্ণ রয়ে যেত। আমি কাছ থেকে দেখেছি, তিনি ছিলেন কর্মনিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক ও সময়জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ।’ তিনি কাজকে কখনো ফাঁকি দেননি। যে তাকে অনুসরণ করবে, সে জীবনে সফল হবেই হবে। প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে যুগান্তরের উপসম্পাদক বলেন, সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে মরহুম চেয়ারম্যান কোনো আপস করতেন না। তথ্য ঠিক থাকলে তিনি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। আপস না করায় জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তবু মাথানত করেননি।
যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকে স্বপ্ন দেখি। তবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি না। কিন্তু নুরুল ইসলাম স্বপ্ন দেখতেন এবং তা বাস্তবায়ন করতেন। এটি বিরল। আমরা অর্থনীতিতে যেসব বিষয় পড়েছি, তা তার মাথায় ছিল। এই ক্ষমতা আল্লাহ সব মানুষকে দেন না। তিনি বলেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে দরকার নিরলস প্রচেষ্টা। যেটা তার ছিল। প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে নুরুল ইসলামের কৌশল ছিল সততা ও পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া। যেমন যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদাররা কাজ করছেন। এটি বিশাল মহত্ত্বের ব্যাপার।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নুরুল ইসলাম শুধু একজন ব্যক্তি নন, শিল্প খাতের একটি বিপ্লবের নাম। ব্যবসা অঙ্গনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। যৌবনে অস্ত্র হাতে ৭১ সালে দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন রণাঙ্গনের প্রথম সারির এই যোদ্ধা। আর স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শুরু করেন নতুন যুদ্ধ। এ যেন অবিরাম পথচলা। মেধা, সততা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার সঙ্গে বিশ্বমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আপসহীন এই কর্মবীর। এসব প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বেই বাংলাদেশকে তুলে ধরছে। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী ছিলেন তিনি। দেশকে নিয়ে বিশাল স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগেই ৭৪ বছর বয়সে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা বলেন, নুরুল ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সালমা ইসলামের নেতৃত্বে তার পরিবার দেশ ও যমুনা গ্রুপকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। যমুনা আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
২০২০ সালের ১৩ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নুরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। পরের দিন ১৪ জুলাই রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আপসহীন এই যোদ্ধা।
যমুনা গ্রুপ ও যমুনা টিভির কর্মসূচি : বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যমুনা গ্রুপ ও যমুনা টেলিভিশন পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে। কিংবদন্তি এই শিল্প উদ্যোক্তার জীবনী নিয়ে তথ্যচিত্র প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। এছাড়া সকালে বনানীতে কবর জিয়ারত শেষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে যমুনা টিভি পরিবার।
