ইসিতে নতুন দল নিবন্ধন
প্রাথমিক বাছাইয়ে টেকেনি এনসিপিসহ কোনো দল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করা ১৪৪টি দলের কোনোটিই প্রাথমিক বাছাইয়ে পুরোপুরি টেকেনি। নিবন্ধন পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, কোনো দলই তা জমা দেয়নি। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ডেসটিনি খ্যাত মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিও রয়েছে। সব দলকেই ১৫ দিন সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণের চিঠি দিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আইন অনুযায়ী যেসব শর্ত পূরণের তথ্য দিতে হয়, সব দলেরই সেসব তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি থাকা সেসব তথ্য জমা দিতে সব দলকেই ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে জমা দেওয়া ৬২টি রাজনৈতিক দলকে মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। শেষ ধাপে জমা দেওয়া এনসিপিসহ ৮২টি দলকে আজ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। প্রতিটি দলের যেসব তথ্যের ঘাটতি রয়েছে, তা উল্লেখ করে সেই তথ্য দেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য সরেজমিন যাচাই করা হবে। কোনো দল তথ্য সরবরাহ না করলে ওই দল নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবে।
আরও জানা যায়, ইসিতে নিবন্ধনের জন্য এনসিপি আবেদনের সঙ্গে ১৩৩টি বই আকারে তথ্য-উপাত্ত জমা দিয়েছে। তবে দলটি ঢাকা ও সিলেট কার্যালয়ের ভাড়ার সপক্ষে দলিল দেয়নি। বেশ কয়েকটি উপজেলায় ২০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরসহ যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে ২০০ জনের সই নেই। কোথাও ১৭৫ জন, কোথাও ১৮০ জনের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও কিছু তথ্যের ঘাটতি রয়েছে দলটির।
একইভাবে অন্য দলগুলোর বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা দপ্তরের বিষয়ে কোনো দলিল ইসিতে জমা দেয়নি। প্রাথমিক বাছাইয়ে এ দলটি আরপিওর ৯০খ(১)(ক)(আ) অনুচ্ছেদের কোনো শর্ত প্রতিপালন করেনি। নিবন্ধনের আবেদন করা আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টিও (বাজাপা) আরপিওর ৯০খ(১)(ক)(অ) অনুচ্ছেদের কোনোটির শর্ত প্রতিপালন করেনি। বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টির কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের জন্য একটি ঠিকানা দিয়েছে। এ দলটি আরপিওর ৫টি নির্দেশনা প্রতিপালন করেনি। বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের আরপিওর ১০টি শর্ত প্রতিপালিত হয়নি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোকে আবেদন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। পরে বেশকিছু দলের অনুরোধে ওই সময় বাড়িয়ে ২২ জুন নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, দলগুলোর মধ্যে কোনোটিই উত্তীর্ণ হতে পারেনি প্রাথমিক বাছাইয়ে। তাই এ চিঠি দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের আবেদনে তথ্যে ঘাটতি থাকলে আইনে ১৫ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়ার বিধান রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়াও কোনো দলের কেউ পূর্বে সংসদ-সদস্য থাকলে বা পূর্বের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসাবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে নিয়ম কানুনগুলোই সাধারণত খেয়াল করা হয়। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করে দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় কমিশন। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে ইসি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।
