Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফের ১০ ঘণ্টার কারফিউ

গোপালগঞ্জে আরেক মামলা গ্রেফতার আতঙ্ক

Icon

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গোপালগঞ্জে আরেক মামলা গ্রেফতার আতঙ্ক

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় চলমান কারফিউ শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা শিথিল করা হয়েছে। এতে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শহরের কিছু দোকানপাট খুলেছে, তবে বেচাকেনার অবস্থা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। সড়কেও যানবাহন চলাচল তেমন নেই। এদিন রাত ৮টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ফের কারফিউ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে চার মামলায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আসামির সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া রমজান মুন্সির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে মামলা করবে না বলে জানিয়েছে তার পরিবার। নিহত দীপ্ত সাহার স্বজনও মামলা করতে চায় না।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক শামীম আল মামুন বাদী হয়ে ৫৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৩শ-সাড়ে ৩শ জনকে আসামি করে ‘সন্ত্রাস দমন আইনে’ মামলা করেছেন। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৬ জুলাই বেলা ১১টায় সদর উপজেলার সাতপাড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। এ নিয়ে জেলায় মোট চার মামলায় ৩৫৮ নাম উল্লেখসহ মোট আসামি ৩ হাজার ৮ জন। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শনিবার আরও ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৬০ ঘণ্টায় জেলায় মোট গ্রেফতার ৩০৬ জন।

জেলার পাঁচটি থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলায় নতুন ৪৪ জনসহ ৯২ জন, কাশিয়ানী থানায় নতুন ৩৩ জনসহ ৭৭ জন, মুকসুদপুর থানায় নতুন ২২ জনসহ ৮৮ জন, কোটালীপাড়া থানায় নতুন ১০ জনসহ ২২ জন ও টুঙ্গিপাড়া থানায় নতুন ১০ জনসহ ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জেলার সর্বত্র যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকায় মানুষের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারফিউ শিথিল হলেও সেই আতঙ্ক কাটেনি। তবে শহরের সড়ক ও অলিগলিতে রিকশা, ভ্যান ও আটো চলাচলের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। শনিবার এমনিতেই গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখেন। তবে রাস্তাঘাটে পুরুষ মানুষের চলাফেরা খুব কম। দু-একটি হোটেল রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও সেখানে ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। ফার্মেসি, নিত্যপণ্য ও চায়ের দোকান খোলা ছিল।

স্থানীয়রা জানান, গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কোনো গ্রাম এমনকি অন্য জেলায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। গোপালগঞ্জের কাঁচাবাজারে হরিদাসপুর গ্রামের গৃহবধূ রেহানা বেগম বলেন, আমার স্বামী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। দুদিন হলো তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন। গ্রেফতারের ভয়ে আমার স্বামীকে বাজারে আসতে দেইনি। নিজে এসেছি। তিনি বলেন, এ অবস্থা কতদিন থাকবে জানি না। আমরা ভীষণ আতঙ্কে আছি। আমরা দ্রুত এর অবসান চাই।

শহরের ঘুল্লিবাড়ি মোড়ে কথা হয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মো. শহিদুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলে খুলনা মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ছাত্র। কয়েকদিন হলো বাসায় এসেছে। যেভাবে ধরপাকড় ও গ্রেফতার হচ্ছে আমি আজ (শনিবার) ছেলেকে খুলনায় তার নানাবাড়িতে রেখে এসেছি। গোপালগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ভেন্ডার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, আমার ছেলেটা কলেজে পড়ে। ওকে নিয়ে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কখন কী হয়ে যায়। রাতে ছেলেকে বাড়িতে ঘুমাতে দিচ্ছি না।

এদিকে আবারও কারফিউ জারি হওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিু আয়ের মানুষ হতাশায় পড়েছেন। শহরের কলেজ রোডের ফল ব্যবসায়ী আরিফ মোল্লা বলেন, আমি অল্প পুঁজি দিয়ে মৌসুমি ফলের ব্যবসা করি। আধিকাংশ সময় আড়তদারের কাছ থেকে বাকিতে ফল এনে বিক্রি করি। আড়তদারের টাকা পরিশোধ করার পর যা সামান্য কিছু লাভ হয়, তাতে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। সংঘর্ষের পর কারফিউ থাকায় তিন দিন ধরে দোকান খুলতে পারিনি। ফলগুলো অধিকাংশ পচে গেছে। আমার ২৫-৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আজ (শনিবার) দোকান খুলেছি। কিন্তু ক্রেতা নেই, ফল বিক্রি হচ্ছে না।

মামলা করবেন না নিহতের স্বজনরা : গোপালগঞ্জ শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা নিহত রমজান মুন্সির বড় ভাই জামাল মুন্সি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রমজানের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে মামলা না করার জন্য তাদের ওপর কোনো প্রকার চাপ নেই বলে নিশ্চিত করেন তিনি। গুলিতে নিহত দীপ্ত সাহার বড় ভাই শহরের পোশাক ব্যবসায়ী সঞ্জয় সাহা বলেন, আমার ভাই বাঁচার জন্য অনেক আকুতি করেছিল। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়া হয় দীপ্তকে। বুলেট আমার ভাইয়ের পাঁজর এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। ওকে বাঁচাতে পারিনি। পৌর মহাশ্মশানে ওর সৎকার করেছি। মামলা করতে আর ভাই পারব না। কী হবে মামলা করে? সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এখনো নিহত পরিবারের কেউ থানায় মামলা করতে আসেননি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম