চকরিয়া ও চন্দনাইশে এনসিপির সমাবেশ পণ্ড
পিআর বুঝুক না বুঝুক সংস্কার অবশ্যই হবে: নাহিদ ইসলাম
সালাহউদ্দিনকে ‘গডফাদার’ বলায় উত্তেজনা
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। কেউ পিআর বুঝুক বা না বুঝুক সংস্কার অবশ্যই হবে। কারণ জনগণ সংস্কার চায় এবং এটাই দেশের উন্নতির একমাত্র পথ। তাই জুলাই মাসেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা উচিত। শনিবার কক্সবাজারে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রায়’ তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করতে শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে সংস্কারের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কোনো দলীয় ইস্যু নয়, এটি দেশের কল্যাণে অপরিহার্য। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টির জনসভা থেকে আমরা জুলাই সনদ আদায় করে নেব ইনশাআল্লাহ।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, অতীতে ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় কক্সবাজার ছিল সন্ত্রাস ও মাদকের স্বর্গরাজ্য। নারায়ণগঞ্জের মতো কক্সবাজারেও গডফাদাররা ভয়ভীতি সৃষ্টি করত। তবে বর্তমান সরকার সেই গডফাদারদের অবসান ঘটিয়েছে এবং নতুন কোনো গডফাদারের জন্ম দেওয়া হবে না। কক্সবাজারের মানুষের সংগ্রামকে স্মরণ করে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে আপনারা লড়াই করেছেন, আপনার সন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন। এমনকি ভিনদেশি রোহিঙ্গা যুবক নুর মোস্তফাও জীবন দিয়েছেন। তাকে তালিকাভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
নাহিদ বলেন, কক্সবাজার দেশের সম্ভাবনার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু। বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রসর হবে। দেশের সমুদ্র শক্তি ও নৌশক্তিকে বলবান করতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণে কক্সবাজারকে শক্তিশালী ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করতে হবে। সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সুজা উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অংশ হিসাবে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে ২টার দিকে শহীদ দৌলত ময়দানে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
কক্সবাজারজুড়ে উত্তেজনা : এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এক মন্তব্য ঘিরে কক্সবাজারজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে শহরের লালদিঘিরপাড় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে পথসভায় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কক্সবাজারে শিলং থেকে আসা এক নতুন গডফাদার ঘের দখল করছে, জমি দখল করছে, চাঁদাবাজি করছে। তার নাম বলছি না, কারণ সে নাকি সংস্কার বোঝে না!’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, সংস্কারবিরোধী এসব লোককে কক্সবাজারের জনতা রাজপথে প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে বক্তব্যটি ছড়িয়ে পড়তেই উত্তাল হয়ে ওঠে কক্সবাজার। সন্ধ্যায় শহরের ঘুমগাছতলায় পুরোনো শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা ছাত্রদল। এরপর শত শত নেতাকর্মী প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে তারা স্লোগান দেন। সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের গর্ব। তার বিরুদ্ধে কটূক্তি মানে সমগ্র জেলার মানহানির শামিল। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান বলেন, আমরা ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু কুরুচিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। নাসীরুদ্দীনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
চকরিয়ায় এনসিপির সমাবেশ পণ্ড : বিকালে চকরিয়ায় এনসিপির পথসভা বিএনপিকর্মীদের হামলার মুখে পণ্ড হয়ে যায়। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসুদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাদের গাড়ি আটকে রেখে ধাওয়া দিয়েছে। এটি পরিকল্পিতভাবে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করার অপচেষ্টা।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জানান, এনসিপি নেতারা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হলে পথে তারা মিছিলের বাধার মুখে পড়েন। তাদের বহরের কিছু গাড়ি জেলা পার হতে পারলেও নাহিদ ইসলামসহ আরেকটি গাড়িবহর ফাঁসিখালী এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতার নামে বিএনপি নেতাকর্মীরা আটকে দেন। এ সময় গাড়িগুলোকে উলটো পথে পাঠানোর চেষ্টা করা হলে নেতারা তাতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, জেলা পার হয়ে যাওয়া অন্য গাড়িবহর আবার চকরিয়ার দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করলে চট্টগ্রামের পুলিশ সেটিকে আটকে দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নাহিদ ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট গাড়িবহরকে চকরিয়া হয়ে নিরাপদে জেলা পার করিয়ে দেওয়া হয়।
চন্দনাইশে এনসিপির পথসভা পণ্ড : চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চন্দনাইশে শনিবার এনসিপির জুলাই পথযাত্রার পথসভা পণ্ড হয়েছে। এদিন এনসিপি থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনকে ‘কটূক্তি’ করার প্রতিবাদে দলটি দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলার খানহাট অংশে এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ কারণে রাতে এনসিপির চন্দনাইশের পথসভা পণ্ড হয়ে যায়। এনসিপির নেতারা পদযাত্রার স্থান খানহাটে পৌঁছালে নিরাপত্তাজনিত কারণে না নেমে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সভায় উপস্থিত লোকজন অপেক্ষায় ছিলেন।
বান্দরবান ও লামা প্রতিনিধি জানান, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। জনগণ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে গণ-অভ্যুত্থানে নেমেছিল, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও যদি কেউ ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে চায়, জনগণ আবারও রাজপথে নামবে। শনিবার রাতে বান্দরবান শহরের শহীদ আবু সাঈদ মুক্তমঞ্চের সামনে এনসিপির পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী শহীদুর রহমান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও জেলার পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটির মুখ্য সম্পাদক আ ছা ইম সায়েম হোসেন ও জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক লুক চাকমাসহ এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
