Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিকট শব্দের পরই ছড়িয়ে পড়ে আগুন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিকট শব্দের পরই ছড়িয়ে পড়ে আগুন

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে আছড়ে পড়ে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি। এরপরই বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এলাকা। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা এলাকা। শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি, চিৎকার আর কান্নাকাটি। এতে ভারী হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। কলেজ গেট থেকে শুরু করে সর্বত্রই আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, এটা বুঝতেই বেশ খানিকটা সময় চলে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী জাফরিন রহমান যুগান্তরকে জানান, ৫ নম্বর ভবনে তাদের ক্লাস ছিল। বেলা ১টায় ক্লাস শেষ হলে সবাই যখন বের হচ্ছিল, ঠিক তখনই বিমানটি আছড়ে পড়ে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি করতে থাকে। দগ্ধ অনেকে বাঁচার জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে।

জাফরিন রহমান আরও বলেন, যেখানে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা ছিল। ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত ক্লাস হয় ভবনটিতে। তবে যারা কোচিং-এর ক্লাস করে, তারাই কক্ষটিতে ছিল।

সরেজমিন ভবনের সামনে দেখা যায়, আগুনের তীব্রতায় পুরো ভবনটি কালচে হয়ে গেছে। ভবনের সামনে গাছ পুড়ে গেছে, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, ক্লাসে বসেই বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ পাই। তারা পাশের চার নম্বর ভবনের শ্রেণিকক্ষে ছিলেন। দৌড়ে এসে দেখেন আগুন জ্বলছে হায়দার আলী ভবনে। তারা এক্সটিংগুইশার নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে তারা কাছে যেতে পারছিলেন না। কিছু শিক্ষার্থীর শরীর তখনো জ্বলছিল। ওই অবস্থায়ই অনেক শিক্ষার্থীকে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে আটকা পড়ে।

তিনি বলেন, হায়দার আলী ভবনের প্রধান ফটকের ভেতর বিমানের একটি অংশ ঢুকে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকের পক্ষেই বের হওয়া সম্ভব হয়নি। কেননা চারপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো ছিল। তাই নিচে যারা ছিল, তারা আর বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস আসার পর আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে এবং ছাদে মই দিয়ে উঠে ছাদ কেটে তাদের উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুল ১টার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। ছুটি হয়েছিল, কিছু শিক্ষার্থী বেরও হয়েছিল আর কিছু বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। অনেকে আবার স্যারদের কাছে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ভবনটির প্রধান ফটকে সব সময় স্কুলের স্টাফরা বসে থাকেন, সিঁড়ির নিচে স্টাফদের কক্ষ রয়েছে। বিমানটি প্রধান ফটকের গেট ভেঙে এসে কক্ষের ভেতরে ঢুকে যায়।

রিপন নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার ভাগিনা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাস শেষে তারা বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিল-এমন সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা লাকি আক্তার নামে এক নারী বলেন, আমার দুই সন্তান মাইলস্টোনে পড়ে। বড় ছেলেকে বের করতে পারলেও ছোটটিকে পাচ্ছি না। তখনো অনেককে খুঁজে পাচ্ছিলেন না অভিভাবকরা।

নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে কান্না করতে দেখা যায় আয়েশা নামের এক নারীকে। তিনি জানান, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে তার ছেলে সজিব হোসেন। ছেলের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না।

শিরিন সুলতানা এসেছেন মিরপুর থেকে। তার ছেলে সাজ্জাদ সাদি দশম শ্রেণিতে পড়ে। আইডি নম্বর ৫১৭১। শিরিন সুলতানা জানান, ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে মিরপুর থেকে ছুটে এসেছেন।

ফেরদৌসী বেগম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। মাইলস্টোন স্কুল ও মাঠে এবং প্রধান ফটকের সামনে অসংখ্য অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কান্নাকাটি করছিলেন। অনেকে তাদের বাচ্চাদের খুঁজে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম