একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক আজ
রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দলের শোক
অবশ্যই এ ঘটনার তদন্ত করব : প্রধান উপদেষ্টা * হতাহত পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের
যুগান্তর প্রতিবেদন ও বাসস
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা আহত হয়েছেন আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক জানিয়েছে। পৃথক শোকবার্তায় সংগঠনগুলোর নেতারা দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। এদিকে এ ঘটনায় আজ এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক শোকবার্তায় বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, বিমানসেনা ও শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি গভীর বেদনার ক্ষণ। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সব কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নিহতরা আমাদের সবারই সন্তান। হঠাৎ করে চিরদিনের জন্য চলে গেল। আমরা অবশ্যই এই ঘটনার তদন্ত করব। আর যারা আহত- আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। সবাই তাদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’ হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘হাসপাতালে সবাই ছুটে আসছেন। আমরা সবার কাছে অনুরোধ করছি হাসপাতালে ভিড় করবেন না। কারণ যারা আহত তাদের জন্য এটা ভালো না। তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের শক্তি নেই। আমরা ভিড় করলে, আমাদের শরীর থেকে কী রোগ তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে, এটা বলা মুশকিল। কাজেই দূরে থেকে দোয়া করেন সবাই।’ বিমান বিধ্বস্তের এ ঘটনাকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার বলার কোনো ভাষা নেই। কীভাবে শুরু করব? সেটাও বুঝতে পারছি না। আমার মতো সারা দেশের লোক আজ হতবাক। এরকম একটি কাণ্ড ঘটতে পারে। আমরা কেউ কল্পনা করিনি। কারও ধারণার মধ্যে ছিল না। কিন্তু এই অবিশ্বাস্য ঘটনা আমাদের হঠাৎ করে গ্রহণ করতে হয়েছে।’
বহু শিশুর মৃত্যুতে সারা জাতি বাকরুদ্ধ মন্তব্য করে আবেগঘন ওই ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে কচি শিশুদের ওপর পড়ল। আগুনে পুড়ে শিশুরা মারা গেল। মা-বাবাদের আমরা কী জবাব দেব? কী বলব তাদের? আমরা নিজেদের তো জবাব দিতে পারছি না। অজানা শিশুদের মুখ বারবার চোখে ভেসে উঠছে। সারা জাতি বাকরুদ্ধ ও শোকাহত বললে খুব কম বলা হবে। এই দুর্ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এখনো লাশ আসছে হাসপাতালে। এখনো হাসপাতালে মারা যাচ্ছে। মা-বাবা এখনো খোঁজ নিচ্ছেন আমার সন্তান কোথায়? তাকে আর কোনো দিন চেনা যাবে কিনা? যাদের লাশ দেখছি তার মধ্যে আমার সন্তান আছে কিনা। পৃথক করার তো কোনো উপায় নেই।’ শিশুদের স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এই ঘটনার তদন্ত করব। তদন্ত হবে, কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশুগুলো আর ফিরে আসবে না।’
বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সারা জাতি শোকে মুহ্যমান। মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এ বিমান দুর্ঘটনায় শোক জানানোর ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি। তিনি আরও বলেন, বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক-আমি এই দাবি করছি। আমি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া শিক্ষার্থীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ আগুনে দগ্ধ শিক্ষার্থী, যারা গুরুতর হয়ে হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’
এদিকে হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। হতাহত পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
শোকবার্তায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের জনশক্তি ও এলাকাবাসীকে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ এবং আহতদের চিকিৎসায় সর্বাত্মক সহায়তার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আহত সবার পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি গভীর শোক প্রকাশ করেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং নিহতদের পরিবারকে যথাযথ সহায়তা করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।’
এদিকে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী; খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার; শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক; নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ; ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন; বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন; তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ ঘটনার শভীর শোক জানিয়েছেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান ও সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন এবং খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা : এ ঘটনায় আজ একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, শোক পালনের উদ্দেশ্যে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়াও আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এদিকে আজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
