এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার সফর নিয়ে ধূম্রজাল
জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান উদযাপনে ঢাকায় লাখো জনতার সমাবেশে যোগ না দিয়ে কক্সবাজার এলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন শীর্ষ নেতা। অনেকটা গোপনে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিমানযোগে হঠাৎ তারা সৈকত শহরে উপস্থিত হন। তাদের এই আকস্মিক সফর ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
সাবেক এক বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কক্সবাজারে অবস্থানরত এনসিপি নেতাদের গোপন বৈঠক হচ্ছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এনসিপি নেতারা বিদেশিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করতে এসেছেন-এমন দাবি করে হোটেল ঘিরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ‘ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনে এনসিপি নেতারা পশ্চিমাদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চান। এজন্য গোপনে বৈঠক করতে এসেছেন। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’
কক্সবাজারে আসা নেতারা হলেন-এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এবং দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। আর জারার সঙ্গে তার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ এবং সারজিস আলমের সঙ্গে তার স্ত্রী। এনসিপি নেতারা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (ইএ-৪৩৩) ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর দ্রুত তারা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় তাদের কয়েকজনের মুখমণ্ডল মাস্কে ঢাকা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাদের কক্সবাজার আগমনের বিষয়ে আগে থেকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। বিমান অবতরণের পর তারা টার্মিনালে বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের ব্যবহৃত গেট দিয়ে বেরিয়ে যান তারা। পরে বিষয়টি নিয়ে চারদিক থেকে খোঁজখবর শুরু হয়। তাদের আগমনের এ বিষয়ে ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিপি নেতারা একটি নোহা মাইক্রোবাসে চড়ে বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করেন। বিকালের দিকে তারা ইনানী সৈকতসংলগ্ন পাঁচতারকা হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা (আগের নাম রয়েল টিউলিপ)-তে যান। তবে কেউ কেউ বলছেন বিমানবন্দর থেকেই তারা হোটেলের মাইক্রোবাসে ওঠেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, ‘এনসিপি নেতাদের কক্সবাজারে আগমনের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তারা কেন এসেছেন তা আমরা জানি না। এখানে আগমনের পর তারা কোনো ধরনের প্রটোকলও নেননি।’
এদিকে এনসিপি নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে কক্সবাজার গেছেন এমন কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ফেসবুকে কক্সবাজার সফররত এনসিপির পাঁচ নেতার ছবি দিয়ে নানা ধরনের পোস্ট করেন অনেকে। এতে পিটার হাসের ছবিও যুক্ত করা হয়।
তবে স্থানীয় কয়েকটি সূত্রের দাবি-পিটার হাস নয়, একটি উচ্চ পর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন এনসিপির নেতারা। চট্টগ্রাম থেকে বাই রোডে গাড়িতে করে বিদেশি দুজন প্রতিনিধি দল তাদের হোটেলে গিয়েছিলেন। বৈঠকের আগে তারা হোটেলের বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। পরে পেছনের বিশেষ দরজা দিয়ে বের হয়ে তারা সোজা চট্টগ্রামে চলে যান।
আরেকটি সূত্র বলছে, বৈঠকে কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে। তবে সাবেক কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত বা অন্য কারও সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন এনসিপির নেতারা। দলটির মুখ সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। তারা মূলত কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন। এর বেশি কিছু নয়।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি গুজব। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘুরতে গেছেন।’
এনসিপি নেতাদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে হোটেল সি পার্লের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘কোনো আগাম ঘোষণা বা রুম বুকিং ছাড়াই দুপুর ১২টার পর এনসিপির পাঁচ নেতা হোটেলে প্রবেশ করেন। তবে সেখানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বা অন্য কোনো বিদেশি কেউ সেখানে যাননি। হোটেলে কোনো ধরনের গোপন বৈঠকেরও সুযোগ নেই।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় কর্মরত থাকার সময় হাসিনা সরকারের গুম খুন এবং ভোট কারচুপির বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। এসব নিয়ে প্রাকাশ্যে মন্তব্য করায় তাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতনের আগেই তিনি ঢাকায় তার দায়িত্ব শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। বর্তমানে তিনি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে যুক্ত মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত।
