সংরক্ষণশীল কৃষি আবাদ
চাষাবাদে নতুন দিগন্ত
এ পদ্ধতিতে ফলন ১৫ শতাংশ বেশি হবে
বাহাউদ্দিন
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংরক্ষণশীল কৃষি আবাদ পদ্ধতিতে গম, ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ, পাট ও রবিশস্যে স্বাভাবিক চাষ পদ্ধতির চেয়ে ফলন ১৫ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া এ পদ্ধতিতে কৃষকের উৎপাদন খরচ শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ কম হয় বলেও জানান কৃষি বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টদের মতে সংরক্ষণশীল কৃষি পদ্ধতি বলতে সামগ্রিকভাবে তিনটি পদ্ধতিকে বুঝায়। স্বল্প চাষ, ফসল কর্তনের পর অবশিষ্টাংশের ব্যবস্থাপনা ও লাভজনক শস্য বিন্যাসে ফসল উৎপাদন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে কৃষি কাজ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে প্রয়োজন কৃষি কাজের ধরনের পরিবর্তন ও সচেতনতা বৃদ্ধি। এ জন্য উন্নত দেশগুলোতে (অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ব্রাজিল) সংরক্ষণশীল কৃষি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ওয়াইস কাবির বলেন, এটি মূলত একটি আধুনিক চাষাবাদের পদ্ধতি যার মাধ্যমে স্বল্প চাষে পূর্ববর্তী ফসলের কিছু অবশিষ্টাংশ রেখে কম সময়ে ও কম খরচে লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদন করা হয়। সংরক্ষণশীল কৃষি আবাদ পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আসলে এটি যান্ত্রিক উপায়ে ফসল উৎপাদনের একটি অংশ, জমিতে পূর্ববর্তী ফসলের ৮-১০ ইঞ্চি নাড়া রেখে সিডার মেশিনের সাহায্যে একই সঙ্গে সরু লাইনে জমি চাষ ও বীজ বপন করা যায়। আলাদা করে চাষ দিয়ে জমি তৈরির প্রয়োজন হয় না। তবে এটি নিয়ে আরও বেশি পরিমাণে গবেষণা করা দরকার। কারণ এটি একটি লাভজনক আধুনিক কৃষি পদ্ধতি।
কৃষকরা কীভাবে এ পদ্ধতিতে চাষ করবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বারি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, পূর্ববর্তী ফসল সংগ্রহের পর জমিতে ৩০ শতাংশ নাড়া বা ফসলের উচ্ছিষ্টাংশ রেখে দিয়ে সে নাড়াসহ জমিতে সিডার মেশিনে স্বল্পচাষ দিয়ে, বীজ বপন, মই দেয়া একসঙ্গে হবে। জমিতে ফসল লাগানোর আগে যদি আগাছা থাকে তাহলে স্প্রেয়ার মেশিনের সাহায্যে নিরাপদভাবে আগাছানাশক ব্যবহার করে আগাছা দমন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিডার চালক, প্রযুক্তিবিদ, সম্প্রসারণ কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত মেশিনে এক হেক্টর জমিতে এ পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ১১৯ লিটার ডিজেল লাগে অন্যদিকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে লাগে প্রায় ২১৩ লিটার ডিজেল। এতে দেখা গেছে এ পদ্ধতিতে এক বছরে ৯৩ লিটার ডিজেল ফুয়েল সাশ্রয় করা সম্ভব। জানা যায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট দেশে বহুল প্রচলিত পাওয়ার টিলারকে কাজে লাগিয়ে এ মেশিনের উপযোগী করে স্ট্রিপ টিল, জিরো টিল সিডার উদ্ভাবন করেছে এবং দুই তিনটি মেশিনারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা শুরু করেছে। এ মেশিন ব্যবহারে একই সঙ্গে জমি তৈরি, বীজ বপন ও সার প্রয়োগ করা যায়। যে কোনো টিলার চালক হালকা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেশিনের ব্যবহার আয়ত্ত করতে পারে। রাজশাহী, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কী কী সুবিধা আছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিনা) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হোসেন আলী বলেন, কম চাষ জমির রস সংরক্ষণ করে, যা বীজ গজানো এবং গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বীজ কম লাগে, মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে, ফলন বৃদ্ধি পায়। অধিক চাষে তেল জ্বালানি বেশি লাগে, চাষ খরচ বেশি ও সময়ের অপচয় হয়। কিন্তু কম চাষে খরচ কম হয়, সময়ের অপচয়ও কম হয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী ফসল কর্তন ও পরবর্তী ফসলের বীজ বপনের মধ্যবর্তী সময় কমে আসে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংরক্ষণশীল কৃষি আবাদ পদ্ধতির দিকে সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত। কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর এ বিষয়ে বেশি পরিমাণে গবেষণা এবং কৃষক পর্যায়ে পুরোপুরি ছড়িয়ে দিতে কাজ করা উচিত।
