অনুমোদন পাচ্ছে শতবর্ষের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা
ব্লু-ইকোনমিতে বিশেষ গুরুত্ব
জাতীয় পর্যায়ে নতুন সংস্থা গঠনের প্রস্তাব * এনইসিতে উপস্থাপন ৪ সেপ্টেম্বর
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ফটো
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শত বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি। অর্থাৎ সমুদ্রনির্ভর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এই পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্লু ইকোনমি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলার প্রেক্ষাপটে তৈরি পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক উপস্থাপন করা হবে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ শিরোনামে এই মহাপরিকল্পনাটি। ‘অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশজ মহাপরিকল্পনা’ স্লোগানকে সামনে রেখে পরিকল্পনা তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
এতে বলা হয়েছে, ব্লু-ইকোনমি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। এক্ষেত্রে নৌ-পরিবহন, উপকূলে জাহাজ চলাচল, সমুদ্র বন্দর, জাহাজ নির্মাণ ও পুনর্ব্যবহার, সামুদ্রিক মৎস্য, লবণাক্ততা, উপকূলীয় পর্যটন, জোয়ার-ভাটা হতে শক্তি, ভূমি পুনরুদ্ধার, সামুদ্রিক সম্পদ জরিপ ও নজরদারি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গভর্ন্যান্সকে অগ্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত সব খাতে পড়লেও বিশেষভাবে যেসব খাতে পড়বে সেগুলোকে আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমুদ্র। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে, উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে। সবকিছু মিলিয়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে জীববৈচিত্র্যের ওপর।
এজন্য সমুদ্রকে কাজে লাগানোর যত সম্ভাবনা আছে তার সব কিছুই তুলে ধরা হয়েছে পরিকল্পনায়। তিনি জানান, পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাটি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রশাসন সম্পর্কে একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার প্রচষ্টা রয়েছে।
সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপর করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে এই পরিকল্পনায়।
পরিকল্পনায় সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যে পাঁচ ধরনের কৌশল নেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সামুদ্রিক সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করা, উপকূলীয় জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সমুদ্র বন্দরসমূহের আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কার্যক্রম জোরদারকরণ, সমুদ্রে ইকোট্যুরিজম এবং নৌ-বিহার কার্যক্রম চালু করা, সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্র বন্দরগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা।
এসব কৌশল বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে পরিকল্পনায়। এগুলো হচ্ছে, সমুদ্রে জরিপ, টেকসইভাবে আহরণ, সমুদ্র নিরাপত্তা, সমুদ্রবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণাসহ বিভিন্ন বিষয়কে সমন্বিত করে প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে একটি নতুন সংস্থা বা অধিদফতর স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে সমুদ্র সীমার নিরাপত্তা বা পাহারা জোরদারকরণ এবং কেবলমাত্র মৎস্য সম্পদ আহরণই নয়, পাশাপাশি সমুদ্র হতে অন্যান্য সম্পদ আহরণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের পানি সম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। এটি তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দেশটি। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছরে পরিকল্পনাটির অনুমোদন পাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। নেদারল্যান্ডসের বাইরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় করা হয়েছে।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২০১৭ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগ সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র এবং খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯টি প্রকল্পের আওতায় ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।
হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৬টি প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮ প্রকল্পের অনুকূলে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। নদী এবং মোহনা অঞ্চলে ৭টি প্রকল্পের অনুকূলে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
