|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে ফেসবুকসহ সোশ্যাল প্ল্যাটফরম বন্ধ থাকায় টক অব দ্য কান্ট্রি ওয়ার্ডে রূপ নিয়েছে ‘ভিপিএন’। মোটা দাগে ভিপিএনকে ক্ষতিকর বলা হলেও বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৩১ শতাংশই এটি ব্যবহার করেন। এটি ব্যবহারে কি ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবহারকারী? নাকি ক্ষতির বিষয়টি শুধুই কথিত। আসলেই কি ঝুঁকি বা হুমকি রয়েছে ভিপিএনে? সেসব নিয়ে আজকের আয়োজনে বিস্তারিত লিখেছেন-ইমদাদুল হক
ভিপিএন কী?
ভিপিএনের পূর্ণরূপ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল ‘টানেল’র মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে এক বা একাধিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এটি। স্থানীয় আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে ফেলে এটি। ফলে মনে হয় অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ব্যবহারকারীরা। মূলত অপ্রবেশযোগ্য নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে পছন্দমতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের জন্যই দেশে দেশে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বলা যায় ভার্চুয়ালি নিজের পরিচয় লুকানোর নেটওয়ার্ক অবকাঠামো এটি।
যেসব দেশে বেশি ব্যবহৃত হয়
বিশ্বের মধ্যে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়। স্ট্রিমিং, গোপনীয়তা, গেমিং, ভ্রমণ, নিষিদ্ধ সাইট ও কন্টেন্ট দেখতে ভিপিএন ব্যবহার করা হয়। মূলত, ইন্টারনেট সেন্সরশিপের কারণেই দেশে দেশে ব্যাপক হারে বাড়ছে ভিপিএনের ব্যবহার। মূলত ব্যক্তিগত সুরক্ষা বাড়াতে এবং নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সীমাবদ্ধ বিভিন্ন স্ট্রিমিং সার্ভিস ও কন্টেন্টের অ্যাক্সেস পেতে ব্যবহারকারীরা ভিপিএন বেশি ব্যবহার করছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে ব্যাপক ইন্টারনেট সেন্সরশিপের কারণে এখন শীর্ষ ১০টি ভিপিএন ব্যবহারকারীর দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চীন। কড়া নজরদারি এড়াতে এর পরের অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। অনলাইন গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিবেশী ভারত ভিপিএন ব্যবহারে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর পরের ধাপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ইরান, তুরস্ক ও ফ্রান্স।
ভিপিএন ক্ষতিকর?
একবাক্যে ভিপিএন ক্ষতিকর কিংবা হুমকি বলা ঠিক নয়। তবে ভিপিএন ব্যবহারে ডেটা এনক্রিপ্ট ও ডিক্রিপ্ট হতে সময় লাগায় ইন্টারনেটের ধীরগতি হতে পারে। আবার কিছু ভিপিএন সেবা প্রদানকারী ব্যবহারকারীর ডেটা লগ করে রাখে, যা গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কোনটি আবার তথ্য চুরি রোধ করতে না পারায় ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে পারে না। আর যেসব সেবা প্রদানকারী ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহারকারীর ডিভাইসে অতিরিক্ত অনুমতি চায়, যা ডিভাইসের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে। তা ছাড়াও বাংলাদেশে না হলেও কিছু দেশে ভিপিএন ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ, যা আইনি সমস্যার কারণ হতে পারে।
ভিপিএনেও আছে সুরক্ষা!
সর্বোপরি ভিপিএন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রযুক্তিতে দক্ষ হলে ব্যবহারকারীর জন্য ক্ষতির কিছু নেই। আর সে কারণেই হয়তো আইটি পেশাদারদের এ নেটওয়ার্কটি বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়। তারা সাধারণত নেটওয়ার্ক বাধা ডিঙাতে, বাসা থেকে অফিসের নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে, জনবহুল ওপেন নেটওয়ার্কে যেমন হোটেল, বিমানবন্দরের মতো উন্মুক্ত ওয়াইফাই জোনে সুরক্ষিত থাকতেও ভিপিএন ব্যবহার করেন। এছাড়া সার্চ ইঞ্জিন যেহেতু একেক দেশের জন্য একেক রকম ফলাফল দেয় তাই নিরপেক্ষ ফল পেতে এসইও করার সময়ও ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।
ভিপিএন ব্যবহারে সতর্কতা
ভিপিএন (VPN) ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অনুসরণ করার কথা বলছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। যাতে আপনি নিরাপদে এবং সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
* বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন : শুধু বিশ্বাসযোগ্য এবং সুপরিচিত ভিপিএন প্রদানকারী ব্যবহার করুন। ফ্রি ভিপিএন সেবাগুলো অনেক সময় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
* গোপনীয়তা নীতি : ভিপিএন প্রদানকারী কীভাবে আপনার ডেটা সংগ্রহ এবং ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করুন। গোপনীয়তা নীতিটি ভালোভাবে পড়ুন।
* প্রসেসিং ক্ষমতা ও স্পিড : ভিপিএন ব্যবহার করলে ইন্টারনেট স্পিড কিছুটা কমে যেতে পারে। তাই উচ্চ গতি এবং প্রসেসিং ক্ষমতাসহ ভিপিএন নির্বাচন করুন।
* মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) : যদি সম্ভব হয়, ভিপিএন অ্যাকাউন্টে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করুন যাতে অ্যাকাউন্ট নিরাপদ থাকে।
* ফিশিং এবং ম্যালওয়্যার সতর্কতা : ভিপিএন ব্যবহার করলেও ফিশিং এবং ম্যালওয়্যার আক্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন। সবসময় সুরক্ষিত ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করুন এবং অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
