আইক্যান ৮১ ইস্তাম্বুল
আলোচনায় গ্লোবাল ইন্টারনেট গভর্নেন্সের ভবিষ্যৎ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইক্যান’র ৮১তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ইস্তাম্বুলে ৬ দিনব্যাপী আয়োজনে চলে বৈশ্বিক ইন্টারনেট গভর্নেন্স নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আলোচনা হয় স্থিতিশীল, সুরক্ষিত এবং একীভূত ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিতে আইক্যানের ভূমিকা নিয়ে। তুরস্কের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কর্তৃপক্ষ (বিটিকে)-এর পরিচালনায় শনিবার ৯ নভেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হয়ে এ আয়োজন শেষ হয় ১৪ নভেম্বর ২০২৪। এবারের আয়োজনে বিশ্বের ১৪১টি দেশের ইন্টারনেট পলিসিমেকার, নীতিনির্ধারক, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ীসহ প্রায় ২ হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় ইস্তাম্বুলের কংগ্রেস সেন্টার।
আয়োজনে পরবর্তী ধাপের ‘টপ লেভেল ডোমেইন’ অনুমোদন নিয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় ইন্টারনেটে আঞ্চলিক ভাষায় ডোমেইন ও ইমেইল ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেয় আইক্যান বোর্ড। দ্রুতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইক্যানের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ‘আপ্লিকেন্ট সাপোর্ট’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনুদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। শিগগিরই অনুদানের আবেদন জমা নেওয়ার কথাও জানানো হয় আইক্যানের পক্ষ থেকে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষাভাষীদের জন্য ইউনিভার্সাল একসেপ্ট্যান্স রেডিনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডোমেইন এবং ইমেইল আড্রেস সহজে ব্যবহারের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বিভিন্ন সেশনে আলোচনা হয়।
‘ডোমেইন ডিএনস এবিউজ’ সেশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়। যেখানে নিরাপদ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডোমেইনের নিরাপত্তার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়াও ৬ দিনের এ আয়োজনে ১৭৭টি পাবলিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে আইক্যানের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে গভর্নমেন্ট অ্যাডভাইজরি কমিটি ‘জিএসি’, ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত ‘জিএনএসও’ সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ‘অ্যাট লার্জ’ কমিউনিটির অংশগ্রহণ ছিল।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে আইক্যানের বৈশ্বিক এ সম্মেলনে যোগ দেয় একটি প্রতিনিধিদল। যেখানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিজি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান, ডোমেইন ব্যবসায়ীদের মধ্যে, ইওয়াই হোস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হোসেন, পার্পেল আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ আহমেদ, কোড ফর হোস্টের পক্ষ থেকে মো. মাসুম, অপ্টিমাস টেক-এর সিটিও জুনাইদ মিয়াজী, সফট রেশিওর সিইও কামরুল হাসান ও আমেরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির নেটওয়ার্ক প্রকোশলী সামিউল সুমন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে আইক্যানের বিজনেস কন্সটিটিউয়েন্সির সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন থেকে আইক্যানের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে আসছি। এর মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্টারনেটে বাংলাদেশের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছি। এ ধরনের প্রোগ্রামে বাংলাদেশের সরকার, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য অংশীজনদের উপস্থিতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বেসিস ও বিটিআরসির সহযোগিতায় প্রোগ্রাম আয়োজন করে যাচ্ছি। শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধি নয় সেই সঙ্গে বৈশ্বিক ইন্টারনেটের নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও বাংলাদেশের অবস্থান তৈরি করতে চাই।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রযুক্তি ব্যবসায়ী বিশেষত ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের জন্য আইক্যান একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও আইক্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা খুব জরুরি বলে মত দেন তিনি। তিনি বলেন, অন্যথায় আমরা পিছিয়ে যাব। তাই আমাদের আইক্যানে উপস্থিতি আরও বাড়াতে হবে। এ ধরনের আয়োজনে যোগদানের ফলে বিভিন্ন দেশের রেগুলেটরি অথরিটির সঙ্গে একটা নেটওয়ার্কিং গড়ে ওঠে, যা থেকে নতুন অনেক ব্যাপার জানা যায় এবং অন্যদেরকেও জানানো যায়।’
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এবারের আয়োজন এবং বাংলাদেশের ইন্টারনেট কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন আইক্যান এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিরুন গুপ্তা। তিনি বলেন, ‘আইক্যান ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান ইন্টারনেট’ এই মটোতে বিশ্বাস করে। আমরা কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য নয় বরং পুরো বিশ্বকে নিরাপদ ইন্টারনেটের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। যেহেতু আমি এশিয়া প্যাসিফিকের প্রতিনিধিত্ব করি, আমি চাই আইক্যানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পাবে। তারা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে এ ধরনের মিটিংয়ে আলোচনা করলে তবেই সমস্যাগুলো সমাধান সহজ হবে। আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি, ভবিষ্যতে আরও করব।’
আইক্যান বোর্ড অব ডিরেকটরস-এর সদস্য সাজিদ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বড় সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে-যাদের আরও বেশি সচতন হতে হবে। আমরা কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশে আইক্যান আউটরিচ প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমি বোর্ডের অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে আউটরিচগুলো আরও বাড়ানো যায়।’
আইক্যানের ৮১তম এ আয়োজনের শেষ দিনে বিভিন্ন কমিউনিটিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্টারনেটের অগ্রদূত প্রয়াত ড. তারেক কামেলের নামে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এটি আইক্যান কমিউনিটির জন্য বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার হিসাবে বিবেচিত হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে ১৯৯৮ সালে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় আইক্যান।

