Logo
Logo
×

আইটি বিশ্ব

ক্রিপ্টো নীতিমালা : বিশ্ব ও বাংলাদেশ

Icon

আজিম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি সেই পরিবর্তনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ দুটি ধারণা কেবল আর্থিক খাত নয়, বরং বৈশ্বিক প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা খাতে এক নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ইতিহাস : ক্রিপ্টোকারেন্সি শব্দটি এসেছে ‘ক্রিপ্টোগ্রাফি’ থেকে, যার মাধ্যমে নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করা হয়। ২০০৮ সালে একজন রহস্যময় ব্যক্তি বা গ্রুপ, যিনি বা যারা সাতোশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) ছদ্মনামে পরিচিত, সর্বপ্রথম বিটকয়েন নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু করেন। বিটকয়েনের মূল লক্ষ্য ছিল, একটি বিকেন্দ্রীকৃত মুদ্রা তৈরি করা, যা কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা তৃতীয় কোনো পক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই পরিচালিত হবে। ২০০৯ সালে বিটকয়েন ব্লকচেইন চালু হয়, এটি এমন প্রযুক্তি যা লেনদেনের তথ্যকে ব্লক আকারে সংরক্ষণ করে। প্রতিটি ব্লক ক্রমানুসারে চেইনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং একবার তথ্য এই চেইনে যুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। এটি লেনদেনকে নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং কার্যকর করে তোলে । প্রথমদিকে এটি শুধু অনলাইন গেমার এবং প্রযুক্তি আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে এটি প্রযুক্তিপ্রেমী এবং আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়।

বর্তমান অবস্থা : এ খাতে বিটকয়েন পাইওনিয়ার হলেও ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি হয়েছে। যেমন ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, বিন্যান্স কয়েন, কার্ডানো, সোলানা, এক্সআরপি, টন কয়েন ইত্যাদি। প্রতিটি কয়েনের সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে, কেউ চাইলেই এর চেয়ে বেশি কয়েন মার্কেটে ছাড়তে পারবে না। এগুলো শুধু ডিজিটাল মুদ্রা হিসাবেই নয় বরং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করে। বিশ্বব্যাপী অনেক বড় প্রতিষ্ঠান এবং সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মতো দেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইনের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। তবে এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং সঠিক নীতিমালার প্রয়োগ।

বিটকয়েন ও বাংলাদেশ : বিটকয়েন আগের সব রেকর্ড ভেঙে গত মাসেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যে উঠে যা ১ লাখ ৮ হাজার ২৬৮ ডলার! অথচ ২০১০ সালে প্রতিটি বিটকয়েনের মূল্য ছিল এক ডলারেরও কম। বিটকয়েনের এই অতি মূল্যের কারণে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বাংলদেশের কোনো নীতিমালা না থাকায় কিছু সুবিধাভোগী দেশের সাধারণ মানুষকে সহজে ফাঁদে ফেলছে। আর এটি দেশে অবৈধ হওয়ায় সাধারণ মানুষ না বুঝে বিনিয়োগ করে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০২১ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে বিরত থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা ইস্যু করা নয় বলে তখন উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে ২০২১ সাল থেকে সরকারি সহায়তায় ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়ে আসছে। যেহেতু ক্রিপ্টো ওয়ালেট ছাড়া ব্লকচেইন কোনো ব্যবহার নেই। বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুমোদনের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট অনেকেই। এছাড়া সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্যাক্স একটি ভালো আয়ের উৎস হিসাবে বিবেচনা করতে পারে। অনেক দেশই ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশে আইনি বৈধতা নেই বলে সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছো।

সীমাবদ্ধতা : বিটকয়েনও অসীম সংখ্যক নয়। এর রয়েছে নির্দিষ্ট সীমা। জানা গেছে, সর্বোচ্চ ২ কোটি ১০ লাখ সংখ্যক কয়েন সৃষ্টি করা যাবে যা আগেই নির্ধারিত এবং ২১৪০ সালের মধ্যে সব বিটকয়েন বাজারে চলে আসবে। সাধারণত মাইনিং করে নতুন বিটকয়েন তৈরি করা হয়। সবচেয়ে বেশি বিটকয়েন মাইনিং করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে যা মোট বিটকয়েনের প্রায় ৪০ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে চীন, রাশিয়া ও কাজাখস্তান।

ব্লকচেইন অ্যানালিটিকস কোম্পানি : চেনালাইসিসের সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫১টি দেশে ডিজিটাল মুদ্রা হিসাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহৃত হচ্ছে। চেনালাইসিসের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫ নম্বরে আর শীর্ষে আছে ভারত ও নাইজেরিয়া।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম