নানা বিতর্কে স্থগিত ইক্যাব নির্বাচন
সাইফ আহমাদ
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্থগিত হলো দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর ২০২৫-২৭ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। ১৪ মে ই-ক্যাব নির্বাচন বোর্ড এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, চলতি বছরের ৩ মার্চ ঘোষিত নির্বাচনি তফশিল অনুযায়ী নির্বাচন অনিবার্য কারণবশত নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ই-ক্যাব নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান তরফদার সোহেল রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩ মার্চ ঘোষিত নির্বাচনি তফশিলের সার্বিক কার্যক্রম অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছেন বোর্ডের সদস্য ড. শাহাদাত হোসেন ও মো. জিয়াউল হক, যারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ই-ক্যাব নির্বাচনকে ঘিরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন, প্রার্থীদের মধ্যকার বিভাজন, ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি, সদস্যপদ বৈধতা ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন উঠে। একাধিক প্রার্থী ও সদস্য অভিযোগ করেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয় এবং নির্দিষ্ট পক্ষকে সুবিধা দিতে নানা অনিয়ম হচ্ছে।
নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়। অভিযোগ উঠে বিতর্কিত ও রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী ই-ক্যাবকে ব্যবহার করতে চাইছে পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে। এক সময়ের ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা এবার ঘুরপথে ই-ক্যাবের নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, অযোগ্য সদস্যপদ পাওয়া এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ। বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিচয় ব্যবহার যারা নেতৃত্বে এসেছিলেন এবার তারা বিএনপি সংশ্লিষ্ট পরিচয়ের প্রার্থী দিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে বলছেন, ‘বিএনপি ব্যানারে আওয়ামী পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া’ চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক পরিচালক বলেন, ‘আগে তারা নিজেদের আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে সব সুবিধা নিয়েছে। এখন বিএনপি পরিবারের সদস্যকে দিয়ে আবার নতুন করে সদস্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এটা আসলে পুরোনো গোষ্ঠীর কৌশলী প্রত্যাবর্তন।’ ই-ক্যাবের অনেক সদস্যই আওয়ামী ‘ক্লোন’ বা ‘রিব্র্যান্ডেড’ বলে আখ্যায়িত করছেন। তারা মনে করছেন, আগের নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও বিতর্ক ঢাকা দিতে নতুন মুখ ব্যবহার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইক্যাবের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলেন, ‘আমরা নতুন ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব চেয়েছিলাম। কিন্তু আবারও সেই পুরোনো ক্ষমতাকামী গোষ্ঠীকে সামনে আনছে।’ নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এক পক্ষ স্বস্তি প্রকাশ করলেও অন্য পক্ষ এটিকে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা হিসাবে দেখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, ‘যারা অনিয়ম করে নির্বাচন করতে চেয়েছে, তাদের জন্যই আজ নির্বাচন বন্ধ হয়ে গেল। তবে সংগঠনের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়া জরুরি।’
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী টিম ইউনাইটেডের জান্নাতুল হক শাপলা যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন স্থগিত হওয়াটা সদস্য, ভোটার ও প্রার্থী সবার জন্য হতাশাজনক। অনেক দিন থেকে প্রশাসক থাকার কারণে পলিসি ম্যাকিং নিয়ে সঠিকভাবে হচ্ছে না এবং উদ্যোক্তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। সংগঠনও পিছিয়ে যাচ্ছে। একটা উৎসবমুখর নির্বাচনের মাধ্যমে যখনই এ সমস্যারগুলোর সমাধান হতে চলেছে তখন একটা মহলের লবিংয়ে নির্বাচন স্থগিতের আদেশ আসলো। এভাবে চলতে থাকলে গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হবে এবং সংগঠন হিসাবে ইক্যাব মারাÍভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই এই স্থগিতাদেশ অবিলম্বে তুলে নেওয়া হোক এবং যথাসময়ে নির্বাচন হোক।
আরেকজন প্রার্থী জিয়া আশারাফ বলেন, এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত হলেও, আমি আয়োজক কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আপনাদের সমর্থন ও বোঝাপড়ার জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আমাদের সম্প্রদায়ের সেবা এবং ই-ক্যাবের অগ্রগতির জন্য পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন যখনই অনুষ্ঠিত হবে, আমি তাতে অংশ নেব, কারণ আমি বিশ্বাস করি, নেতৃত্ব ছাড়া কোনো বাণিজ্য সংগঠন কার্যকরভাবে এগিয়ে যেতে পারে না। এই সময়ে, আমি আপনাদের সঙ্গে মূল্যবান আলোচনা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে উন্মুখ।
ইক্যাবের প্রশাসক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল সেলির উপসচিব মো. সাঈদ আলী যুগান্তরকে বলেন, কয়েকজন সদস্যের যৌক্তিক অনুরোধের কারণে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আপাতত নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই পুনরায় তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের তারিখ জানানো হবে।
