Logo
Logo
×

আইটি বিশ্ব

বিমানে দুর্ঘটনা

নিরাপত্তায় তথ্যপ্রযুক্তি

Icon

মো. জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আকাশপথকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণমাধ্যম হিসাবে ধরা হলেও মাঝেমধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়-এ প্রযুক্তিনির্ভর যাত্রাও সর্বদা ঝুঁকিমুক্ত নয়। আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে বিমান এখন হাজারো যন্ত্রাংশ, সেন্সর, সফটওয়্যার ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। তবে একটি ছোট ভুল কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটিও হতে পারে বিপর্যয়ের কারণ। প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে এক লাখেরও বেশি বিমান আকাশে ওড়ে। প্রতিটি বিমানের উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত চলে নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ককপিটে থাকা পাইলট ও সহ-পাইলট নির্ধারিত তরঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মূলত অতি উচ্চ কম্পাঙ্ক (ভিএইচপি) ও উচ্চ কম্পাঙ্ক (এইচপি) রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করেই বিমান ও ভূমির মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়। ভিএইচপি তরঙ্গ সাধারণত ২০০-২৫০ কিমি পরিসরে কার্যকর এবং রানওয়ের কাছাকাছি ব্যবহৃত হয়। বিপরীতে এইচপি রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার হয় দীর্ঘ দূরত্ব বা সমুদ্রপথে, যেখানে ভিএইচপি পৌঁছায় না। এসব রেডিও যোগাযোগের পাশাপাশি বিমানজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শত শত সেন্সর বিমানের গতি, উচ্চতা, তাপমাত্রা ও চাপের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমে পাঠাতে থাকে।

বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে অপরিহার্য একটি যন্ত্র হলো ‘ব্ল্যাক বক্স’ বা ফ্লাইট রেকর্ডার। এটি মূলত দুটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত-ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর) এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)। প্রথমটি বিমানের প্রযুক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে, আর দ্বিতীয়টি পাইলটদের কথোপকথন, ককপিটের শব্দ বা বোতামচাপার মতো তথ্য ধরে রাখে। এটি কমলা রঙের, অগ্নি ও পানি সহনশীল এবং উচ্চচাপে টিকে থাকতে সক্ষম।

তবুও বিমান দুর্ঘটনার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে মানবিক ভুল, যেমন ভুল সময়ে অবতরণ, দিকনির্দেশনার বিভ্রাট বা পরিস্থিতি মূল্যায়নে ব্যর্থতা। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনে থাকে পাইলট বা নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের ভুল সিদ্ধান্ত।

এছাড়া, খারাপ আবহাওয়া-যেমন ঘন কুয়াশা, বজ্রপাত, তীব্র ঝড় অথবা তুষারপাতও ঝুঁকি বাড়ায়। বার্ড স্ট্রাইক, অর্থাৎ পাখির সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষও একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় বিমান ভূমির কাছাকাছি থাকায় এ ধরনের ঝুঁকি বেশি থাকে। পাখির শরীর ইঞ্জিনে প্রবেশ করলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে, এমনকি আগুন ধরার ঘটনাও ঘটেছে।

বিমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা, সফটওয়্যারের গ্লিচ (ত্রুটি) চিহ্নিতকরণ, উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রযুক্তি এবং পাইলট-কর্মীদের প্রশিক্ষণ। একইসঙ্গে যাত্রীদের সচেতনতা বাড়ানো এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।

সবশেষে, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও মানবিক সক্ষমতার সমন্বয়ই পারে বিমান চলাচলকে আরও নিরাপদ করতে। কারণ আকাশে ভরসা কেবল ইঞ্জিন নয়-সিস্টেম, সিগন্যাল এবং মানুষ এই ত্রিপাক্ষিক দক্ষতার উপর।

লেখক : নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম