Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অধ্যাদেশ সংশোধন হচ্ছে

চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর অপসারণ নয়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর অপসারণ নয়

চাকরি থেকে অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান যুক্ত করে সংশোধন হচ্ছে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫। এতে সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ রাখা হচ্ছে। তিন সদস্যের কমিটি অভিযোগ তদন্ত করবে। এছাড়া বিদ্যমান কিছু ধারায় ভাষাগত পরিবর্তন ও নতুন বিষয় সংযোজন করা হচ্ছে। আন্দোলনরত কর্মচারী সংগঠনগুলোর নেতারা এতে সম্মত হয়েছেন। ১৯৭৯ সালে সরকারি চাকরির (বিশেষ বিধান) যেসব ধারা নতুন অধ্যাদেশে ঢুকেছে সেগুলোর ভাষাগত পরিবর্তনের বিষয়ে একমত উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতারা। সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতাদের মধ্যে ২৫ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। উল্লিখিত বিষয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবে কমিটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যমান অধ্যাদেশে উল্লিখিত অপরাধের জন্য তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যেমন-নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত। প্রস্তাবিত নতুন সংশোধনীতে চাকরি থেকে অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান যুক্ত হচ্ছে। গণকর্মচারী (অবসর) আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেই এ বিধান কার্যকর হবে। তবে সরকার বাধ্যতামূলক অবসরের বয়স পরিবর্তন করলে সেক্ষেত্রে ২৫ বছরের সময়সীমা পরিবর্তন হবে।

উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা- কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো. নজরুল ইসালাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে বিদ্যমান অধ্যাদেশে চাকরি থেকে অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসরের বিষয় যোগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগ গঠন ও তদন্ত শেষ হবে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করবে। প্রয়োজনে কমিটিতে একজন মহিলা সদস্য রাখা হবে। কর্তৃপক্ষের দেওয়া শাস্তির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ থাকবে।

২৫ মে জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের ৩৭ দফা(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো কর্মচারী এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয় যা অনানুগত্যের শামিল, যা অন্য কোনো কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে, শৃঙ্খলা বিঘ্ন করে এবং কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, তবে এটা গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।’ নজরুল ইসলাম জানান, এই ধারা ঠিক রেখে শব্দগুলো পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন শব্দগুলো হবে-‘যদি কোনো কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করে, আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশনা অমান্য করে, সরকারি আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করে এবং এসব কাজে সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করে’ এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।

অধ্যাদেশের ৩৭ (খ) উপ-ধারায় বলা হয়েছে-‘যদি কোনো কর্মচারী অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হয়, তবে এটা গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।’ মহাসচিব বলেন, এই ধারাটি ঠিক রেখে এতে ভাষাগত পরিবর্তন করা হবে। (খ) উপধারায় ‘উল্লিখিত কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্য ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়া অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকনে শব্দগুলো বসবে।’

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের ৩৭ দফা(গ) বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো কর্মচারী অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তাহার কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকিতে বা বিরত থাকিতে বা তাহার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন, তবে এটা গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।’ নজরুল ইসলাম জানান, ধারাটি ঠিক রেখে তদস্থলে ‘যে কোনো কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।’

জানা গেছে, বিদ্যমান অধ্যাদেশ এ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল না। তদন্তের ব্যবস্থা ছিল না। উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো কর্মচারী উল্লিখিত অপরাধ করলে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ৩ দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত কর্মচারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। কোনো কর্মজীবী মহিলা যদি অপরাধ করেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি অভিযোগ তদন্ত করবে। কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন মহিলা সদস্য থাকবেন। ফলে মহিলা কর্মজীবীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

জানা গেছে, ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগ গঠন করা হবে, ১৪ দিনের মধ্যে শুনানি সম্পন্ন হবে। আগে ৭ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করার বিধান ছিল। ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলের সুযোগ আগের মতো বহাল থাকবে। তবে আরোপিত দণ্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা যাবে। রাষ্ট্রপতির কাছে শাস্তি মাপের আবেদন করা যাবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম