Logo
Logo
×

যুগান্তরের বিশেষ আয়োজন

বিতরণ ও আদায় বাড়ছে

কৃষিঋণে স্থবিরতা কাটছে

বিশেষায়িত ব্যাংক ও এনজিওর ঋণ আদায় চ্যালেঞ্জিং * তারল্য সংকট কমায় ঋণ বিতরণ বাড়ছে * বকেয়া ঋণ কমেছে ৯৭ কোটি টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষিঋণে স্থবিরতা কাটছে

কৃষি

গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর সৃষ্ট অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট হ্রাসে ব্যাংক খাতে কৃষিঋণ পরিস্থিতিতে স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে। সার্বিকভাবে ঋণ বিতরণ ও আদায় বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি বকেয়া ঋণ কমতে শুরু করেছে। বাড়ছে ঋণের স্থিতিও। গত সেপ্টেম্বর থেকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়তে শুরু করেছে। এ খাতে গত বছরের আগস্ট থেকে ঋণ বাড়তে শুরু করে। ফলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ-এ নয় মাসে সার্বিকভাবে কৃষিঋণ বিতরণ কমলেও ঋণ আদায় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি খাতে ঋণ কমেছে। তবে ঋণ আদায় বেড়েছে। কৃষি খাতের পুনরুদ্ধার দ্রুত হওয়ায় সামগ্রিক ইতিবাচক গতির প্রতিফলন ঘটেছে। তবে ঋণ বিতরণ ও আদায়ে মাসওয়ারি হিসাবে সামান্য ওঠানামা চলমান রয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ঋণ আদায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বকেয়া ঋণের পরিমাণ সামান্য কমেছে। মূলত কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় সহজ করায় গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বেড়েছে। খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কম সুদের বিশেষ তহবিল গঠনসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তায় ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখার জন্য ফসল, পশুপালন, হাঁস-মুরগি এবং মৎস্য ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ নয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। আলোচ্য সময়ে ঋণ বিতরণ কমেছে ১ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাংকে তারল্য সংকটে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কৃষিঋণ বিতরণ কমতে থাকে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কৃষিঋণ বিতরণ বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও কোনো সুফল মেলেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কৃষিঋণ বিতরণ কমে যায়। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে তা বাড়তে থাকে। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

গত অর্থবছরের জুলাইয়ে কৃষিঋণ ১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। চলতি অর্থবছরের একই মাসে তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরের আগস্টে ঋণ বিতরণ করা হয় ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই মাসে ঋণ বিতরণ কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় তা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর থেকে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের নভেম্বরে ঋণ বিতরণ করা হয় ৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা হয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সামান্য বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে বেশি মাত্রায় বেড়েছে। সামান্য কমেছে মার্চে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কৃষি খাতে ঋণ আদায় বাড়তে শুরু করে। চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে এ খাতে ঋণ আদায় বাড়তে শুরু করে। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিঋণ আদায় বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ আদায় হয়েছিল ২৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। যা ছিল আগের মাসের চেয়ে কম। তবে আগস্ট থেকে ঋণ আদায় বাড়তে থাকে। যা ছিল চলতি অর্থবছরের আগের মাসের তুলনায় ও গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় বেশি। গত অর্থবছরের আগস্টে ঋণ আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই মাসে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় বাড়লেও জানুয়ারি থেকে তা কমতে থাকে। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেশি ছিল। জানুয়ারিতে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা এবং মার্চে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

কৃষি খাতে ঋণ আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বকেয়া ঋণের স্থিতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে ব্যাংকগুলোতে বকেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে স্থিতি ছিল ১০ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। বকেয়া ঋণের স্থিতি কমেছে ৯৭ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ বাড়ায় মোট ঋণের স্থিতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে কৃষিঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে স্থিতি ছিল ৫৬ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এর বাইরে কৃষি খাতে নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানি, বিশেষায়িত ব্যাংক, এনজিও ও সমবায় ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে। তবে এসব খাতে ঋণ বিতরণ বাড়লেও আদায়ের হার কম। এসব খাতের ঋণ আদায় বাড়ানোয় চ্যালেঞ্জিং মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কৃষি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম