দেশে দেশে ‘ঈদুল আজহা’

মেজবাহ উদ্দিন
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফলো করুন |
|
---|---|
স্বার্থপরতার গল্পে মোড়ানো জীবনের পাতায় পাতায় অসুখ; প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জটিল হিসাবে মানবতা যখন ক্লান্ত; ঠিক তখনই ত্যাগ, ভালোবাসা আর সহমর্মিতার স্নিগ্ধ বাতাস হয়ে হাজির হয়েছে পবিত্র ঈদুল-আজহা। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বীয় পুত্রকে কুরবানি করতে চেয়ে মহান আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্যের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তার স্মারক হিসাবে সামর্থ্যবান মুসলিমদের ওপর পশু কুরবানির নির্দেশ আসে, ঈদুল-আজহার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় আচারও এটিই। এজন্য কুরবানিকে ‘সুন্নাতে ইব্রাহিমী’ নামে অভিহিত করা হয়। বিশ্বজুড়েই মুসলিমরা ঈদুল-আজহা পালন করে থাকে। কিছুটা স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব আর কিছুটা সময়ের বিবর্তনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদুল-আজহাকে বরণে রয়েছে পার্থক্য। নানা দেশের প্রেক্ষাপটে বৈচিত্র্যময় ঈদুল-আজহা উদযাপনেও রয়েছে বৈচিত্র।
সৌদি আরব : সৌদি আরবে পবিত্র হজের পরদিন ঈদুল-আজহা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালন করা হয়। দেশটির জনগণ ছাড়াও হজের উদ্দেশ্যে আসা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজিরাও কুরবানি করেন। ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে (আইডিবি) পশুর নির্ধারিত মূল্য জমা দিয়ে তাদের মাধ্যমেই কুরবানি দেওয়া হয়। হাজিদের একটি অংশ আবার নিজেরাই পশু কুরবানি করে থাকেন। এখানে কুরবানির প্রক্রিয়া অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং মাংস আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। সারা বিশ্বের মুসলিমদের কিবলা এই দেশে ঈদের নামাজ ও কুরবানির দৃশ্য অভূতপূর্ব আধ্যাত্মিকতার সৃষ্টি করে। সৌদি আরবে কুরবানির পশুর মধ্যে ছাগল, দুম্বা, উট অন্যতম। খেজুর ও ঐতিহ্যবাহী খাবারে আপ্যায়ন চলে ঘরে ঘরে।
আরব আমিরাত : সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কমপক্ষে তিন দিন সরকারি বন্ধ দেওয়া হয়। সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় ঠিক আগের দিন অর্থাৎ আরাফাতের দিন। হজ না করলেও মুসলমানরা এদিন ইবাদতে অংশগ্রহণ করে। আরাফাতের দিন রোজা রাখার কথা হাদিসে বলা আছে, তাই এই দিনটা বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। ঈদের দিন ভোরে সবাই ঈদগাহে মিলিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। নামাজের পরেই নির্দিষ্ট স্থানে পশু কুরবানি দেওয়া হয় এবং দ্রুত কুরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে হয়। দুধ খুরমো এবং শির খুরমো নামে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। আগের রাতে মেহেদি পরার সংস্কৃতি আরব আমিরাতে দারুণভাবেই পালন করা হয়।
ইরান : ইরানে ঈদুল-আজহা ‘ঈদ-এ-কুরবান’ নামে পরিচিত এবং এটি অত্যন্ত ধর্মীয় গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়। এ দিন খুব ভোরে উঠে নতুন পোশাক পরিধান করে স্থানীয় মসজিদ কিংবা মাঠে হাজির হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে ইরানের মানুষ। এরপর কুরবানি করা হয় বিভিন্ন ধরনের পশু। এদেশে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া পশু কুরবানি করা বেআইনি। পরিবার, বন্ধু, অসহায় এবং আত্মীয়দের সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয় মুখরোচক খাবার। কুরবানির পশুর গোশত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মজাদার খাবার প্রস্তুত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের কাবাব এবং হালিম ইরানের মানুষদের বিশেষ পছন্দের খাবার। আমিষের এসব পদ ছাড়াও বাগালি (সবজির তরকারি) ও সবজি-পোলাও-ও ইরানিরা পছন্দ করে।
তুরস্ক : মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্কে ঈদুল-আজহা ‘কুরবান বাইরামি’ নামে পরিচিত। সেদেশে চার থেকে পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি থাকে ঈদুল-আজহা উপলক্ষ্যে। তুরস্কের যে পশুটি সর্বাধিক কুরবানি করা হয় সেটি হচ্ছে ভেড়া। কোনো কোনো অঞ্চলে পশুকে মেহেদি এবং কাপড় দিয়ে সাজানো হয়। অন্য অঞ্চলের মতোই কুরবানির গোশত আত্মীয় ও অভাবীদের মধ্যে বিলি করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কে কেউ কেউ পশু কুরবানি না করে সমপরিমাণ অর্থ দরিদ্র তহবিল কিংবা মুসলিম উন্নয়ন সংস্থাতে দান করে। কেউ দরিদ্রদের বিশেষ দেখাশোনার ভারও প্রহণ করে। তুরস্কে অনুমোদিত কসাইখানা ছাড়া অন্য কোথাও পশু কুরবানি করা বেআইনি। বিশেষ খাবার হিসাবে মাংসের বিভিন্ন পদ-পিলাফ, এবং বোরেক প্রস্তুত করা হয়। তুরস্কে এই উৎসবটি পারিবারিক পুনর্মিলনের সময় হিসাবেও বিশেষভাবে পালিত হয়। বড়দের কবর জিয়ারত করা এবং ছোটদের ঈদের সালামি দেওয়া এখানকার সংস্কৃতির অংশ।
মিশর : মিশরীয়দের কাছে এই ঈদ ‘ঈদ এল-কিবির’ নামে পরিচিত। ঈদের নামাজ ও পশু কুরবানি ছাড়াও আত্মীস্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং বড় আকারে পারিবারিক পুনর্মিলনী করা মিশরীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য। মিশরীয়রা কুরবানির মাংস বিতরণকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। ধনী ব্যক্তি ও দাতব্য সংস্থাগুলো দরিদ্রদের মধ্যে প্রচুর মাংস বিতরণ করেন। শহরব্যাপী অভাবীরা দিনটার জন্য অপেক্ষায় থাকে। ধনী কিংবা মুসলিম সংস্থাগুলো থেকে যেন পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা পায়। বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে কাবাব, কুশারি, এবং বিভিন্ন মিষ্টি পদ। পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন করে এবং শিশুদের উপহার দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়া : বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার কুরবানি আদায় করা হয় সামাজিকভাবে। কুরবানিতে তাদের উৎসবের আমেজ কিছুটা কমই দেখা যায়। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা হাট থেকে কুরবানির পশু কিনে মসজিদে দিয়ে আসেন। মসজিদ এলাকায় কতগুলো পরিবার আছে, তার হিসাব ইমামের কাছে থাকে। সবাই মিলে কুরবানির পর যতগুলো ঘর আছে, গোশত তত ভাগে ভাগ করে ছোট প্যাকেটে সবার ঘরে দিয়ে আসেন। তবে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারা তা না নিয়ে গরিবদের দিয়ে দেন। ছাগলের মাংস দিয়ে তৈরি ‘সেইত কাম্বিং’ আর ‘গুলাই কাম্বিং’ সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি খাবার। বড় শহরগুলোতেও বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়, যেখানে রেন্ডাং, সতে, এবং লন্টং খুবই জনপ্রিয়।
ভারত : ভারতীয় উপমহাদেশে ঈদুল আজহা পরিচিত ‘বকরি ঈদ’ নামে। ভারতীয় মুসলমানরা সাধারণত ঈদুল-আজহার জন্য ছাগল বা ভেড়া কুরবানি করে থাকেন। ঈদের নামাজের জন্য সেখানে নির্ধারিত এলাকা আছে। যেহেতু ভারতে গরুকে পবিত্র বলে মনে করা হয়, তাই ভারতীয় মুসলমানরা সাধারণত তাদের বাড়িতে বা স্থানীয় ইসলামিক কেন্দ্রে ছাগল বা ভেড়া কুরবানি দেন। বিরিয়ানি, কাবাব আর শির খুরমা এখানকার ঈদের বিশেষ আকর্ষণ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও এ আনন্দে শামিল হয়ে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
পাকিস্তান : পাকিস্তানে ঈদুল-আজহা চার দিনব্যাপী উৎসব হিসাবে পালিত হয়। বিশেষ করে করাচি এবং লাহোরে এই উৎসব অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়। সামর্থ্যবান প্রতিটি পরিবার তাদের সাধ্যমতো পশু কুরবানি করে। যারা কুরবানি করতে পারে না কিংবা যারা অক্ষম, তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়। পাকিস্তানে সবাই নিজেদের পালিত পশুই কুরবানি দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ জন্য সেখানে অনেক আগ থেকে পশু কেনাবেচা শুরু হয়। অন্তত এক মাস আগে তারা পশু কিনে নিজেরা যত্ন করেন। পাকিস্তানে কুরবানির জন্য উটই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। এ ছাড়া দুম্বাও কুরবানি করা হয়। সেখানে কাবাব, বিরিয়ানি এবং নেহারি খুবই জনপ্রিয়।
মরক্কো : ঈদুল-আজহা মরক্কোতে ‘ঈদুল-কাবির’ নামে স্বীকৃত। সাধারণত অন্য দেশের মতোই দিনটা শুরু হলেও স্থানীয় সংস্কৃতির আমেজ দেখা যায়। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের অংশ হিসাবে তারা পশুর মাথায় মেহেদি মাখায়। অনেকে আবার আগের বছরের কুরবানি করা পশুর শিং মাথায় পরে আনন্দ করে। পুরুষরা ঐতিহ্যবাহী ‘জেল্লাবা’ পরিধান করে মসজিদে যান। ঈদের নামাজের পর পশু কুরবানিকে গণ্য করা হয়, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ত্যাগ হিসাবে। পশু হিসাবে গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া থাকে। উট কুরবানিও এখানকার কিছু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। এখানে মাংসের পদ যেমন-মেরগেজ, কুসকুস, তাজিন এবং হারিরার মতো স্থানীয় খাবার আত্মীয় ও দরিদ্রদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয়।
মালয়েশিয়া : ঈদুল-আজহা মালয়েশিয়ানদের কাছে ‘হারি রায়া কুরবান’ নামে পরিচিত। এদিন সকাল থেকেই দেখা যায় উৎসবের আমেজ। মালয়েশিয়ায় সকালে ঈদের নামাজ ও পশু কুরবানির পর নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ঈদ পালন করতে দেখা যায় তাদের। পশু কুরবানির পর এ দিন রাস্তাঘাটে মশাল জ্বালানো কিংবা আতশবাজি পোড়ানো হয়। এ দিন মালয়েশিয়ার মুসলিম পরিবারগুলোর দরজা সবার জন্য খোলা থাকে। মালয়েশিয়ায় প্রতিযোগিতা করে পশু কেনার নিয়ম নেই। মালয়েশিয়ায় সমাজবদ্ধভাবে কুরবানি করা পছন্দ। স্থানীয় মসজিদে কুরবানি করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ মহল্লার প্রতিটি পরিবারে জনসংখ্যার অনুপাতে মাংস বিলি করে। পরিবারগুলো একত্রিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘লেমাং’ ও ‘কেটুপাত’ উপভোগ করে। এছাড়াও, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খাদ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়।
তিউনিশিয়া : অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মতো ঈদুল আজহা তিউনিশিয়াতে সরকারি ছুটি হিসাবে গণ্য হয়। ঈদের দিন পুরুষরা সকাল সকাল ঈদগাহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নারীরা বাসায় অবস্থান করে প্রস্তুত করেন খাবার-দাবার। পুরুষরা ফিরে এলেই কুরবানি পর্ব শুরু। পশু হিসাবে প্রধানত ভেড়া কুরবানি করা হয়ে থাকে। কুরবানির গোশতের তিনভাগের একভাগ পরিবারের জন্য, একভাগ আত্মীয় এবং একভাগ গরিবদের জন্য রাখা হয়। ঈদের জন্য বিশেষ ধরনের পিঠা ও বিস্কুট তৈরি হয় তিউনিশিয়ায়। তাছাড়া শিশুদের জন্য থাকে মিষ্টি এবং খাবার।
ইরাক : মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র একটি অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। হজরত আলী, ইমাম হোসেন, ইউনুস নবীসহ আরও অনেক নবীকেই দাফন করা হয়েছে এই ভূখণ্ডে। বিখ্যাত কারবালার প্রান্তরও ইরাকেই অবস্থিত। বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানির মাজারও দেশটির রাজধানী বাগদাদ শহরে। ইরাকে ঈদুল-আজহা অত্যন্ত ধর্মীয় গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। মসজিদে নামাজের পর মুসলমানরা পশু কুরবানি দেয় এবং মাংস আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে। বিশেষ খাবারের মধ্যে থাকে কাবাব, ডলমা এবং নানা মিষ্টি পদ।
তাজিকিস্তান : ঈদের নামাজের মধ্যদিয়ে তাজিকিস্তানের মানুষ শুরু করে ঈদুল-আজহা। তাজিকিস্তানে অনুমোদিত স্থান ছাড়া কুরবানি দেওয়ার নিয়ম নেই। তাজিকিস্তানে বাড়ির শিশুরাই ঈদের দিন খাবার পরিবেশন করে। অতিথিকে প্রথমে ফল, পেস্ট্রি ও বিস্কুট নাশতায় দেওয়া হয়। তারপর মাংসের বাহারি পদ দিয়ে খাবার সম্পন্ন করার পর কেক ও মিষ্টি মুখ করে সবাই। এ দেশে প্রতিবেশীরা অবাধে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে পারে।
নাইজেরিয়া : নাইজেরিয়ায় ঈদুল-আজহা ‘বিগ সালা’ নামে পরিচিত। মসজিদে নামাজের পর পশু কুরবানি দেওয়া হয় এবং মাংস আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মাংসের পদ-জোলফ রাইস, এবং নানা ধরনের সুপ। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে এই উৎসব উদযাপন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী মুসলিমরা সাধারণত বিক্ষিপ্ত। ঈদ তাদেরকে একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। বিশেষকরে শিকাগো এবং ফ্লোরিডাতে ভিড় জমে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং আফ্রিকা থেকে আসা মানুষের। নিজ ঐতিহ্যের পোশাক এবং খাবার দিয়ে তার ঈদকে বৈচিত্র্যতা দান করে। তবে যেখানে সেখানে পশু জবাইয়ের প্রচলন নেই দেশটিতে। নির্দিষ্ট গ্রোসারিতে অথবা পশুর খামারে কুরবানি করে সেখানকার মুসলমানরা। কুরবানিদাতার নাম, বাবার নাম আর অর্থ দিয়ে আসতে হয় গ্রোসারিতে। তারাই কুরবানি করে মাংস প্যাকেট করে রাখে। কুরবানিদাতা গিয়ে মাংস নিয়ে আসে।
চীন : চীনের মুসলমানদের কাছে ঈদুল আজহা ‘ঈদ আল গোরবান’ বা ‘ঈদ আল কুরবান’ নামে পরিচিত এবং এটি মূলত উইঘুর মুসলিমদের মধ্যে পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। মসজিদগুলো পূর্ণ হয়ে এর সংলগ্ন মাঠ বা খোলা জায়গাগুলোও লোকারণ্য হয়ে যায়। ঈদের জামাত শেষে বাড়িতে বাড়িতে ভেড়া, উট বা গরু কুরবানি করেন চীনা মুসলমানরা। মসজিদকেন্দ্রিকও কুরবানি করা হয় কোথাও কোথাও। মাংসের নানা পদ, নুডুলস এবং মিষ্টি জাতীয় বিশেষ খাবার প্রস্তুত করা হয়।
এছাড়াও পৃথিবীর প্রতিটি কোণে, যেখানেই মুসলিম জনবসতি রয়েছে, সেখানেই ঈদুল-আজহা তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে উদ্ভাসিত হয়। আলজেরিয়া থেকে উজবেকিস্তান, সোমালিয়া থেকে সিঙ্গাপুর-সর্বত্রই এই ঈদের মূল চেতনা কিন্তু একই: আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ, ত্যাগ এবং মানবকল্যাণ। বস্তুত, ঈদুল-আজহা কেবল পশু কুরবানির আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর গভীরে প্রোথিত রয়েছে আত্মত্যাগ, উৎসর্গ এবং মানবিকতার এক মহান বার্তা। এটি বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এ দিনে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে, কুরবানির মাংস ভাগ করে নেয়। এ ভাগাভাগির মধ্য দিয়েই স্থাপিত হয় সাম্য ও সহানুভূতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
লেখক : গল্পকার ও অনুবাদক