Logo
Logo
×

যুগান্তরের বিশেষ আয়োজন

যান নয়, তারুণ্যের স্বাধীনতার প্রতীক

Icon

সাইফ আহমাদ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের তারুণ্য যেন আজ দুই চাকার গতিতে ছুটে চলা এক অদম্য স্রোত। ইঞ্জিনের গর্জন, থ্রটলের ছোঁয়া আর উড়ন্ত হাওয়ার বিপরীতে দিগ্বিদিক ছুটে চলা-এ যেন এক নতুন জীবনের রূপক। শহরের ব্যস্ত সড়ক কিংবা গ্রামের ধুলোমাখা মেঠোপথ-মোটরসাইকেল শুধু একটি বাহন নয়, এটি এখন তারুণ্যের স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরতা আর ব্যক্তিত্বের প্রতীক। একসময় ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল ছিল ‘বড়লোকের ছেলে’ কিংবা পুলিশ সদস্যদের বাহন। এর কোনোটা বিলাসিতা এবং কোনোটা কর্তৃত্বের প্রকাশ। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন মোটরসাইকেল মানেই তারুণ্যের গতি, স্বাধীনতার উদহারণ, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া এক আধুনিক জীবনধারা। বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালুর পর এর ব্যাবহারিকতা বেড়েছে বহুগুণ। বাইক মানে এখন শুধু ঘোরাঘুরি নয়; বরং কর্মসংস্থান, আয় ও আত্মমর্যাদার বাস্তব কাহিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে সদ্য কর্মজীবনে প্রবেশ করা তরুণ-সবাই এখন বাইকের দিকেই ঝুঁকছেন। কেননা এটি শুধু চলাচলের মাধ্যম নয়, সময় বাঁচানোর হাতিয়ার; স্বাধীন চলাচলের স্বপ্ন, আর আত্মপরিচয়ের অভিব্যক্তি।

‘বাসের ভিড় আর ট্রাফিকের যন্ত্রণায় একসময় অফিসে দেরি হতো। এখন নিজের বাইকে সময়মতো পৌঁছাতে পারি। সত্যিই একধরনের স্বাধীনতা অনুভব করি’, বলছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাওন সোলায়মান; যিনি ১৫০ সিসির একটি স্পোর্টস বাইক চালান।

শিল্পের অগ্রগতি ও সম্ভাবনা : গত এক দশকে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। হোন্ডা, ইয়ামাহা, টিভিএস, বাজাজ, হিরোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড দেশে স্থাপন করেছে অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট। এতে কমেছে দাম, বেড়েছে কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা। এছাড়া বাইকভিত্তিক উদ্যোক্তাও বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন শহরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট গ্যারেজ, কার ও বাইক মডিফিকেশন ওয়ার্কশপ, ইউটিউব চ্যানেল আর ই-কমার্সভিত্তিক স্টার্টআপ। তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজন্মের মোটরমেকানিক, অটোমোবাইল ব্লগার ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা।

চ্যালেঞ্জ ও করণীয় : তবে এ উত্থানের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। যথাযথ হেলমেট ব্যবহার না করা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রশিক্ষিত চালক-এসবই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরসাইকেল যেমন স্বাধীনতার প্রতীক, তেমনই এর সঙ্গে নিরাপত্তাবোধ, আইন মেনে চলা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ জরুরি।

সেই কারণে মোটরসাইকেলচালকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ট্রাফিক শিক্ষা ও আলাদা বাইক লেন তৈরির দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উঠছে।

ওয়ার্ল্ড মোটরসাইকেল ডে-এর প্রাসঙ্গিকতা : প্রতিবছর ২১ জুন বিশ্বের নানা প্রান্তে পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড মোটরসাইকেল ডে। এদিনটিতে বাইকাররা তাদের ভালোবাসা, ভ্রমণের গল্প আর নিরাপদ রাইডিংয়ের বার্তা ছড়িয়ে দেন। বাংলাদেশেও গড়ে উঠছে বাইকারদের ক্লাব, অনলাইন কমিউনিটি, সোশ্যাল রাইডিং গ্রুপ। বিশেষ করে ‘বাইক ট্যুরিজম’ তরুণদের মধ্যে একটি নতুন ঘরানার ভ্রমণসংস্কৃতি গড়ে তুলেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম