কাজে যোগদানের নির্দেশনা উপেক্ষা
পল্লী বিদ্যুতে হযবরল গণছুটিতে কর্মীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চাকরির বৈষম্য দূরীকরণ ও হয়রানিমূলক পদক্ষেপ বন্ধসহ ৪ দফা দাবিতে রোববার থেকে গণছুটিতে চলে গেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মীরা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা। জনবল সংকটে সমিতির আওতাভুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অনেক এলাকা। ফোন করে কাউকে পাচ্ছে না গ্রাহকরা। এদিকে গণছুটি কর্মসূচি থেকে সরে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় রোববার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মীদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। তবে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সারা দেশে অধিকাংশ কর্মী কাজে যোগ দেননি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও উলটো নমনীয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিউল্লা যুগান্তরকে বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব পক্ষকে নিয়ে সভা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে সারা দেশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় কর্মীরা গণছুটি প্রত্যাহারের আবেদন করলেও আন্দোলনকারীদের চাপে কাজে যোগ দিতে পারছে না। এ অবস্থায় হাতেগোনা কয়েকজন মিলে অফিস চালাচ্ছেন। কর্মী না থাকায় বেড়ে গেছে লোডশেডিং। কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে গ্রাহকরা ফোন করেও কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা নেই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)। অথচ তাদের হাতেই রয়েছে দেশের ৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব। এত বড় দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে পালনে দক্ষতা, সক্ষমতা, জনবল কোনোটাই নেই সংস্থাটির। তাদের (বিআরইবি) ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থার কারণে সাধারণ গ্রাহক শতভাগ বিদ্যুতায়নের সুফল পাচ্ছেন না। এদিকে পল্লী বিদ্যুতের সিস্টেম সংস্কার এবং আরইবির শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তিসহ ৪ দফা দাবিতে নেত্রকোনার পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় এজিএম প্রশাসন ও এইচআরকে সাময়িক বরখাস্ত করে জোরপূর্বক পটুয়াখালীতে সংযুক্ত করা হয়। পরে আরও তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে ফুঁসে ওঠেন পবিসের আওতায় থাকা সারা দেশের কর্মীরা। রোববার থেকে ৪ দফা দাবিতে গণছুটি কার্যক্রম শুরু করেন তারা। দাবিগুলো হলো-আরইবি-পবিস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার মতো কোম্পানি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি, সব চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়মিতকরণ, মামলা প্রত্যাহার করে চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল, জরুরি সেবায় নিয়োজিত লাইনক্রুদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং পল্লী বিদু্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া। যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী সারা দেশের চিত্র-
ওসমানীনগরে ৭৪ জনের মধ্যে ৬০ জনই অনুপস্থিত : ওসমানীনগরে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ৭৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৬০ জনই কাজে যোগদান করেননি বলে জানান খাশিকাপন জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. নাইমুল হাসান। জয়পুরহাটে ২৯১ কর্মচারী গণছুটিতে : পবিসের ২৯১ জন কর্মচারীর জন্য গণছুটিতে যাওয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জনবল সংকটে সমিতির আওতাভুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। মাগুরায় গণছুটিতে যাওয়া কর্মচারীর সংখ্যা বেড়েছে : মাগুরায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গণছুটিতে থাকা ২৮৯ জন কর্মচারীর মধ্য থেকে সোমবার মন্ত্রণালয়ের হুঁশিয়ারি পেয়ে ৭৫ জন কাজে যোগদান করলেও এদের মধ্য থেকে আবার ২১ জন আন্দোলনে ফিরে গেছেন। এ অবস্থায় কর্মবিরতিতে রয়েছেন মোট ২৩৫ জন। রাঙ্গুনিয়ায় গণছুটিতে ৭৩ কর্মী, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তি : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১০৩ কর্মীর মধ্যে একসঙ্গে ৭৩ জন কর্মী ছুটিতে থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। পবিস-২ এর রাঙ্গুনিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোহাম্মদ ফয়সাল হোসেন বলেন, একসঙ্গে এত কর্মী ছুটিতে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা যাচ্ছে না। রাউজান থেকে ঠিকাদারের লোক এনে সাময়িকভাবে কাজ চালানো হচ্ছে। ফুলপুরে ৩ কর্মকর্তা ছাড়া সবাই গণছুটিতে : ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ফুলপুর জোনাল অফিসের ৩ জন কর্মকর্তা ছাড়া সবাই অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে বিদ্যুৎ সেবা স্বাভাবিক রাখতে বাইরের লোক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে গণছুটি প্রত্যাহার : গণছুটি নেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছে দৌলতপুর সাব-জোনাল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সাব-জোনাল অফিসের এজিএম যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের অফিসের কোনো কর্মচারী ছুটি নিয়ে চলে যায়নি। এখানে ৪২ জন জনবল আছে। মোহনগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ধর্মঘটে ৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী : মোহনগঞ্জে গণছুটির নামে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসার এমদাদুল হক জানান, তিনিসহ ৭ জন কর্মরত আছেন। এখানে ৫০ জন অনুপস্থিত আছেন। যশোর পবিস-২ এর আওতায় ২৪১ জন অনুপস্থিত : গণছুটির নামে যপবিস-২ এর আওতায় সদর দপ্তর, জোনাল ও সাব-অফিসে এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপস্থিত রয়েছে। সাতক্ষীরায় গণছুটিতে ৯৭ ভাগ কর্মী : পবিস কর্মীরা গণছুটিতে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। সাতক্ষীরায় ৬৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৯৭ ভাগ ইতোমধ্যে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে আছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা। বড়লেখায় ১০১ কর্মচারীর ৮৫ জনই গণছুটিতে : বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০১ কর্মচারীর ৮৫ জনই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজে যোগদানের নির্দেশনার তোয়াক্কা করেনি। বুধবারও গণছুটির নামে তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিল। ফেনীতে গণছুটিতে ৫৬৯ কর্মী : ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ছয় জোনাল অফিসে ৫৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৫৬৯ জন গণছুটি নিয়ে গত ৪ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সরকারের দেওয়া আলটিমেটামে ৬ অফিসে ২১ জন কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগ দিলেও বাকি ৫৬৯ জন এখনো ফেরেননি। দুমকিতে ২৬ কর্মীর ২২ জনই ছুটিতে : পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সাব-জোনাল অফিসে চলছে কার্যত অচলাবস্থা। অফিসের ২৬ জন জনবল থেকে ২২ জনই গণছুটিতে থাকায় পুরো কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ময়মনসিংহে কাজে যোগ দিয়েছে ৯১ কর্মী : ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর আওতায় থাকা বেশির ভাগ কর্মচারী এখনো গণছুটিতে। ৪৬৪ জন কর্মচারীর মধ্যে ৩৭৩ কর্মচারী এখনো গণছুটিতে আছেন। বুধবার পর্যন্ত কাজে যোগদান করেছেন মাত্র ৯১ জন কর্মচারী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৬০ জন কর্মী গণছুটিতে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে পল্লী বিদ্যুতের ছয় লাখ গ্রাহকের। ৬৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে গণছুটিতে রয়েছেন মধ্যে ৪৬০ জন। এতে সমিতির আওতায় থাকা ৬ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক বিপাকে পড়েছে। কমলনগরে কর্মে যোগ দিলেও ফের গণছুটিতে : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতিতে রয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণছুটির কারণে বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে অফিসে এসে কর্মে যোগদান করলেও সংগঠনের চাপের মুখে ফের গণছুটিতে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন রামগতি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম খায়রুল ইসলাম। হবিগঞ্জে কাজে যোগ দেয়নি ৪শ কর্মী : হবিগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের প্রায় ৪শ কর্মচারী বুধবারও কাজে যোগ দেননি। ফলে জেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। কলাপাড়ায় ৭০ কর্মচারীর ৩৬ জন অনুপস্থিত : কলাপাড়ায় ৩৬ জন অনির্দিষ্টকালের ছুটির আবেদন লিখে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। গ্রাহকদের অভিযোগ ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে একাধিক ফোন দিলেও কাজ হয় না।
