ইসরাইলের গণহত্যায় আবাসন প্রকল্পের প্রতিধ্বনি
ট্যাংক-বিমান হামলায় দিশেহারা গাজাবাসী
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঘন ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে গাজার আকাশ। ট্যাংক আর যুদ্ধবিমানের বিস্ফোরণে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে ঘরবাড়ি। চারদিকে চিৎকার, হাহাকার। জল, স্থল ও আকাশ-তিন পথেই গাজা সিটিতে হামলা চালাচ্ছে বর্বর ইসরাইলি সেনারা। স্থলহামলা শুরুর পর থেকে আর্টিলারি, ড্রোন, বিমান হামলা ও গুলিবর্ষণ চলছে অবিরত। এমন নৃশংসতার মধ্যে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শহরটির বাসিন্দারা। ভয়ে পালাতে শুরু করেছেন তারা। কেউ হেঁটে, কেউ আবার যানবাহনে ছাড়ছেন নিজ শহর। অনেকেই গাধার গাড়িতে সামান্য কিছু মালপত্র নিয়ে ছুটছেন অজানা গন্তব্যে। এএফপি।
বৃহস্পতিবার এএফপি সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজা সিটিতে ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান দিয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে সারি বেঁধে দক্ষিণদিকে পালিয়ে যাচ্ছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকজন হেঁটে, যানবাহনে কিংবা গাধার গাড়িতে করে সামান্য মালপত্র নিয়ে শহর ছাড়ছে। ৩২ বছর বয়সি আয়াহ আহমেদ পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিয়ে গাজা সিটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘এখানে আর্টিলারি হামলা, বিমান হামলা, ড্রোন হামলা, বোমাবর্ষণ চলছেই। হামলা থামছে না। বিশ্ব বোঝে না কী চলছে। তারা (ইসরাইল) আমাদের দক্ষিণে যেতে বলছে। কিন্তু সেখানে আমরা কোথায় থাকব? কোনো তাঁবু নেই, নেই পরিবহণব্যবস্থা, এমনকি টাকাও নেই।’ ৪৭ বছর বয়সি শাদি জাওয়াদ পরিবারের সঙ্গে পালানোর সময় বলেছেন, ‘পরিস্থিতি বর্ণনাতীত। চারপাশে মানুষের ভিড়, বিস্ফোরণের শব্দ, নারী ও পুরুষ কাঁদছে এবং চিৎকার করছে। আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হাঁটছি।’ বৃহস্পতিবার গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, ‘মধ্যরাত থেকে অন্তত ২০ জনের লাশ পাওয়া গেছে।’ গাজার সিভিল ডিফেন্স বলেছে, ইসরাইলি হামলায় বুধবার একদিনেই ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।’ বৃহস্পতিবার নিহত হয়েছেন আরও ৪২ জন। গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় মানবিক সংকট এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে সেখানকার নারীরা রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বুধবার সংস্থাটির জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বরাত দিয়ে এ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
ইসরাইলি হামলায় এদিন থেকেই গাজাজুড়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট বিভ্রাটের মধ্যেই গাজার কেন্দ্রে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইলি ট্যাংক। এরই মধ্যে গাজাকে ‘রিয়েল এস্টেট সম্পদে’ পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের চরমপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। তিনি বলেছেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনের গাজা শহর ‘রিয়েল এস্টেট সম্পদের’ একটি উৎস হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে গাজা দখলের পর জমি ভাগাভাগি করে নেওয়া নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং এই পরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তার এ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা পরিকল্পনায় আবাসন প্রকল্পের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট।
বোমাবর্ষণ ছাড়াও অনাহারেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে গাজায়। বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টির কারণে ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ আরও চারজনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের এ আগ্রাসনকে সরাসরি গণহত্যা আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিস্তিনিদের ওপর এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ১৪১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫ জন আহত হয়েছেন।
