সাদাপাথর লুটের আসামি ২ হাজার
গ্রেফতার মাত্র ১৭ হোতার রিমান্ড শুনানি হয়নি
সংগ্রাম সিংহ, সিলেট
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাদা পাথর লুটের মামলায় প্রায় ২ হাজার জনকে আসামি করলেও মাত্র ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। একই অভিযোগে জেলা প্রশাসন ১৩৭ জন এবং দুদক অভিযুক্ত ৪২ জনের তালিকা করে। এসব তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নামও রয়েছে। এদিকে লুটের ঘটনার মূল হোতা শাহাব উদ্দিন গ্রেফতার হলে তার রিমান্ড চায় পুলিশ। রোববার রিমান্ডের আবেদন জানালেও শুনানি হয়নি। এমন তথ্য দিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রতন শেখ।
এর আগে পাথর লুটের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব। এজাহারে বলা হয়, কিছু দুষ্কৃতকারী গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ এবং অননুমোদিতভাবে কোটি টাকার পাথর লুটপাট করছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এজাহারে আরও বলা হয়, সরকারি গেজেটভুক্ত কোয়ারি থেকে এ ধরনের লুট বা চুরি খনি ও খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া দণ্ডবিধি মোতাবেক অপরাধও সংঘটিত হয়েছে।
এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১২টি মামলা করে। সেসব মামলায়ও আসামি করা হয় অনেককে। অভিযুক্ত করা হয়, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, শ্রমিক সংগঠনের নেতা, বড় পাথর ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেটের সদস্য ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে ১৩৭ জনকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয় যারা পাথর উত্তোলন, পরিবহণ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং তাদের মধ্যে স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা রয়েছেন, তবে এদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনও অনুসন্ধানে প্রমাণ পায়, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ সাদা পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের কিছু সদস্য প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং এর ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, অথচ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। এজাহারে নাম থাকা দুই হাজার আসামির মধ্যে কেবল ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তাদের অধিকাংশই পাথর বহনকারী বা ছোটখাটো শ্রমিক, অথচ মূল হোতারা প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এড়াচ্ছেন ও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, অবৈধ উত্তোলন বন্ধে শুধু মামলার কাগজপত্র যথেষ্ট নয়, বরং মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মামলার নামে শুধু দায়সারা তদন্ত ও গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে কিন্তু প্রশাসনের ভেতরে থাকা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় লুটকারীরা পার পাচ্ছে। অপরদিকে সাদাপাথর লুটের মূল হোতা সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। সাহাব উদ্দিন সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি ভোলাগঞ্জ এলাকার মৃত আব্দুল বারীর ছেলে। গ্রেফতারের আগে ১১ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তার সব পদ স্থগিত করা হয়। পাথর লুটের পর দুদকের করা লুটকারীদের তালিকায় সাহাব উদ্দিনের নাম শীর্ষভাগে রয়েছে। গোয়েন্দাসহ প্রশাসনের করা অন্যান্য তালিকাতে সাহাব উদ্দিনের নাম শীর্ষভাগে রয়েছে।
পাথর লুট ছাড়াও কোয়ারির পার্শ্ববর্তী ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বরে সরকারি বিশাল জায়গা দখল করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাইট ভাড়ার নামে গত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয় সামনে রেখে তদন্তকারীরা এগোচ্ছে বলে জানা গেছে।
