বাংলাদেশে পুশইন
৬ ভারতীয়কে ফেরত নিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশে পুশইন করা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনসহ দুই পরিবারের ছয় সদস্যকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের করা আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন। শুক্রবার দুই পরিবারের সদস্যদের রিট পিটিশনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন। বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো ছয়জন ও তাদের পরিবার কয়েক দশক ধরেই কলকাতার বীরভূমের বাসিন্দা।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আদেশে বলেছে, ‘নাগরিকত্বের প্রশ্নটি আরও নথিপত্র এবং প্রমাণের ভিত্তিতে উপযুক্ত একটি আদালতে বিবেচনা করা উচিত। বিতাড়নের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা এই সন্দেহ তৈরি করেছে যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে ২ মে ২০২৫-এর মেমোর বিধিবিধান সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে।’
হাইকোর্টের বেঞ্চ মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা ওই সব ব্যক্তিকে ভারতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা আমরা বলে দিয়েছি। সরকারকে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।’ কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চ আটক ব্যক্তিদের বাংলাদেশি নাগরিকের তকমা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন। আগের এক শুনানিতে আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি হলফনামা দাখিল করে জানাতে বলেছিলেন, পরিবারগুলোকে কীভাবে এবং কোন জায়গা থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার সেই হলফনামা জমা দিয়েছিল।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২৬ জুন কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে তাদের পুশইন করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২০ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলীনগর ভুতপুকর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। আটক ছয় ভারতীয় হলেন-পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মুরারাই থানার বাসিন্দা মো. মন্নু শেখের ছেলে দানেশ (২৮), মো. ভোদু শেখের মেয়ে সোনালি খাতুন (২৬), সেরাজুল শেখের মেয়ে সুইটি বিবি (৩৩), আজিজুল দেওয়ানের ছেলে কুরবান সেখ (১৬) ও ইমাম দেওয়ান (৬) এবং মো. দানেশের ছেলে মো. সাব্বির শেখ (৮)।
আটকরা বাংলাদেশ পুলিশের কাছে জানিয়েছিল, তারা ভারতীয় নাগরিক। তারা যে ভারতীয় নাগরিক এবং সপক্ষে তাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ডসহ সব ডকুমেন্ট থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় পুলিশ তাদের জোর করে বাংলাদেশি বানানোর চেষ্টা করে এবং পুশইন করে। এরকম দুর্বিষহ অবস্থায় তারা ভারতে ফেরার দাবি জানিয়েছিলেন।
এই মামলার পেছনের কাহিনি আরও বেদনাদায়ক। সোনালি বিবি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জুন মাসে দিল্লি পুলিশ তাকে ও তার পরিবারকে আটক করে, অভিযোগ আনে যে তারা বিদেশি নাগরিক। সুইটি বিবি ও তার দুই সন্তানকেও একইভাবে আটক করা হয়। এরপর হঠাৎই একদিন তারা গায়েব হয়ে যান। স্বজনেরা জানান, পুলিশ তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। পরিবারের লোকজন আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বলেন, এটা শুধু নাগরিকত্ব নয়, মানবিকতার প্রশ্ন। সোনালির অনাগত সন্তান জন্মাবে কোন দেশের নাগরিক হিসাবে, সেটিও অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
আদালতের এ নির্দেশের প্রভাব রাজনীতিতেও পড়েছে। রাজ্যের শাসক দল বলছে, এই রায়ে প্রমাণিত হলো বিজেপি বাঙালিদের লক্ষ্য করে মিথ্যা অভিযোগ তোলে। অন্যদিকে বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, আদালত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং আসল তথ্য আদালতের সামনে আসেনি।
