Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সেমিনারে বক্তারা

দেশে বছরে ২ কোটি টন খাদ্য অপচয়

অবকাঠামো ঘাটতি ও নীতিগত সমস্যায় নষ্ট হয় উৎপাদন * খাদ্য অপচয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে বছরে ২ কোটি টন খাদ্য অপচয়

উপদেষ্টা ফরিদা আকতার। ফাইল ছবি

দেশে প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন খাদ্য নষ্ট হয়। এই পরিমাণ খাদ্য দেশে উৎপাদিত মোট খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশের সমান। অথচ এখনো দেশে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সোমবার রাজধানীতে একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। কয়েকটি সংস্থা যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) এবং ডেনমার্ক দূতাবাস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বক্তব্য রাখেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে উৎপাদিত মোট খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। এর ফলে দেশের ২৭ শতাংশ কৃষিজমি, ১৩ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশ সমমূল্যের সম্পদ অপচয় হচ্ছে। ফরিদা আখতার বলেন, কৃষকরা পরিশ্রম করে উৎপাদন করলেও সংরক্ষণ, অবকাঠামো ও ন্যায্য দামের অভাবে বিপুল খাদ্য অপচয় হয়। দুধ, ডিম, মাছসহ নিত্যপণ্যে পরিবহণ ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্যেও অবৈধ জাল ও অপচয়ের কারণে মজুত হুমকিতে পড়ছে। তিনি বলেন, শহরে রেস্টুরেন্ট ও সচ্ছল শ্রেণির মানুষের মধ্যে খাদ্য অপচয় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই প্রবণতা রোধে সচেতনতা ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। তিনি আরও বলেন, সরকার একা সবকিছু করতে পারবে না। বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতেও সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপদ, টেকসই ও অপচয়মুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। তার মতে, মৎস্য ও পোলট্রি খাতে বেসরকারি খাতের অবদান বেশি। এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। 

কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, আগামী তিন বছরে ২ লাখ হেক্টর জমি গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (জিএপি)-এর আওতায় আসবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে বাজার ভারসাম্যহীনতা ঠেকাতে উপগ্রহ চিত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

সিপিডির ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অপচয় বাড়লে পরিবেশগত সম্পদ নিঃশেষ হবে। অথচ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘আমরা মাটির উর্বরতা, পানি, শ্রম ও অর্থ হারাচ্ছি; অথচ দরিদ্ররা পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না।’ ডেনমার্ক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ডারস কার্লসেন সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ অপচয় হয়। জমি, পানি, শ্রম সবই নষ্ট হয়। কাজ শুরু করার সময় এখনই। অর্থাৎ আজই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করতে হবে। ডব্লিউএফপির জেসি উড জানান, দেশে ধান কাটার পর ৮ থেকে ১৫ শতাংশ এবং ফল-সবজির ২০ থেকে ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়। যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার। প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল কৃষি, শীতল শৃঙ্খল (কোল্ড চেইন), স্মার্ট প্যাকেজিং, বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন, জৈব বর্জ্য নিষিদ্ধকরণ, খাদ্যদান উৎসাহিতকরণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কৃষকদের আর্থিক সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেমিনারে অংশীজনরা একমত হন খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি রোধে সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম