ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট
খামখেয়ালিতে গচ্চা আট কোটি টাকা
অনিকেত মাসুদ, বরিশাল
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নগরীর বেলতলা ও রূপাতলীতে নির্মাণ শেষ হওয়ার ৯ বছর পর সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। ২০১৬ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হলেও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর খামখেয়ালির কারণে এতদিন চালু করা হয়নি। এদিকে দিনদিন নগরীতে পানির চাহিদা বৃদ্ধি আর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ায় প্ল্যান্ট দুটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিসিসি। তবে এতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে আরও ৮ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, বরিশাল নগরীর প্রায় ছয় লাখ বাসিন্দার জন্য দৈনিক মোট পানির চাহিদা ৭.২০ কোটি লিটার। এর মধ্যে প্রতিদিন ৩.২০ কোটি লিটার পানি বিসিসির ৩৮টি উৎপাদক নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া বাকি ৪ কোটি লিটার পানিও এখানকার বাসিন্দারা ব্যক্তিগতভাবে গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করে চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে প্রথম প্রকল্প হাতে নেন সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন। তিনি ২০১২ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ শুরু করেন। হিরন সিটি নির্বাচনে হেরে যান। ২০১৩ সালের জুনে দায়িত্ব নেন আহসান হাবিব কামাল। এরপর ২০১৩ সালে কীর্তনখোলা নদীতীরের রূপাতলীতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কামালের আমলে শেষদিকে ২০১৬ সালে এ দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ শেষ হলেও তা হস্তান্তর হয়নি। পরে ২০১৮ সালে বিসিসির মেয়র হওয়ার পর সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এ দুটি বুঝে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে প্ল্যান্ট দুটি বুঝে নিতে বলা হলেও তা তিনি নেননি। তবে অনেকে মনে করেন, নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে নানা বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় তিনি এই প্রকল্প বুঝে নিতে খামখেয়ালি করেন। এরপর থেকে টানা ৯ বছর এ দুটি প্ল্যান্ট পড়ে ছিল। প্রতিটি প্ল্যান্টের দৈনিক ১ কোটি ৬০ লাখ লিটার করে পানি শোধনের ক্ষমতার রয়েছে। নিয়মিত ব্যবহার না করার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের দেওয়াল ও পানি জমিয়ে রাখার পুকুর। দুটি প্ল্যান্টেরই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র চুরি বা অচল হয়ে গেছে।
সম্প্রতি এ দুটি প্ল্যান্ট চালুর উদ্যোগ নেয় বিসিসি। এরপর দেখা যায়, অচল প্ল্যান্ট দুটি চালুতে মেরামত বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন। এছাড়া নির্মাণকাজেও কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকার কথা তা নেই। এছাড়াও প্ল্যান্ট দুটি থেকে কাঙ্ক্ষিত চাহিদা অনুযায়ী পানি বিশুদ্ধ না হওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়। সব খরচ মিলিয়ে বিসিসির খরচ হবে আট কোটি টাকা। এই টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হলে তা দেওয়া হয়েছে। ফলে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরে এ দুটি প্ল্যান্ট চালু হবে।
বিসিসির প্রশাসক রায়হান কাওছার জানান, দুটি প্ল্যান্টের একটি অক্টোবরের শেষ নাগাদ এবং অপরটি নভেম্বরের মধ্যে চালু হবে। এগুলো সচল হলে প্রতিদিন ৩৬০ কোটি লিটার পানি নদী থেকে নিয়ে ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপরে চাপ অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে আরও একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
