Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ফরিদপুরের ঐতিহ্যের প্রতীক ময়েজ মঞ্জিল

নেতাজি থেকে শেরেবাংলা বহু কিংবদন্তির পদচারণা

জাহিদ রিপন

জাহিদ রিপন

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নেতাজি থেকে শেরেবাংলা বহু কিংবদন্তির পদচারণা

ফরিদপুরের কমলাপুরে প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো ইতিহাসের সাক্ষী ময়েজ মঞ্জিল জমিদার বাড়ি। ১৮৮৪ সালে জমিদার চৌধুরী ময়েজউদ্দিন বিশ্বাসের হাতে নির্মিত এই প্রাসাদ ছিল একসময় রাজনীতিকদের মিলনমেলা। এই বাড়িতে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ উপমহাদেশের খ্যাতিমান রাজনীতিকরা। এখনো দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর থাকে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা।

এই বাড়ি থেকে দীর্ঘদিন রাজনীতি চালিয়ে গেছেন চৌধুরী ময়েজউদ্দিন বিশ্বাসের নাতি চৌধুরী মোহন মিয়ার ছেলে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। তিনি বিএনপি থেকে একাধিকবারের মন্ত্রী ছিলেন। সবশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে তার মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ ফরিদপুর সদর আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও এই বাড়ি থেকে তার সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

জানা যায়, চৌধুরী ময়েজউদ্দিন বিশ্বাস ৩০ বিঘা জমিতে ১১ লাখ রুপি (তৎকালীন) ব্যয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেন। এই ব্যয় জমিদার পরিবারের বার্ষিক আয় থেকে করা হয়। বাড়ি তৈরির সব ইস্পাতের ভিম আনা হয়েছিল যুক্তরাজ্য থেকে। চৌধুরী ময়েজউদ্দিন নিজেই এ বাড়ির নকশা করেন। তারপর মার্টিন কোম্পানিকে কাজের দায়িত্ব দেন। মূল ভবনের আয়তন প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুট। এতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯১৬ সালে সংস্কার করা হয়। তখন মূল ভবনের দ্বিতীয়তলার সামনে কিছু কক্ষ যোগ করা হয়। ভবনটি উজ্জ্বল সাদা রংয়ের। এখানে রয়েছে মনোরম ফুল ও ফলের বাগান। ভবনের পশ্চিম-উত্তর পাশে রয়েছে ময়েজ মঞ্জিল জামে মসজিদ। তার পাশেই রয়েছে চৌধুরী ময়েজউদ্দিন বিশ্বাসের কবর।

ময়েজ মঞ্জিলে ব্রিটিশ ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। এর মধ্যে ছিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ এবং অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সভা। সেইসঙ্গে অল ইন্ডিয়া লিটারেটি কনফারেন্স, অল ইন্ডিয়া মোশন পিকচারস কনফারেন্স, এডুকেশন পলিসি কনফারেন্স, অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালিস্ট মুসলিম কনফারেন্স এবং বেঙ্গল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ফেয়ারও এখানে অনুষ্ঠিত হত।

একসময় রাজনীতিকদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ময়েজ মঞ্জিল। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, চিত্তরঞ্জন দাস, খাজা নাজিম উদ্দিন, স্যার মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খানসহ অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ এই বাড়িতে আসেন। এছাড়া এই বাড়ি পরিদর্শন করেন কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ নাথ ঠাকুর, সরোজিনী নাইডু, মহাত্মা গান্ধী এবং ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন, অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুরসহ অনেক বড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও। ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে পাকিস্তানের কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীও এ বাড়িতে এসেছিলেন।

চৌধুরী ময়েজউদ্দিন বিশ্বাসের জন্ম ১৮৪০ সালে, মৃত্যু ২৩ ডিসেম্বর ১৯২৩ সালে। তিনি ছিলেন ফরিদপুরের প্রধান জমিদার। তার তিন ছেলে চৌধুরী আবদুল্লাহ জাহেরউদ্দীন (লাল মিয়া), ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া) ও এনায়েত হোসেন চৌধুরী (তারা মিয়া) ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।

সম্প্রতি মাদারীপুর থেকে ময়েজ মঞ্জিল দেখতে আসা স্কুলছাত্র মো. ইসমাইল বলে, এখানে চৌধুরী ময়েজউদ্দিনসহ তার স্বজনদের কবর ও মসজিদ রয়েছে। ইতিহাস জানতে বাড়িটি দেখতে এসেছি। বেশ ভালো লাগছে।

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী জিয়াসমিন বলেন, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এই বাড়িটির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাড়িটি দেখতে এসে অনেক ইতিহাস জানতে পারছি।

এ বিষয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ যুগান্তরকে বলেন, এ বাড়িতে থেকেই আমার পূর্বপুরুষরা রাজনীতি করে গেছেন। আমার বাবা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচিত এমপি এবং কয়েকবারের মন্ত্রী ছিলেন। আমি তার আদর্শে রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে রয়েছি। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসনে বিএনপির থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম