জিয়ৎ কুণ্ডের পানিতে নব জীবন পেতেন মৃত সৈন্য!
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুন্ড্রনগর খ্যাত বগুড়ার শিবগঞ্জের ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়। বাংলার এই প্রাচীন রাজধানী ঘিরে রয়েছে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তারই একটি-জিয়ৎ কুণ্ড বা জিয়ৎ কূপ। রহস্যময় এই কূপ নিয়ে রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন নানা গল্প-জনশ্রুতি। কথিত আছে, এই কূপের পানি পান করে নব জীবন পেতেন মৃত সৈন্যরা। এজন্য স্থানীয়ভাবে এটি ‘অমর কূপ’ নামেও পরিচিত। কূপটি দেখতে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটক সেখানে ভিড় করেন।
জিয়ৎ কুণ্ডের নির্মাণকাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। তবে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, রাজা পরশুরামের শাসনামলে এ কূপটি খনন করা হয়েছিল। অনেকে মনে করেন, জনগণের খাবার পানির উৎস হিসাবে রাজা কূপটি খনন করেছিলেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীতীরের কাছাকাছি জিয়ৎ কুণ্ড অবস্থিত। এ কূপের উপরিভাগের ব্যাস তিন দশমিক ৮৬ মিটার। কূপটি নিচের দিকে ক্রমশ ছোট। একটি চতুষ্কোণ গ্রানাইটের পাথর খণ্ড কূপের ভেতর উপরিভাগে পূর্বদিকে বসানো রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানি উত্তোলনের সুবিধার্থে এটি ব্যবহার করা হতো। কূপটির তলদেশ পর্যন্ত দুই সারিতে বেশকিছু পাথরের খণ্ড নির্মাণের সময়ই যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ পাথর দিয়ে কূপে ওঠানামা করা যায়।
মহাস্থানগড়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, সামসুল আলম প্রমুখ জানান, তারা তাদের বাবা-দাদার মুখে শুনেছেন, জিয়ৎ কূপটি একটি যাদুকরী কূপ ছিল। রাজা পরশুরাম যুদ্ধে তার আহত বা নিহত সৈন্যদের কূপে ফেলে দিতেন। তারা কূপের পানি পান করে সুস্থ বা জীবিত হতেন। এরপর কূপের ভেতরে দুপাশে বসানোর পাথরের ওপর পা দিয়ে তারা উপরে উঠে আসতেন। এরপর তারা আবার যুদ্ধে অংশ নিতেন। ওই সময় পরশুরামের সঙ্গে যুদ্ধ হয় মুসলিম ধর্ম প্রচারক হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী মাহীসাওয়ারের।
আহত-নিহত সৈন্যরা কথিত যাদুকরী ক্ষমতায় পুনরায় যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় শাহ সুলতান বলখীকে বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে। তিনি পরশুরামকে পরাজিত করতে স্রষ্টার সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর একটি ঈগলের মাধ্যমে জিয়ৎ কুণ্ডে এক টুকরো গরুর গোশত ফেলেন। ওই গোশত কূপে পড়ার পর পানির ঐশ্বরিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এটি সাধারণ কূপে পরিণত হয়। এতে পরশুরামের সৈন্যরা শাহ সুলতান বলখীর সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যান।
বগুড়ার ইতিহাস গবেষক ও প্রয়াত লেখক আবদুল মান্নান তার বইয়ে লিখেছেন, প্রাচীনকালে এটা একটা সাধারণ কূপ ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কূপ সম্পর্কে যে জনশ্রুতি রয়েছে, তা একেবারে ফেলেও দেওয়া যায় না।
মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, যেহেতু এখানে পুন্ড্রনগরী ছিল, সেহেতু এখানকার মানুষের পানি পানের জন্যই এই কূপটি খনন করা হয়েছিল। ইতিহাস, জনশ্রুতি আর রহস্য সবমিলিয়ে জিয়ৎ কুণ্ড আজও পুন্ড্রনগরের এক নীরব সাক্ষী।

