ডাক পেয়েছিলেন গুলশানে
উপদেষ্টার ভাই চাইছেন বিএনপির মনোনয়ন
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির লোগো
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের ছোট ভাই হেমায়েত উদ্দিন সোহরাব। এক সময়ের প্রভাবশালী ছাত্রদল নেতা সোহরাব মাঝে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। এই সময়টাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সংস্থায় চাকরি করেছেন তিনি।
বর্তমানে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) নির্বাচনি এলাকার নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। তিনি ছাড়াও এখানে দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মেসবাহউদ্দিন ফরহাদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. হেলালউদ্দিন এবং যুবদলের সাবেক নেতা আব্দুল খালেক।
সোহরাব ১৯৭৯ সালে ছিলেন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী থাকতেন এসএম হলে। ১৯৮১ সালে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক করা হয় তাকে। এরপর যুক্ত হন কৃষক দলের রাজনীতিতে। ১৯৯১ সালে গঠিত কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক হন তিনি। ছিলেন রাজধানীর পল্লবী ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি। এরপর অবশ্য আর সক্রিয়ভাবে ছিলেন না রাজনীতিতে।
হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহরাবের বড় ভাই এম সাখাওয়াত হোসেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌপরিবহণ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সোহরাবের এই মনোনয়ন চাওয়াকে অনেকেই দেখছেন উপদেষ্টার ভাইয়ের মনোনয়ন চাওয়া হিসাবে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণাও তাই। যদিও বিষয়টিকে সেভাবে দেখতে নারাজ সাখাওয়াত। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব পালন আর বিএনপির কাছে ছোট ভাইয়ের মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টিকে এক করে দেখা ঠিক না। সে একসময় ছাত্রদল করত। বিএনপির নানা পদে ছিল। তার দলের কাছে সে মনোনয়ন চাইতেই পারে। আমি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছি বলে আমার পরিবারের কেউ রাজনীতি বা অন্য কিছু করতে পারবে না, এমন তো কোনো বিধান নেই। তাছাড়া কেউ একজন মনোনয়ন চাইলেই যে তাকে তা দিয়ে দেওয়া হবে, বিশেষ করে বিএনপির মতো একটি দল কোনোরকম যাচাই বাছাই ছাড়াই যে মনোনয়ন দেবে এটা ভাবা ঠিক না। তার যোগ্যতা থাকলে সে মনোনয়ন পাবে আর না থাকলে পাবে না। এখানে আমাকে জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’
বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে হেমায়েত হোসেন সোহরাব বলেন, ‘বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে এই দলের সঙ্গে আছি। রুটি-রুজির প্রয়োজনে মাঝে কিছুদিন চাকরি করেছি। কিন্তু দল যেমন ছেড়ে যাইনি, তেমনি শহীদ জিয়ার নীতি আদর্শ থেকেও বিচ্যুত হইনি। বর্তমানে আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছি। সাধারণ জনগণের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায় আমার কোনো দুর্নাম নেই। মনোনয়ন পেলে আমি আমার এলাকার দুই উপজেলার মানুষের খাদেম হিসাবে কাজ করব।’ মনোনয়ন ইস্যুতে আপনার ভাইয়ের কোনোরকম অনুকম্পা কিংবা সহযোগিতা আশা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা কেন চাইব? আমার রাজনৈতিক ইতিহাসে যদি বিএনপি না থাকত, যদি বিএনপি না করতাম তাহলে এসব প্রশ্ন আসত। তাছাড়া ২৭ অক্টোবর গুলশানে বিএনপি কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় মনোনয়ন প্রার্থীদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন সেখানেও তো আমাকে ডাকা হয়েছে। দল যদি তার একজন কর্মী হিসাবে মনে না করত তাহলে তো সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেতাম না। আমি যেমন মনোনয়ন চাইছি, তেমনি দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব এমন প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছি।’
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘তিনি (সোহরাব) তো একসময় ছাত্রদল করতেন। বিএনপির নানা পদেও ছিলেন। দলের কাছে মনোনয়ন চাইতেই পারেন। বরিশাল-৪ আসনে তিনিসহ মোট ৬ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। বিএনপির মতো একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের এটাই তো সৌন্দর্য। বাংলাদেশের প্রতিটি আসনে এমপি হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক নেতা রয়েছে বিএনপির। সবাইকে তো মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত। আমরা কেবল একটি কথা জানি, মনোনয়ন যে-ই পাক, চূড়ান্ত লড়াইটা লড়তে হবে ধানের শীষের পক্ষে। সেই মোহনায় একইধারায় মিলবে সবাই।’
