Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজশাহীর ৪৭ ইউনিয়ন অতি উচ্চ পানি সংকট এলাকা

১১ নির্দেশনাসহ পানি আইন কার্যকরের নির্দেশ * জনগোষ্ঠীর খাবার পানি ছাড়া পানি উত্তোলন বন্ধ থাকবে

আনু মোস্তফা

আনু মোস্তফা

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহীর ৪৭ ইউনিয়ন অতি উচ্চ পানি সংকট এলাকা

বৃহত্তর রাজশাহীর তিন জেলার ২৫টি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়নকে সরকারিভাবে ‘অতি উচ্চ পানি সংকট এলাকা’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মাঠ গবেষণা উপাত্তের ভিত্তিতে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। জারিকৃত সরকারি নির্দেশিকায় খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫টি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়নকে উপদ্রুত এলাকা চিহ্নিত করে এসব এলাকাকে দেশের অতি উচ্চ পানি সংকট এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এসব উপদ্রুত এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ১১টি নির্দেশনা পরিপালনের কথা বলা হয়েছে। এসব এলাকায় পানি আইন অনুযায়ী অধীনস্থ সংস্থাসহ পানি উত্তোলন ও ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে। কেউ এই আইন লঙ্ঘন করে নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, পানি বিক্রি ও বিতরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। বিশেষ করে উপদ্রুত এলাকায় হাজারও গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচকাজে কৃষকের কাছে পানি বিক্রি ও বিতরণকারী বৃহৎ সংস্থা-বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এলাকাগুলোতে আর গভীর নলকূপ স্থাপন না করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত গভীর নলকূপ ও সেমি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের আর কোনো অনুমতি না দিতেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা সেচ কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওয়ারপোর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (ওয়ারপো) দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও আশপাশের জেলাগুলোর ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নিয়ে বিশদ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ২৫ আগস্ট রাজধানীর গ্রিন রোডের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কার্যালয়ে জাতীয় পানিসম্পদ পরিষদের নির্বাহী কমিটির ১৮তম এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ওয়ারপোর মাঠ গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সভায় পানিসম্পদ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ওয়ারপোর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রকৌশল) জাহিদ হোসেন পানিসম্পদ নীতিমালা ২০১৮ কার্যকরের বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তা অনুমোদন করা হয়। ওয়ারপো কর্মকর্তা সরেজমিন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে সভাকে জানান, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লালমাটির উঁচু ভূমি বরেন্দ্র অঞ্চলের ২৫টি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানিস্তর এতটাই নিচে নেমেছে যে, এখন গভীর নলকূপেও আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিকট ভবিষ্যতে অঞ্চলটি মরুকরণ প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে। খরা মৌসুমে এলাকাগুলোতে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি অঞ্চলটিতে পানি আইন-২০২৩ এর ১৭ ধারা কার্যকর জরুরি হয়ে পড়েছে। সভায় পানি আইন কার্যকরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় রাজশাহী অঞ্চলের ২৫ উপজেলাকে অতি উচ্চ পানি সংকট এলাকা ঘোষণা করে সেসব এলাকায় পানি আইন কার্যকরসহ ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে।

ওয়ারপো সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের অতি উচ্চ পানি সংকট ঘোষিত ২৫টি উপজেলার মধ্যে তীব্র পানি সংকটাপন্ন উপজেলাগুলো হলো-রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, নাচোল, গোমস্তাপুর ও শিবগঞ্জ এবং নওগাঁ জেলার পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা, বদলগাছি, নিয়ামতপুর ও মান্দা। এ তিন জেলার ২৫টি উপজেলার ২১৫টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৯১১টি মৌজার সাড়ে ৫ হাজার গ্রাম পানি সংকটের উচ্চঝুঁকিতে পড়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৫০৩টি মৌজাকে অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপদ্রুত এলাকাগুলোর ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৮৭ লাখের বেশি।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আশির দশক থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরাপ্রবণ এসব জেলায় ১৫ হাজার ৮৬৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। দ্রুত পানিস্তর নেমে যাওয়ায় তিন জেলার ২৫টি উপজেলার অর্ধেকের বেশি গভীর নলকূপ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এছাড়া গত ২০ বছরে বিএমডিএ ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে ২০ হাজারের বেশি ডিপ ও সেমি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে, যারা আইন লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়ত ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে চলেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. আবুল কাসেম বলেন, ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে কয়েক বছর ধরে বিএমডিএ ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস ও অবকাঠামো সম্প্রসারণ করে চলেছে। আমরা ইতোমধ্যে ফসল আবাদকে শ্রেণিকরণ করেছি। পুরোপুরি সেচনির্ভর বোরো ধান আবাদের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। বেশি পানি লাগে এমন ফসল আমরা আবাদ না করতে কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করছি। সবচেয়ে বড় কথা ২০১২ সাল থেকে নতুন কোনো গভীর নলকূপ স্থাপন করেনি বিএমডিএ। তবে বিএমডিএর অধিভুক্ত এলাকায় উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদনে হাজারও প্রাইভেট গভীর নলকূপ স্থাপন করে নির্বিচারে ভূগর্ভের পানি তোলা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে পানি আইন কার্যকর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা নিতে পারে উপজেলা সেচ কমিটি এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম