বরিশালে বিএনপির মনোনয়ন
মাঠ ছাড়ছেন না বঞ্চিত নেতারা
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তফশিল ঘোষণার আগে নির্বাচনি মাঠ ছাড়ছেন না বরিশালের বেশ কয়েকটি আসনের মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতারা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থানের জানান দিতে চান। বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ-সদস্য মতিউর রহমান অন্য দল অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার মতো বিদ্রোহী না হলেও অন্যরা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন।
৪ নভেম্বর বরিশাল অঞ্চলের ১৬টি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি পাঁচটিতে নাম ঘোষণা করা হয়নি। একক প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর অন্যরা (বঞ্চিতরা) মাঠ ছাড়বেন বলে ভাবা হলেও বাস্তবে উলটো ঘটনা ঘটছে। মাঠ ছাড়া তো দূরের কথা, অনেকে জোরেশোরে প্রচারে নেমেছেন। দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে তারা নতুন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তফশিল ঘোষণা অথবা দলের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত মনোনয়নের অঘোষিত লড়াইয়ে তারা থাকতে চান। মনোনয়ন প্রাপ্তদের তুলনায় তাদের অবস্থান অনেক বেশি ভালো বলে তারা প্রমাণ করতে চান।
মাঠ না ছাড়ার এমন অবস্থানে সবার আগে আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মতিউর রহমান। বরগুনা-১ আসনে তিনি মনোনয়ন পাননি। যুগান্তরকে মতিউর রহমান বলেন, বরগুনা সদরের চেয়ে আমতলী উপজেলা ও তালতলী উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। তিনি বলেন, আগে এ আসন জিতে বিএনপিকে দিয়েছিলাম। অথচ দল এখন আমাকে মূল্যায়ন করছে না। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে অন্য কোনো দলের ব্যানারে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব। কারণ দুই উপজেলার মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চাওয়া ব্যর্থ হতে দেব না। এ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন।
এদিকে, মতিউরের মতো বিদ্রোহের ঘোষণা না দিলেও মাঠে থাকার কথা বলেছেন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। টানা ৪০ বছর ধরে জনগণ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে থাকার কথা উল্লেখ করে সোবাহান বলেন, মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তো কিছুই বলছি না। তফসিল ঘোষণার দেড় মাস বাকি। এর আগে কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। শেষ পর্যন্ত না দেখে মাঠ ছাড়ব কেন? এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ-সদস্য জহিরুদ্দিন স্বপন।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. দুলাল হোসেন বলেন, এলাকায় যা-ই করি না কেন তা তো দলের পক্ষে করছি। এরপর দল আমার পক্ষে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা হবে আমার পরম সৌভাগ্যের।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ-সদস্য ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেসবাহউদ্দিন ফরহাদ বলেন, মহাসচিব তো স্পষ্ট করে বলেছেন এ তালিকা চূড়ান্ত নয়। পরিবর্তন হতে পারে। তাই তফশিল ঘোষণা ও প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি না দেওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান।
ঝালকাঠী-২ (সদর-নলছিটি) আসনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু। ওমরাহ হজে সৌদি আরবে থাকা নান্নু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। রাজপথে যারা ছিলেন তারাই নির্বাচন করবেন।’ যুগান্তরকে মোবাইল ফোনে নান্নু মনোনয়নের লড়াইয়ে থাকার কথা জানিয়েছেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ-সদস্য ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো।
স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না দিলেও নির্র্বাচনি মাঠে আছেন পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনের মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা মাহমুদ হোসাইন ভিপি মাহমুদ। যুগান্তরকে তিনি বলেন, দলীয় আনুগত্যের বাইরে যাব না। এলাকায় ধানের শীষের প্রচার আগেও চালিয়েছি আগামীতেও চালাব। একই আসনের মনোনয়নবঞ্চিত ফখরুল আলম বলেন, মাঠ ছেড়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। এখানে ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুমন মঞ্জুরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত এআরএম মামুন বলেন, যা-ই করি না কেন তা দলের জন্যই করছি। মনোনয়ন পাইনি বলে এলাকা ছেড়ে চলে যাব-এমনটা ভাবা ঠিক নয়। আমি মঠবাড়িয়াতেই আছি এবং ধানের শীষ তথা দলের পক্ষে কাজ করছি। তফশিল ঘোষণা পর্যন্ত মনোনয়ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি আমরা বা কেন মাঠ ছেড়ে চলে যাব? তবে দলের সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। এ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল।
মনোনয়নবঞ্চিতদের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বিএনপির কর্মী হিসাবে আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলা। অন্যদেরও এটাই করা উচিত। সবার উচিত ধানের শীষের পক্ষে কাজ করা। কেন না আমাদের নেতা শুরু থেকে বলছেন-আগামী নির্বাচন খুব একটা সহজ হবে না। তাই কোনো কিছুই যেন দলের বিপক্ষে না যায়।

