Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজশাহীতে খেজুর রস সংগ্রহ শুরু

দুইশ কোটি টাকার গুড় বিক্রির সম্ভাবনা

উৎপাদনের লক্ষ্য ১০ হাজার টন

তানজিমুল হক

তানজিমুল হক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুইশ কোটি টাকার গুড় বিক্রির সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

কার্তিক প্রায় শেষ পর্যায়ে। কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। ইতোমধ্যেই রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছ থেকে স্বল্পপরিসরে শুরু হয়েছে রস সংগ্রহ। আর এ রস থেকে তৈরি হচ্ছে রাজশাহীর সুস্বাদু গুড়। কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে জেলায় দুইশ কোটি টাকার খেজুরের গুড় বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ১০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে চাঙা হয়ে উঠবে রাজশাহীর অর্থনীতি। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে অর্ধলক্ষ মানুষের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলায় গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ১৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রস ও গুড় থেকে ১৪১ কোটি ৮২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। চলতি বছরে গুড় উৎপাদন এবং বিক্রির সম্ভাবনা আরও বেড়েছে।

খেজুরের গুড়ের জন্য দেশব্যাপী বিখ্যাত রাজশাহী এবং যশোর অঞ্চল। রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গাছ রয়েছে দুর্গাপুর, বাঘা, পুঠিয়া এবং চারঘাট উপজেলায়। গুড়ের জন্য এরই মধ্যে এ উপজেলাগুলো সুখ্যাতি পেয়েছে। রাজশাহীর প্রায় ২৮ হাজার পরিবারের সংসার চলছে খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করে। ৫৪৩ হেক্টর জায়গাজুড়ে রয়েছে খেজুর গাছ।

জেলায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৩টি। রাজশাহীতে খেজুরশিল্পের সঙ্গে ৪৯ হাজার ৭১১ জন চাষি সম্পৃক্ত। এছাড়া ব্যবসায়ী আছেন ৬৪৪ জন এবং আড়ত আছে ৯০টি। জেলায় সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড় উৎপাদিত হয় বাঘায়।

এ উপজেলার আড়ানি পৌরসভা সদরের চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার প্রায় ৭০টি খেজুর গাছ রয়েছে। স্থানীয় আড়ানি বাজারে গুড় বিক্রি করি। পাশাপাশি অনলাইনে সারা দেশে ভেজালমুক্ত খাঁটি খেজুর গুড় সরবরাহ করি। প্রতিবছরের মতো এবারও অনলাইনে গুড় বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছি।

ইতোমধ্যে রস থেকে স্বল্পপরিসরে গুড় তৈরি শুরু হয়েছে।

বাঘার তেঁতুলিয়া গ্রামের গাছি আবুল কালাম বলেন, আমার ৯০টি গাছের সঙ্গে আশপাশের কয়েকজন মালিকের কাছ থেকে আরও ৮০টি গাছ ইজারা নিয়েছি। প্রতিটি গাছের জন্য মালিককে দিতে হবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এসব গাছ থেকে রস আহরণ শুরু করেছি। শীত জেঁকে বসলে একটি পরিণত খেজুর গাছ থেকে দিনে ৪ থেকে ১০ লিটার রস পাওয়া যায়। গত শীত মৌসুমে গাছের রস থেকে গুড় তৈরি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এছাড়া আমার এখানে ৪৫ জন মানুষ কাজ করেন।

দুর্গাপুর উপজেলার আমগাছি গ্রামের গাছি আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রায় চার মাস গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। একেকজন গাছি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে পারেন। গাছ পরিচর্যা এবং রস সংগ্রহের জন্য গাছের মালিক আমাদের প্রতিদিন ৩০০ টাকা পারিশ্রমিক দেন।

জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর, ঝলমলিয়া এবং বাঘা উপজেলা সদরে সপ্তাহে দুদিন খেজুর গুড়ের বড় হাট বসে। এ তিনটি হাটেই সবচেয়ে বেশি গুড় বিক্রি করেন গাছিরা। এখানকার কারিগরদের দানা গুড় এবং পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় চাহিদাও রয়েছে বেশি।

বাঘার মেসার্স আপেল অ্যাগ্রোর মালিক আপেল হোসেন বলেন, সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার বাঘায় গুড়ের হাট বসে। শীতের সময় প্রতি হাটে শতাধিক টন গুড় বেচাকেনা হয়। ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ গুড় যায়।

পুঠিয়ার পিএস অনলাইন মার্কেটের স্বত্বাধিকারী পরিনা বলেন, সবেমাত্র গুড় বিক্রি শুরু হয়েছে। আমি এখনো শুরু করিনি। কারণ ঠান্ডা যত পড়বে, গুড়ের স্বাদও বাড়তে থাকবে। আমি অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশেই গুড় সরবরাহ করি। তবে ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং সিলেটে গুড়ের চাহিদা বেশি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ছয় থেকে সাত বছর বয়সের মধ্যে রস দেওয়া শুরু করে খেজুর গাছ। একটি গাছ ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত রস দেয়। রস সংগ্রহের উপযোগী করতে কার্তিকের শুরু থেকেই গাছিরা খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খেজুরের গুড়কে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় দুইশ কোটি টাকা বাণিজ্য হবে বলে আশা করছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম