কিশোরগঞ্জ-৬
পলাতক পাপনের আসনে বিএনপির শরীফুল আলম
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে পলাতক পাপনের এলাকায় বিএনপি থেকে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকার নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত, আনন্দিত। যদিও এই আসনে তার সঙ্গে নিজ দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। মনোনয়ন পাওয়ার পর ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনটি জেলার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। সেটা তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে। ২০০৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে তার আসনে উপনির্বাচন হয়। তখন তার ছেলে নাজমুল হাসান পাপন উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য হন। উপনির্বাচনে পাপনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা শরীফুল আলম। সেই থেকে তিনি তিনবার পাপনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।
এর আগে শরীফুল আলম ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোট ডাকাতির কারণে বিজয়ী হতে পারেননি। এর মধ্যে জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তিনি ২০০৮ সালে একবার এবং তার ছেলে সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ২০০৯ ও ২০১৮ সালে দুইবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০০৯ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি বলে দলের নেতাদের দাবি। এ কারণে তিনি পরাজিত হন।
আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে এবার তিনি এই ভিআইপি আসনে আবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে তার দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দলে কোনোরকম কোন্দলও নেই। শরীফুল আলম বিগত ২০ বছর যাবত এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। দলকে চাঙা রাখতে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি নির্যাতিত ও জুলুমের শিকার ছিলেন। গত ১৫ বছরে তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ এলাকায় মোট ৮৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। এর পরও তিনি দল ও মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মামলায় কারাগারে গেলে তাদের তদারকিসহ তাদের পাশে ছিলেন। ফলে তিনি ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছেন। এবারের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ থাকবে না বলে তিনিই এই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী। ভোটাররা তা-ই মনে করছেন। নেতাকর্মীদের ধারণা আগামী নির্বাচনে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শরীফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর এলাকায় হলেও তিনি এখন ভৈরবকে প্রাধান্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। কারণ কুলিয়ারচর থেকে ভৈরবে ৮৫ হাজার ভোট বেশি। গত কয়েক দিন ধরে তিনি একাধিক সভা করেছেন ভৈরব-কুলিয়ারচরে। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে।
তবে এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হতে পারেন মাওলানা কবির হোসাইন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভৈরবে জামায়াতের একটি সভায় তার নাম ঘোষণা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও জামায়াতে ইসলামী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে কবির হোসাইন চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন আশা নিয়ে এলাকায় প্রচারণা করে যাচ্ছেন বলে জানান। যদি কবির হোসাইন চূড়ান্ত মনোনয়ন পান তবে শরীফুল আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তিনি। অপরদিকে অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্র হিসাবে এখনো কারও নাম শোনা যায়নি।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মৌলানা কবির হোসাইন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে দল থেকে আমি মনোনয়ন পাব গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এক বছর যাবত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, গত এক বছরে আমি ৭০ হাজার লোকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছি, দোয়া চেয়েছি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন-এমনটাই তার দাবি।
ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শরীফুল আলম কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা বিএনপির সভাপতি। বিগত ১৫ বছর তিনি মামলা হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েও দল ও মানুষের সেবা করে গেছেন। আমাদের এলাকায় দলে কোনো কোন্দল নেই। আমরা একযোগে কাজ করছি। মানুষ তাকে ভালোবাসে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
কুলিয়ারচর বিএনপির সভাপতি নুরুল মিল্লাদ বলেন, শরীফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সময়ও শরীফুল আলম আমাদের এলাকা থেকে পাপনের চেয়ে পাঁচ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আর ভৈরবে ভোট ডাকাতি করে আ.লীগ প্রার্থী পাপন তার বাবা জিল্লুর রহমানের প্রভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তার বিজয় অবশ্যই হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী মো. শরীফুল আলম বলেন, আমার আসনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি আসন। এই আসনে আমি তিনবার নির্বাচন করেছি। প্রতিটি সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হয়নি। ভোট ডাকাতি করে পাপন তার বাবা জিল্লুর রহমানের প্রভাব ও শেখ হাসিনার আত্মীয়তার সুযোগ গ্রহণ করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। গত ২০ বছর যাবত আমি আমার নেতাকর্মীসহ জনগণের সেবা করেছি। গত ১৫ বছরে বিগত সরকার আমার বিরুদ্ধে ৮৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমি বারবার কারাবরণ করেছি, নির্যাতিত হয়েছি। এলাকাবাসী আমাকে ভালোবাসে, তাই জনগণের সেবার জন্য সংসদ-সদস্য হতে চাই। দল আমাকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে, তাই আমি আমার নেতা তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলে আমি অবশ্যই বিজয়ী হব।
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ২৪ হাজার। এর মধ্যে ভৈরব উপজেলায় ভোটার দুই লাখ ৫৫ হাজার ও কুলিয়ারচর উপজেলায় এক লাখ ৬৯ হাজার।
