Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী শিবগঞ্জের ভাসুবিহার

মো. নাজমুল হুদা নাসিম

মো. নাজমুল হুদা নাসিম

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী শিবগঞ্জের ভাসুবিহার

বগুড়ার শিবগঞ্জের ভাসুবিহার দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। স্থানীয়দের কাছে নরপতি রাজার ধাপ নামে পরিচিত। প্রত্নস্থলটি মূলত অষ্টম শতকের বৌদ্ধবিহার। ব্রিটিশ শাসনামলে এটিকে ভুশ্বুবিহার বলা হতো। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ৭০০ বৌদ্ধভিক্ষু ধর্মশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন এখানে। এটি এখনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে। প্রতিদিন এখানে হাজারো পর্যটক ভিড় করেন।

এলাকার প্রবীণদের ভাষ্য ও ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে নাগর নদের তীরে ভাসুবিহার। বগুড়া শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ৩০-৪০ টাকা ভাড়ায় ভাসুবিহারে যাওয়া যায়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এসেছিলেন। তার ভ্রমণ বিবরণীতে তিনি এটিকে ‘পো-শি-পো’ বা বিশ্ববিহার নামে উল্লেখ করেছেন। এটি বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর ১৯৭৩-৭৪ সালে ভাসুবিহারটির প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করে। পরবর্তী দুই মৌসুম তা অব্যাহত থাকে। খননে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরের স্থাপত্যিক কাঠামোসহ প্রচুর প্রত্নবস্তু উন্মোচিত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ, কক্ষগুলোর সামনে চতুর্পার্শ্বে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ব বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশপথ রয়েছে। বৃহদাকার বিহারটির ভূমি পরিকল্পনা ও স্থাপত্য কৌশল প্রথমটির অনুরূপ। এর পরিমাপ পূর্ব-পশ্চিমে ৫৬ এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার। এর চার বাহুতে ৩০টি ভিক্ষুকক্ষ এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশপথ অবস্থিত। বিহারের অদূরে উত্তরমুখী মন্দিরটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৩৮ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২৭ মিটার। মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বর্গাকার মণ্ডপ। এর চতুর্দিকে ধাপে ধাপে উন্নীত প্রদক্ষিণ পথ। উৎখননে প্রাপ্ত প্রায় ৮০০ প্রত্নবস্তুর মধ্যে ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, পোড়া মাটির ফলক এবং পোড়া মাটির সিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সংগৃহীত হয়েছে মূল্যবান পাথরের গুটিকা, পেরেক, মাটির গুটিকা, নকশা করা ইট, মাটির প্রদীপ, দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এবং প্রচুর মৃৎপাত্রের টুকরা। মূর্তিগুলোর মধ্যে বুদ্ধ, ধ্যানীবুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব এবং বোধিশক্তি উল্লেখযোগ্য। প্রাপ্ত মূর্তির দীর্ঘ হালকাপাতলা শরীর, ক্ষীণ কটি, প্রশস্ত বুক এবং মার্জিত অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পাল যুগের ধ্রুপদি শিল্পকলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বিহারটিতে মূল তিনটি স্থাপত্য ছিল। এর মধ্যে দুটি বৌদ্ধদের ধ্যানের জন্য ব্যবহার করছিলেন এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিল। আর অন্যটি ছিল প্রার্থনার জন্য।

এছাড়াও খননকালে ২৫০টির বেশি অক্ষর খোদিত সিল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে এ পর্যন্ত ১শর বেশির পাঠোদ্ধার করা হয়েছে। ভাসুবিহারে ইট অলংকরণে পদ্মের পাপড়ি এবং ধাপ-পিরামিড বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। ভাসুবিহারে এসে মূর্তির দেখা না মিললেও পর্যটকরা ঘুরে দেখেন বিহার আর মন্দিরের অস্তিত্ব।

ভাসুবিহার পরিদর্শনে আসা ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, ছাত্র মিজানুর রহমান, শিক্ষক ফারজানা খানম জানান, ভাসুবিহারের আরও সংস্কার ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এখান থেকে সেসব প্রত্নসম্পদ হারিয়ে গেছে, তা উদ্ধার ও প্রদর্শন করা উচিত। বিহার এলাকায় টুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত, আশপাশে থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা করলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা তাদের বাপ-দাদার কাছে ভাসুবিহারের গল্প শুনেছেন। এটি নরপতির রাজার ধাপ বলে পরিচিত। তারা দুই ভাই ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তারা কোথায় গেছেন, কেউ জানে না। এই বিহার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ প্রফুল্ল চাকির জন্মভিটা। এটি অবিভক্ত পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর স্মৃতিবিজড়িত জায়গা।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম