Logo
Logo
×

শেষ পাতা

১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন

১৩ নভেম্বর : নিরাপত্তার চাদরে রাজধানী

সিরাজুল ইসলাম

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

১৩ নভেম্বর : নিরাপত্তার চাদরে রাজধানী

আগামী ১৩ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণকে ঘিরে উত্তেজনা অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে পুরো রাজধানী ঢাকাকে। আটটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এসব সেক্টরে মোতায়েন করা হয়েছে ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য। প্রণয়ন করা হয়েছে মোবাইল প্যাট্রোল, ফুট প্যাট্রোল ও তদারকি ব্যবস্থাপনা। ৬৬ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে রাত্রিকালীন তদারকি কর্মকর্তা হিসাবে। তারা সহকারী কমিশনার (এসি) থেকে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এছাড়া সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন ডিএমপির কমিশনারসহ ছয়জন অতিরিক্ত কমিশনার। এ পরিকল্পনা ২০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক নিরাপত্তা নির্দেশনায় রোববার বলা হয়েছে, প্রতিটি থানায় কমপক্ষে পাঁচটি মোবাইল প্যাট্রোল টিম নিয়োজিত করতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে পর্যাপ্ত ফুট প্যাট্রোলিং ব্যবস্থার। অফিসাররা বেতারযন্ত্রসহ ডিউটিতে মোতায়েন হবেন। ফোর্স মোতায়েন হবেন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, রিফ্ল্যেটিভ ভেস্ট, সোল্ডার সিগন্যাল, টর্চলাইট, বাঁশি এবং অস্ত্রসহ। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় যুক্ত পুলিশ সদস্যরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সুবিধার্থে বডিওর্ন ক্যামেরা এবং ফ্লিকার লাইটসহ দায়িত্ব পালন করবেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ব্যাগ এবং গাড়িসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি চেক করার সময় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। অপারেশন-প্ল্যান সফল করার জন্য ফোর্স ও অফিসারদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

ব্যাকআপ পরিবহণ টিম প্রস্তুত রাখার কথা উল্লেখ করে কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্থানে ফোর্স আক্রান্ত হলে আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে অফিসার ও ফোর্সরা অস্ত্র-সরঞ্জমাদিসহ নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিতে পারবেন। তল্লাশির কারণে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনারদের অবহিত করবে আইএডি বিভাগ। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং মনিটরিংসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন ডিএমপির সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট।

সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এবং যুগ্ম কমিশনার (অফারেশন্স)।

সূত্র জানায়, নিরাপত্তা পরিকল্পনার এক নম্বর সেক্টর হলো রমনা এলাকা। এই এলাকার যেসব স্থানকে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-মৎস্যভবন, কার্পেট গলি, সেগুনবাগিচা আবাসিক এলাকা, বিজয়নগর, কাকরাইল, কাকরাইল চার্চ, শান্তিনগর, মৌচাক-মগবাজার মোড়, বেইলি রোড, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং, ডিবি ক্রসিং, পুলিশ ভবন, কাকরাইল মসজিদ, বারডেম হাসপাতাল, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, ইস্কাটন রোড, হলি ফ্যামিলি ক্রসিং, ওয়্যারলেস গেট, কমিউনিটি হাসপাতাল, মালিবাগ রেলক্রসিং, ফরচুন শপিংমল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দোয়েল চত্বর, রমনা কালী মন্দির, শহীদ মিনার, চানখাঁরপুল, টিএসসি, বুয়েট, ফুলার রোড, পলাশী মোড়, নীলক্ষেত, নগরভবন, পুলিশ সদর দপ্তর, হাইকোর্ট, সচিবালয়, পিজি হাসপাতাল, মিরপুর রোড, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার প্রভৃতি।

ডিএমপির নিরাপত্তা পরিকল্পনার দুই নম্বর সেক্টর হলো মতিঝিল এলাকা। এই এলাকার যেসব স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-পুলিশ হাসপাতাল, কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, কালভার্ট রোড, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, শাপলা চত্বর, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার, আইডিয়াল কলেজ, বিআরটিসি বাস কাউন্টার, এজিবি কলোনি, টিএন্ডটি কলোনি, রাজারবাগ, কমলাপুর আইসিটি, খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টার, খিলগাঁও রেলগেট, আনসার সদর দপ্তর, রামপুরা বনশ্রী ‘এফ’ ব্লক থেকে ‘এইচ’ ব্লক পর্যন্ত, নন্দীপাড়া ব্রিজ থেকে শেকের জায়গা পর্যন্ত, মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল, গ্রিন মডেল টাউন, আবুল হোটেল ক্রসিং, তালতলা মার্কেট, র‌্যাব ক্যাম্প, রামপুরা টিভি সেন্টার প্রভৃতি।

তিন নম্বর সেক্টরের যেসব এলাকা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো-রথখোলা মোড়, কাপ্তান বাজার, জয়কালী মন্দির, বঙ্গভবন দক্ষিণ গেট, ইত্তেফাক মোড়, হাটখোলা রোড, আরকে মিশন রোড, র‌্যাব অফিস, টিপু সুলতান রোড, জুরাইন রেলগেট, ব্যাংক কলোনি, এক্সপ্রেসওয়ে (ধোলাইপাড়-পোস্তগোলা ব্রিজ), সাইনবোর্ড, কুতুবখালী, শনির আখড়া, সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ, ডেমরা ব্রিজ, ডেমরা বাজার, স্টাফ কোয়ার্টার, আমুলিয়া মডেল টাউন, জুরাইন মেডিকেল রোড, রায়েরবাগ, বউবাজার, মাতুয়াইল মেডিকেল, সাদ্দাম মার্কেট, সুইপার কলোনি প্রভৃতি।

চার নম্বর সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে আছে ইংলিশ রোড, সদরঘাট, আদালত প্রাঙ্গণ, ওয়াইজঘাট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বাবুবাজার ব্রিজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজিয়েট স্কুল, লোহারপুল, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বাহাদুর শাহ পার্ক, ডা. ফজলে রাব্বি হল, নাজিমউদ্দিন রোড, হোসনি দালান, নিউমার্কেট ক্রসিং, আজিমপুর মেটার্নিটি হাসপাতাল, লালবাগ কেল্লা, নিউমার্কেট থানা ক্রসিং, ইডেন মহিলা কলেজ, মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা প্রভৃতি।

পাঁচ নম্বর সেক্টরের যেসব স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো-৬০ ফিট রোড, আনসার ক্যাম্প, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী এসকে এস টাওয়ার, শাহআলী মার্কেট, কাজীপাড়া, দিয়াবাড়ী, চিড়িয়াখানা, কমার্স কলেজ, সাইনপুকুর, মাজার রোড, রূপনগর আবাসিক মোড়, ভাষানটেক বাজার, ভাষানটেক বস্তি প্রভৃতি। এছাড়া ৬, ৭ এবং ৮ নম্বর সেক্টর হিসাবে যথাক্রমে অপরাধ বিভাগের তেজগাঁও, গুলশান এবং উত্তরার উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব স্থানের মধ্যে আছে কৃষি মার্কেট, ঢাকা উদ্যান, শিয়া মসজিদ, কাওরান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনের এলাকা, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, এফডিসি গেট, রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, গুলশান কালাচাঁদপুর, ডিআইটি প্রজেক্ট, বাড্ডা থানা এলাকা, ইসিবি চত্বর, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকা, ৩০০ ফুট এলাকা, বনানী কবরস্থান রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা জে ব্লক, উত্তরা রাজলক্ষ্মী, আব্দুল্লাপুর ফ্লাইওভার, বিমানবন্দর গোলচত্বর, আশকোনা রেলগেট প্রভৃতি।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, ১৩ নভেম্বর ঘিরে অওয়ামী লীগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা সে বিষয়ে তৎপর আছি। আশা করছি, তারা তেমন কিছু করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করেছি। সে অনুযায়ী, আমাদের অফিসার ও ফোর্সরা মাঠে আছে। তিনি আরও বলেন, বাসে আগুন দিয়ে এবং ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে চাচ্ছে। যারাই অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদের সবাইকে আমরা আইনের অওতায় আনছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম