Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আদেশের ব্যাখ্যা চায় এনসিপি

দুদল পেল এক চামচ করে, জনগণের প্লেট খালি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুদল পেল এক চামচ করে, জনগণের প্লেট খালি

বাংলামোটরে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: যুগান্তর

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, সরকার জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দিয়েছে। এখানে দরদ দেখিয়েছে, কিন্তু কোনো দায় দেখায়নি। অর্থাৎ আপনার যখন কোথাও কম্পেশন থাকবে, আপনার রেসপনসিবিলিটি নিতে হবে। সরকার এখানে তরকারির বাটি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক চামচ, এক চামচ করে ভাগ করে দিয়েছে। বিএনপিকে এক চামচ দিয়েছে, জামায়াতকে এক চামচ দিয়েছে-কিন্তু জনগণের প্লেট, ওটা খালি হয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এ সময় পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ আদেশের আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা চায় এনসিপি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা কী চেয়েছিলাম? এই গণ-অভ্যুত্থানের পরে ৭২-এর যে ফ্যাসিবাদী সংবিধান, সেই সাংবিধানিক কাঠামোকে পরিবর্তন করে জনগণের একটা কাঠামো নিয়ে আসতে। যাতে নতুন করে কেউ হাসিনার মতো আবিষ্কৃত না হয়ে জনগণের ওপর গুলি চালাতে না পারে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, এক হাসিনা যাওয়ার পরে আরেক হাসিনা আসার জন্য আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে শিক্ষা নিয়ে সেখানে কিন্তু সাইন করতে চাইনি। আমরা বলেছিলাম, আপনি যে আদেশটা দেবেন, এর ড্রাফটটা আমাদের আগে দেখাতে হবে। কিন্তু তা না দেখিয়ে নিজস্ব ক্ষমতা বলে একটা আদেশ জারি করেছেন। যিনি ড্রাফটটা করেছেন, আমি তার নাম উচ্চারণ করব না। তার মনে যদি বাংলাদেশের জনগণ থাকত, এ ধরনের ড্রাফট উনি তৈরি করতেন না। এ ধরনের আদেশ তিনি তৈরি করতেন না। এটা একটা জনবিরোধী আদেশ হয়েছে। উনার মাথায় ছিল বিএনপির প্রেসক্রিপশন। কারা এই আদেশটা দিয়েছে, এটা বাংলাদেশের সব মানুষ জানে। উনি গত গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে এই পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানকে কীভাবে মুজিবীয় সংবিধানের ভেতরে ঢুকানো যায় এই প্রচেষ্টাই করে যাচ্ছেন। উনি আমাদের আইন উপদেষ্টা হিসাবে আছেন। উনি যদি জনগণকে মাথায় রাখতেন, এই ধরনের আদেশের ড্রাফট করতেন না।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সংস্কার কমিশনে গিয়ে গুন্ডামি করল। সেখানে যখন সবাই, সব দল একটা বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে-সেখানে তারা ভেটো দিল। বলল, আমরা এটা মানব না। খেলায় আছি কিন্তু তালগাছটা আমার। সংস্কার কমিশন আসলে বিপদে পড়েছে। তারপরও দেশের স্বার্থে ওই দলের নোট অব ডিসেন্ট রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়েছি। বর্তমান যে পরিস্থিতিতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়েছে, তারা বলেছিল একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে। আমরা বলেছি এটার আদেশ দিতে হবে। সরকার আদেশ দিয়েছে, এটা আমরা পেয়েছি। আমরা জানিয়েছিলাম যে ড. ইউনূসকে দিতে হবে, সাহাবুদ্দিন এটা দিতে পারবে না। আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি পেয়েছি কিন্তু নৈতিক ভিত্তির জায়গাটা আমরা পাইনি। এই জুলাই সনদের শুরুতে সরকার গণ-অভ্যুত্থান শব্দটা উচ্চারণ করেছে। সার্বভৌম অভিপ্রায়ের যে প্রকাশ সেটা জনগণ থেকে নিয়েছে। কিন্তু সেই সার্বভৌম অভিপ্রায়ের যে সাইন, যার মাধ্যমে দিয়েছে, উনি কিন্তু জনগণের ওপর কয়েকদিন আগে গুলি চালিয়েছিলেন। সরকার এখানে আইনি ভিত্তি দিল। কিন্তু এই জুলাই সনদকে সে অপবিত্র করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা খেয়াল করেছি। আদেশ এমনভাবে জারি করা হয়েছে যে, এটিকে ক্ষমতাবানদের নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সরকার অস্পষ্টতা দূর করে সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সুনির্দিষ্টভাবে তা উল্লেখ করবে। কিন্তু এমন অস্পষ্টতা রয়ে গেছে যে, এটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হবে কিনা-তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

সদস্য সচিব বলেন, গণভোটকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে সংস্কারের সব বিষয়কে একভাবে না দেখে আলাদা হিসাবে দেখা হয়েছে। কিছু সংস্কারকে কম গুরুত্বপূর্ণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনাধীন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নানা পক্ষ নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) জুলাই সনদ দেখতে চান। তারা ক্ষমতা পেলে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের নিজেদের মতো নোট অব ডিসেন্টকে প্রধান করে তোলার সুযোগ থাকবে। ফলে গণভোটের মাধ্যমে সুরাহা হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কীভাবে হবে-এখানে কি নোট অব ডিসেন্ট থাকবে নাকি থাকবে না, সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই।

আখতার হোসেন বলেন, গণভোটে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলতে কোনগুলোকে বোঝানো হয়েছে? এখানে বাক্যের মধ্যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ঐকমত্য কমিশনে আমরা সবাই দুদককে সাংধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের কথা বলেছি। এটিও কি অন্তর্ভুক্ত থাকবে-তা স্পষ্ট নয়। আবার উচ্চকক্ষে কারা প্রতিনিধি যাবেন, তাদের তালিকা প্রকাশ না করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরের নির্বাচন থেকে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকবে কিনা, এটি আদেশে ঠিক উপেক্ষিত থেকে গেছে। আমরা ১০ শতাংশ নারী থাকার বিষয়ে আলোচনা করেছি। ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেটির বিষয়েও স্পষ্ট উল্লেখ নেই।

গণভোটের অনেক বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের আস্থা ভোট ও অর্থনৈতিক বিল বাদে বাকিগুলো সংশোধনীর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছিলাম, কিন্তু এটিকে এমনভাবে রাখা হলো যে, রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের মতো অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

এনসিপি নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকতে পারবেন কিনা-যদি গণভোটের মাধ্যমে জনগণ তার মতামত জানিয়ে দেয়, তাহলে কেন রাজনৈতিক দলকে নিজেদের মতো সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু এই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে গুরুত্বের বিচার ও অগুরুত্বের বিচারের মধ্যে দিয়ে আংশিক বাস্তবায়ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আখতার হোসেন বলেন, আগে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের আওতায় চলে আসার বিষয় ছিল। বাস্তবায়ন আদেশে ১৮০ দিনের কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তারা যদি ব্যর্থও হয়, তাহলে তার ফলাফল কী হবে, এগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা এখানে রয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম