১২ বছর পর চালু হচ্ছে যাত্রীসেবা
ঢাকা-করাচি রুটে সপ্তাহে ৩ দিন চলবে বিমান
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিমান বাংলাদেশের অন্যতম লাভজনক আন্তর্জাতিক রুট ছিল ঢাকা-করাচি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারর ২০১২ সালে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আকস্মিক বন্ধ করে দেয় লাভজনক এ রুটটি। এতে করে বড় ধাক্কা লাগে দুই দেশের সরাসরি যোগাযোগ ও বাণিজ্যে। দীর্ঘ ১২ বছর পর সেই রুটই আবার খুলতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ পুনরায় চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চূড়ান্ত আলোচনায় অংশ নিতে এ মাসেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ক্যাপ্টেন একেএম আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা আছে। যাতে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্রিকোয়েন্সি বজায় থাকে। সপ্তাহে তিনটির কম ফ্লাইটে পর্যাপ্ত ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে না, ফলে যাত্রী চাহিদা পূরণে সমস্যা হতে পারে।
আমরা রুটটির সামগ্রিক সম্ভাবনা ও খরচ-সুবিধার মূল্যায়ন (ইভালুয়েশন রিপোর্ট) করছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ, মার্কেটিং, প্ল্যানিং ও অপারেশনস-যৌথভাবে এই মূল্যায়ন তৈরি করছে। রিপোর্টটি ইতিবাচক হলে বোর্ড ফ্লাইট চালু করবে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাস থেকেই হয়তো চালু করা সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, ২০১২ সালে ঢাকা-করাচি রুটটি বন্ধ করে দিলে দুই দেশের যাত্রীরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দর দিয়ে ট্রানজিট নিয়ে করাচিতে যাতায়াত করে আসছিলেন। ঢাকা থেকে আকাশপথে করাচির দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৩৭০ কিলোমিটার। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় এয়ারলাইন্সগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ট্রানজিট নিয়ে যেতে হয় পাকিস্তানে। ট্রানজিট ফ্লাইটের কারণে ২০১৯ সালের ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার ভাড়া বর্তমানে গড়ে লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। ঢাকা থেকে পাকিস্তানের করাচি যেতে গড়ে আট থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। কিছু এয়ারলাইন্সে ১৮ থেকে ২২ ঘণ্টাও লেগে যায়। এই রুটে ইকোনমি ক্লাসে রিটার্নসহ ভাড়া পড়ে ৮৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে ঢাকা থেকে সরাসরি করাচির ফ্লাইট চালু হলে ভাড়া কমবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ইতিহাসে করাচি ছিল অন্যতম লাভজনক আন্তর্জাতিক রুট। এক সময় করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদে নিয়মিত ফ্লাইট চললেও যাত্রীপ্রবাহের কারণে করাচিই ছিল সবচেয়ে ব্যস্ত গন্তব্য। প্রায় ১২ বছর পর সেই রুটে ফের চাকা ঘোরানোর ফলে দুই দেশের জনগণের যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক নগরী করাচির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ পুনঃস্থাপন হলে আঞ্চলিক বাণিজ্য, শ্রমবাজার, কার্গো পরিবহণ এবং যাত্রীসেবায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। করাচি একসময় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল।
মোখলেসুর রহমান নামের একজন নিয়মিত যাত্রী যুগান্তরকে বলেন, ব্যবসার প্রয়োজনে আমাকে প্রায়ই করাচি যেতে হয়। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় ভিন্ন ভিন্ন দেশে ট্রানজিট নিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে আমার মতো অনেকেই আছে যারা পাকিস্তানে বিভিন্ন বায়ারের কাছে যেতে হয়। সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে বিড়ম্বনা কমে আসবে।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, পাকিস্তান সফরে বিমান উপদেষ্টা দেশটির সিভিল এভিয়েশন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং করাচির বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, কার্গো পরিবহণ, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধিই হবে আলোচনার মূল বিষয়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) নিশ্চিত করেছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা-করাচি রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। যাত্রী চাহিদা ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকের সঙ্গে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (সিসিএ) মহাপরিচালক নাদির শাফি দারের বৈঠকে ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। তার ভাষায়, করাচি রুট চালু হলে বাংলাদেশের পোশাক, ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণশিল্পের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠন ও ব্যবসায়ী মহলও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে আমদানি-রপ্তানির খরচ কমবে। ট্রেড মিশনের কার্যক্রম আরও সক্রিয় হবে এবং দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহকে করাচি-ঢাকা-করাচি রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

