Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বামপন্থিদের বৃহত্তর জোট আত্মপ্রকাশ এ মাসেই

২৯ নভেম্বর ঢাকায় কনভেনশন থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা * ৩০০ আসনে ভোটের প্রস্তুতি

শেখ মামুনুর রশীদ

শেখ মামুনুর রশীদ

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বামপন্থিদের বৃহত্তর জোট আত্মপ্রকাশ এ মাসেই

যুক্তফ্রন্টের আদলে বাম ঘরানার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে নতুন একটি জোট গঠন হতে পারে শিগগিরই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর এই জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে। ‘একসঙ্গে আন্দোলন এবং নির্বাচন’-এমন লক্ষ্য নিয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই জোট ৩০০ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি জনজীবনের সংকট মোকাবিলার ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার কথাও রয়েছে তাদের। এজন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে বামপন্থি দলগুলো। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসাবে জোটের সম্ভাব্য শরিক দলগুলো এরই মধ্যে নিজ নিজ দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বামপন্থিদের এই জোট গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ছয়টি বামদল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ বৃহত্তর এ জোট গঠনের মূল উদ্যোক্তা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ (মার্কসবাদী)।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠন নতুন এই জোটে শরিক হতে সম্মতি দিয়েছে। এর বাইরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বামপন্থিদের আরেকটি জোট ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র শরিক দলগুলোর সঙ্গেও জোট গঠন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার শরিক দলের মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব) এবং গণমুক্তি ইউনিয়ন।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন যুগান্তরকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে দক্ষিণপন্থি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। এ অবস্থায় বাম প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে এক মঞ্চে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। একসঙ্গে নির্বাচন ছাড়াও জনজীবনের সংকট নিয়ে রাজপথে তারা কথা বলবেন এই জোটের ব্যানারে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ যুগান্তরকে জানান, বিকল্প একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে যাচ্ছেন তারা। জোটের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টাও রয়েছে।

বামপন্থিদের বৃহত্তর জোটে সম্পৃক্ত হতে যাওয়া বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাম প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নব্য ফ্যাসিবাদ এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর পুনরুত্থান ঠেকাতে এ প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। এ বিবেচনা থেকেই বৃহত্তর ঐক্য প্রশ্নে তারা একমত হয়েছেন বলে জানান।

তবে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এ প্রসঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, কেবল বামপন্থি কয়েকটি দল মিলে একটি জোট গঠন করলে তা সমাজে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। এখানে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে, ৭১-কে ধারণ করে এমন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং শক্তিগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তিনি আরও বলেন, বামের বাইরেও যারা আছে, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি যারা আছে, তাদের নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠন করলে আমরা এই জোটে সম্পৃক্ত হতে পারি। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, যেহেতু আমরা সেই অর্থে বামপন্থি রাজনৈতিক দল নয়, তাই আপাতত আমরা এই জোট গঠনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।

নয়া এই জোটের উদ্যোক্তারা জানান, গত ৮-৯ মাস ধরে তারা একে অন্যের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে নতুন জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেকেই এই জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। বামপন্থি কয়েকজন নেতা জানান, গত ১৫ নভেম্বর রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘কনভেনশনে’র মাধ্যমে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওইদিন অন্য একটি সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ ডাকায় কনভেনশন স্থগিত করা হয়। এ অবস্থায় চলতি মাসের ২৯ নভেম্বর কনভেনশন করে জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হবে। ওইদিন দিনব্যাপী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে নতুন এই জোটের নাম কী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ কিংবা ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে জোটের যাত্রা শুরু করা যায় কিনা, এমন প্রস্তাব দিয়েছেন কোনো কোনো দলের নেতা। কেউ কেউ বলছেন, ১৯৫৪ সালে যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়েছিল, তার সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে জোটের নাম কী হবে কিংবা কোন কাঠামোয় তা চলবে, সেটা সবার মতামত নিয়েই ঠিক করা উচিত। এ কারণে কনভেনশনেই নাম ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি একটি সনদ চূড়ান্ত করার দায়িত্বও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কনভেনশনের হাতে। এই সনদের নাম হবে ‘জনতার সনদ’। অনেকটা জুলাই জাতীয় সনদের অনুরূপ ‘জনতার সনদ’ নিয়ে মাঠে নামবে বামপন্থিদের এই জোট। একসঙ্গে আন্দোলন এবং নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে জনজীবনের বিভিন্ন সংকট নিরসনের দাবিতে তারা মাঠে সোচ্চার থাকবেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম