রাজশাহী ওয়াসার ১২৩ পাম্পঘর
কাজ না করেই বেতন নিচ্ছেন অপারেটররা
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মহানগরীতে পানি সরবরাহের জন্য রাজশাহী ওয়াসার রয়েছে ১২৩টি পাম্প ঘর। দুই বছর আগে চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি পাম্পকে অটোমেশন করা হয়েছে। ফলে প্রযুক্তির কল্যাণে ওয়াসা কার্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় পাম্পঘরের সব কার্যক্রম। পানি সরবরাহের পাওয়ার সুইচ চালু ও বন্ধ করা এবং পানির লেভেল ও পাম্পের ত্রুটি সারানো যায় দূরে বসেই। আর এ সুযোগ নিয়ে পাম্প ঘরে থাকছেন না এবং নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করছেন না অপারেটররা। ১৫৩ জন অপারেটরকে বছরে তিন কোটি টাকা বেতন দিতে হচ্ছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, মূলত পাম্পঘরের নিরাপত্তার জন্য তাদের রাখা হয়েছে। তারা যদি কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন না করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১২৩টি পাম্প পরিচালনায় রয়েছেন দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১৫৩ জন অপারেটর। সকাল ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দুই শিফটে অপারেটররা দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিমাসে তাদের বেতন বাবদ ওয়াসাকে গুনতে হচ্ছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। ফলে বছরে বেতন বাবদ ব্যয় হয় তিন কোটি টাকা। তবে অটোমেশন পদ্ধতিতে পাম্পের সুইচ চালু এবং বন্ধ করার কারণে অপারটেররা পাম্পঘরে থাকেন না। ঘর থাকে তালাবদ্ধ। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে কর্মস্থলে না থেকে, কাজ না করেই অপারেটররা বেতন নিচ্ছেন।
অপারেটরদের পাম্প ঘরে না থাকার বিষয়টি আংশিক স্বীকার করে ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা পাম্পঘরে থাকেন না, এ অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। তবে পাম্প মেশিন চালু এবং বন্ধ রাখার জন্য অপারেটরদের রাখা হয়নি। পাম্প ঘরের মূল্যবান যন্ত্রপাতি সুরক্ষার দায়িত্ব তারা পালন করেন।
রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, দুবছর আগে চার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাম্পগুলোতে রাশিয়া ও ভারত থেকে আনা সুইচ ডিভাইস লাগানো হয়। এরপর থেকে পানির সুইচ চালু ও বন্ধ ওয়াসা কার্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ওয়াসায় বর্তমানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অস্থায়ী কর্মচারী আছেন ১৯৩ জন। এর বেশির ভাগই পাম্প অপারেটর। দক্ষ কর্মচারীরা দিনে ৬০০ ও অদক্ষ কর্মচারীরা ৫০০ টাকা মজুরি পান। সূত্র বলছে, কাজ না থাকলেও এই টাকা ব্যয় করছে ওয়াসা।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতেই গড়ে তিন থেকে চারটি করে পাম্পঘর রয়েছে। এই পাম্পঘরগুলোতে দুই শিফটে কাজ করেন অপারেটররা। সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর ওয়াসার সচিব সুবর্ণা রানী সাহা অপারেটরদের সময়সূচির বিষয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করেছেন। আদেশে পাম্প অপারেটরদের প্রতি ১৫ দিন পরপর শিফট পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। দুই শিফটের প্রত্যেকটিতে একজন করে অপারেটরের দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল ও দুপুরের শিফটে অপারেটররা পাম্পঘরে থাকেন না। অধিকাংশ পাম্পঘর থাকে তালাবদ্ধ। মহানগরীর ছোট বনগ্রাম পার্কের পাশের পাম্পঘরের দায়িত্বে রয়েছেন মুলতান আলী নামের একজন অপারেটর। বৃহস্পতিবার তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পাম্পঘরটি ছিল তালাবদ্ধ। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছোট একটা কাজে বাইরে ছিলাম। এ কারণে পাম্পঘর তালাবদ্ধ ছিল। অন্য সময়ে সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করি। মহানগরীর বিসিক শিল্প এলাকার পাম্পঘরের অপারেটর বাকি বিল্লাহ। বুধবার দুপুরে তাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি এবং পাম্পঘর তালাবদ্ধ ছিল। তিনি বলেন, আমি সব সময় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি। লাঞ্চের জন্য বাইরে ছিলাম। এভাবে অন্তত ১০টি পাম্পঘরে সরেজমিন গেলে অপারেটরদের পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ বলেন, অটোমেশনের পাশাপাশি আমরা পাম্প অপারেটরদেরও রেখেছি, যেন কখনো ডিভাইস কাজ না করলে ম্যানুয়ালি পাম্প চালানো যায়। পাম্পঘরে অপারেটরদের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছে। ঘরে পাম্প মেশিন এবং প্যানেল বোর্ড ছাড়াও অনেক মূল্যবান সরঞ্জাম রয়েছে। প্রতিনিয়ত কেবল চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অপারেটরদের প্রয়োজন হয়। তবে যারা অনুপস্থিত থাকছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালন না করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপারেটরদের কর্মস্থলে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুর রহমান বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে পাম্পঘরগুলো আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করা হবে। অপারেটররা উপস্থিত না থাকলে তাদের মজুরি কাটা হবে।

