Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ক্ষমতায় গেলে বিএনপিসহ সবাইকে নিয়েই দেশ চালাব: জামায়াত আমির

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ক্ষমতায় গেলে বিএনপিসহ সবাইকে নিয়েই দেশ চালাব: জামায়াত আমির

রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর যুব-ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে বক্তৃতা করছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান -যুগান্তর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে বলে উল্লেখ করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। জাতিকে যারা বিভক্ত করে, তারা জাতির দুশমন। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, জনগণের সম্পদ চুরি ও দুর্নীতির মতো অভিজ্ঞতা তার দলের নেই। শুক্রবার সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় জামায়াত মনোনীত ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত এক যুব-ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের কর্মসূচি সমর্থন করে, যাদের বক্তব্যে আস্থা রাখে, তাদের বাছাই করে নেবে। আমরা তাদের অভিনন্দন জানানোর জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমাদের দলকে জনগণ বেছে নেয়, আমরা সব রাজনৈতিক দল এবং শক্তিকে আহ্বান জানাব।

আপনারাও আমাদের সমর্থন দেবেন, অভিনন্দন জানাবেন এবং আপনাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা দেশ গড়ব ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, কেউ কেউ ইতোমধ্যে বলেছেন, যদি তারা নির্বাচিত হন তাহলে তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়বেন (জামায়াতে ইসলামী ছাড়া)। আমরা তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলব, জনগণ যদি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের নির্বাচিত করে ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদেরও বাদ দেব না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশ গড়ব।

জাতিকে বিভক্তকারী গোষ্ঠীকে ‘জাতির দুশমন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। আমরা ওই দুশমনের রাষ্ট্রের চাষ আর বাংলাদেশে হতে দেব না। তিনি পুরোনো রাজনীতির সমালোচনা করে নতুন ফর্মুলায় দেশ গড়ার ঘোষণা দেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা স্বীকার করি আমাদের অভিজ্ঞতা নেই, জনগণের সম্পদ চুরি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। দলীয় কর্মীদের দিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিজ্ঞতা নেই। সবপর্যায়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দুর্নীতি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। তিনি বর্তমান ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নেয়নি; বরং এটি এখন বাংলাদেশে ‘ফেসি’ হিসাবে রয়ে গেছে। তিনি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারী এবং মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানির মতো ফ্যাসিবাদীদের পাঁচটি লক্ষণ চিহ্নিত করে বলেন, এসব লক্ষণ আজকে বিদ্যমান।

জামায়াত আমির বলেন, পুরোনো ফর্মুলায় আর চলবে না। নতুন বাংলাদেশ চলবে নতুন ফর্মুলায়। জনগণের সরকার কেমন হবে তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, প্রত্যেক নিয়োজিত ব্যক্তি নিজের জন্য চিন্তা করার আগে জনগণের স্বার্থ নিয়ে ভাববে। যে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না। যে সরকার দুর্নীতিতে জড়াবে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিপুল পরিমাণ রক্ত ও জীবন দিয়ে পরিবর্তন এলেও জনগণ স্বাধীনতার সত্যিকারের সুফল ভোগ করতে পারেনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমাদের মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ খনিজসম্পদ, সমুদ্রের নিচে অকল্পনীয় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারলাম না কেন?

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশ ছেড়ে পালায়নি। দেশের ভেতরে আমরা মোহাজির ছিলাম। দেশের মাটিকে কামড়ে ধরেছিলাম। বুকে জড়িয়ে এখানেই ছিলাম। জেল বরণ করেছি। জীবন দিয়েছি। কিন্তু দেশ ছেড়ে আমরা পালাইনি। কারণ আমরা এই দেশকে, এই মাটিকে, এই মানুষকে ভালোবাসি।

শপথ নিলেন আমিরে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ২০২৬-২৮ সাল পর্যন্ত কার্যকাল মেয়াদের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের অভ্যন্তরীণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাওলানা এটিএম মা’ছুম।

এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামুল বশির ও লে. জে. (অব.) হাসান সোহরাওয়ার্দী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইউসুফ আলী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের প্রমুখ।

জামায়াত নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুর রব।

শপথ গ্রহণ শেষে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আমাকে আমিরে জামায়াত নির্বাচিত করে আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন এ দায়িত্বের জন্য আমি মোটেও উপযুক্ত নই। আমি আপনাদের মতোই একজন। আমরা সম্মিলিতভাবে সংগঠন পরিচালনা করি। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমার ভাইদের সহযোগিতায় আমি দায়িত্ব পালন করে আসছি। নানা ভুলত্রুটি সত্ত্বেও আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এই ভুলত্রুটির জন্য আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমার কোনো ভুলত্রুটি দেখলে আপনারা সমালোচনা করবেন এবং সংশোধন করে দেবেন। আপনাদের সমালোচনা ও সংশোধন যাতে গ্রহণ করতে পারি আল্লাহ আমাকে সেই তাওফিক দান করুন।

তিনি বলেন, আমরা যাতে আগামীতে জাতীয় স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে পারি এবং জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সংবিধানে বর্ণিত জনগণের সব অধিকার আমরা যাতে নিশ্চিত করতে পারি সেজন্য ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার জন্য আমি জাতীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম