Logo
Logo
×

শেষ পাতা

টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে গতি নেই

পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কার আটকে যাওয়ার শঙ্কা

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কার আটকে যাওয়ার শঙ্কা

পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ আটকা পড়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে। সুপারিশও জমা দিয়েছে কমিটি কিন্তু বাস্তবায়নে গতি নেই। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সুপারিশ বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরির জন্য গঠিত কমিটি বদল করা ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চেষ্টা চলছে। তবে এ নিয়ে হতাশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের সরকারি পরিসংখ্যানের যে বদনাম আছে, সেটি যেমন ঘোচানো সম্ভব হতো, তেমনি জবাবদিহিমূলক শক্তিশালী পরিসংখ্যান কাঠামো গড়ে তোলা যেত। এদিকে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে বুধবার একটি স্মারকলিপি দিয়েছে পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যেই পরিসংখ্যান ব্যুরোতে কিছু সংস্কার আনা হয়েছে। তবে টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। আমরা তো একটি অধ্যাদেশ করে দিয়ে সংস্কার দিয়ে যেতে পারি। কিন্তু পরবর্তী সরকার এসে সেগুলো যদি অনুমোদন না করে তাহলে কিছুই করার থাকবে না।

সূত্র জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর খসড়া প্রতিবেদন দিয়েছিল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানে নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়। এরপর টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নের পথনকশা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য গত ২৯ অক্টোবর গঠন করা হয়েছিল চার সদস্যের একটি কমিটি। এর নেতৃত্বেও ছিলেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ১৮ নভেম্বর ওই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। ৭ সদস্যের পুনর্গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় বিবিএস’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। অন্য পাঁচ সদস্য করা হয়েছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের।

টাস্কফোর্স বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চাইলে সচিব আলেয়া আক্তার যুগান্তরকে বলেন, আমরা পরিকল্পনা উপদেষ্টা স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছি। তিনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। তবে এখন সময় অনেক কম থাকায় এসব সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা জানিনা। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সূত্র জানায়, দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় অতীতের দুর্নাম ঘোচাতে চেয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কেননা ভুয়া এবং জনতুষ্টির জন্য দেওয়া মিথ্যা পরিসংখ্যান দেশের প্রকৃত চিত্র আড়াল করে এবং সঠিক পরিকল্পনা তৈরির প্রধান অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে পরিসংখ্যান কাঠামো শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিক মানের করতে পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, টাস্কফোর্সের এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হওয়াটা জরুরি। তাহলে পরিসংখ্যান ব্যবস্থা অনেক উন্নত হতো। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিনের অনেক জটিলতার অবসান ঘটতো। আমরা চাই দ্রুত টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হোক। এটি বর্তমান সরকারের সময়েই করা উচিত। বিসিএস নন-ক্যাডার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দীন সরকার বলেন, আমরা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশ ‘স্বাধীন পরিকল্পনা কমিশন গঠন’, সেটি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। এরপর টাস্কফোর্সের যেসব সুপারিশ, সেগুলোও যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে মন্দের ভালো হবে। কিন্তু সেটিও যদি না হয়, তাহলে কিছুই হলো না। একটা বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

সূত্র জানায়, টাস্কফোর্স বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নাম বদলে ‘স্ট্যাটিসটিকস বাংলাদেশ (স্ট্যাট)’ এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের (বর্তমান ডিজি) পদ পরিবর্তন করে চিফ স্ট্যাটিসটিশিয়ান করাসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ দেয়। এছাড়া একটি কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এটির সদস্য সংখ্যা হবে ৭ জন। এই কাউন্সিল পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি পরিসংখ্যান ব্যুরোতে চিফ স্ট্যাটিসটিশিয়ানের নিয়োগসহ ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি দেখবে। এছাড়া ব্যয় নিরীক্ষা তদারক করবে। এটির নেতৃত্বে থাকবেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। টাস্ক ফোর্সের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্যের গড়মিল এবং যে কোনো তথ্য প্রকাশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। এজন্য পরিসংখ্যান আইন-২০১৩ সংশোধন করা হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, দীর্ঘস্থায়ী কর্মী নিয়োগের অপব্যবহার এবং সব দুর্বলতা দূর করতে সাংগঠনিক কর্তৃপক্ষকে ১৬টি শাখায় সম্প্রসারণ এবং ৪৩৭টি নতুন উপজেলা-স্তরের পদ তৈরি করতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম