মঞ্জু-আনিসের নেতৃত্বে নতুন জোট
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপি এবং ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশসহ ১৬টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে নতুন একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে। নয়া এই জোটের মূলমন্ত্র হবে- বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র এবং সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান।
উদ্যোক্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামকরণ করা হলেও আরও একাধিক নাম তাদের আলোচনায় আছে। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে বিষয়টি ঠিক করা হবে। এছাড়া জোট আত্মপ্রকাশের আগে অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। জোটের শরিকরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবেন-এমন লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছেন তারা। জোটের নির্বাচনি প্রতীক কী হবে-তা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় পার্টির একাংশ ছাড়াও জোটের অন্য শরিকদের মধ্যে আছে জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (মতিন), মুসলিম লীগের একাংশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির একাংশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশ, বাংলাদেশ ইসলামিক জোট, জাতীয় সংস্কার জোট, মানবাধিকার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশ, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, পিস অ্যালায়েন্স, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানীর একাংশ, বাংলাদেশ গণঅধিকার পার্টি, ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণতান্ত্রিক জোট বাংলাদেশ। পর্যায়ক্রমে নতুন এই জোটে আরও কয়েকটি দলের সম্পৃক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
জোটের অন্যতম প্রধান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি এর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ছিল। তিনি নিজেও ১৯৯৬ সালের সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি ছেড়ে জেপি নামে আলাদা দল গড়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ছিলেন। বিএনপির হয়ে রাজনীতি শুরু করা দেশের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের হয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে মন্ত্রী হন। ২০২৪ সালে হন বিরোধীদলীয় উপনেতা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে একই নামে দল গঠন করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
নবগঠিত জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির এই অংশের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির হয়ে একাধিকবার তিনিও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের কার্যালয়ে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন। মঙ্গলবার রাতে তারা গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে অবস্থিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এর আগে রোববার হাওলাদার টাওয়ারে দলগুলোর প্রথম মতবিনিময় সভা হয়। সেখানেই নতুন জোট গঠনের বিষয়ে একমত হন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘এটি শুধু একটি নির্বাচনি জোট নয়, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতেও জোটভুক্তরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কী আসবে না-আমরা এখনো জানি না। যদি অংশ নিতে না পারে তাদের ২৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। এখানে তৃতীয় ধারা তৈরি করার সুযোগ আছে। যারাই ক্ষমতায় আসুক একটা শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ আছে।’
নয়া জোটের মুখপাত্র এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে জোট ঘোষণা করা হবে। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট হবে, নাকি অন্য কোনো নাম হবে-তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের কাছে একাধিক নামের প্রস্তাব আছে। আলোচনা করে ঠিক করব।’ তিনি বলেন, ‘এই জোটের শরিকদলের সংখ্যা আরও বাড়বে। এজন্য অনেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।’ গঠন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত জনতা পার্টির মহাসচিব শওকত মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার আবার বৈঠক হবে। সেখানে সব ঠিক হবে।’
