কেশবপুরে যৌথবাহিনীর অভিযান
গ্রেফতার যুবদল নেতার মৃত্যু চিকিৎসাপত্রে ‘গণপিটুনি’
যশোর ব্যুরো ও কেশবপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বল
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যশোরের কেশবপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার যুবদলের এক নেতাকে কারাগারে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে শুক্রবার রাত ১১টায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া তার চিকিৎসাপত্রে লেখা ‘গণপিটুনি’।
ওই যুবদল নেতার নাম ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বল (৩৭)। তিনি আলতাপোল গ্রামের নাজির বিশ্বাসের ছেলে এবং পৌর যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক। তার বড়ভাই কেশবপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন বাবু অভিযোগ করেন, তার ভাইকে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি থেকে নিয়ে যায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা। তখন তার কাছে অস্ত্র বা মাদক কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরে জানতে পেরেছেন, তার কাছে ২০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মারধর করা হয়েছে। ফজরের আজান পর্যন্ত তার ওপর নির্মম নির্যাতন চলে। তাকে কোনো চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডা. হাসিবুর রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে কারারক্ষীরা মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনেন। পরে তার লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে উজ্জ্বলসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যরা হলেন-কেশবপুর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ ও তার ভাই আলম এবং নতুন মূলগ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে রাসেল। ওইসময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ধারালো অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার কেশবপুর থানার এসআই লিটনচন্দ্র দাস বলেছিলেন, আলমের কাছ থেকে একটি পিস্তল এবং অন্যদের কাছ থেকে মাদকসহ দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র ও মাদকসহ তিনটি মামলায় তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে একই থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় উজ্জ্বল মারা গেছেন, এমন খবর রাতে আমাকে টেক্সট করে জানান এক অফিসার। সেই টেক্সট সকালে দেখেছি। পরে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তাদের (চারজন) পুলিশি জিম্মায় দেওয়া হয়। পরে তাদের কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ। চিকিৎসক তখন কাউকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলেননি। আমরাও তাদের শরীরে কোনো কাটা-ছেঁড়া দেখিনি। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ বলেন, রাত সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে উজ্জ্বলসহ চারজনকে কারাগারে আনা হয়। সেখানে উজ্জ্বলের একটি চিকিৎসাপত্র ছিল। সেখানে লেখা ছিল ‘পাবলিক অ্যাসল্ট’। চিকিৎসাপত্র থাকায় আমরা তাকে কারাগারের হাসপাতাল ওয়ার্ডে পাঠাই। কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ঢলে পড়েন। তাকে পৌঁনে ১১টার দিকে আমরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদের (গ্রেফতাররা) কাছ থেকে জানতে পারি, বাইরে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, উজ্জ্বল আমাদের দলের কর্মী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ফ্যাসিবাদী জমানা আমরা পার করেছি। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশে সেই আগের মতো প্রক্রিয়া কেন চলবে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু এখনো কেন হেফাজতে একজন মানুষ এভাবে মারা যাবে।
