Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এক বছরের মেয়র, অবৈধ আয় শতকোটি টাকা

মাঝরাতে বাসার আসবাবপত্র সরালেন খোকন সেরনিয়াবাত

আকতার ফারুক শাহিন

আকতার ফারুক শাহিন

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাঝরাতে বাসার আসবাবপত্র সরালেন খোকন সেরনিয়াবাত

খোকন সেরনিয়াবাত। ফাইল ছবি

পালিয়ে যাওয়ার ১৫ মাস পর মধ্যরাতে বরিশাল নগরীর ভাড়া বাসা থেকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে তাকে বরিশালের মেয়র বানিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না থাকলেও শেখ পরিবারের সদস্য কোটায় নৌকার মনোনয়ন পান তিনি। ফ্যাসিস্ট পতনের একদিন আগে বরিশাল থেকে পালিয়ে যান খোকন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নগরীর কালু শাহ সড়কে থাকা ভাড়া বাসা থেকে সব মালামাল সরিয়ে নেন শেখ পরিবারের এই সদস্য। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে ওই বাসার ভাড়াও দিচ্ছিলেন না তিনি। মালামাল সরানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপির একটি গ্রুপ সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন পর্যন্ত মাত্র এক বছরে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে খোকন সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধে।

২০২৩ সালের আগে বরিশালের সাধারণ মানুষ খুব একটা চিনত না খোকন সেরনিয়াবাতকে। সম্পর্কে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুপাতো ভাই। যদিও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কখনোই দেখা যায়নি তাকে। তারপরও শেখ মুজিবের আপন ভাগ্নে আর শেখ হাসিনার ভাই হিসাবে পেয়ে যান মনোনয়ন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহর হাত থেকে নিয়ে নেন বরিশালের নিয়ন্ত্রণ। নগরীর দুটি বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে হাট-ঘাট-বাজার সবই চলে যায় তার দখলে। সেই সঙ্গে শুরু হয় খোকন ও তার অনুসারীদের বেপরোয়া চাঁদা আদায় আর দখলবাজি। লোক দেখানো ভোটে মেয়র হওয়ার পর হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। হাট-ঘাট-বাজার ইজারা, দুই বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদাবাজি, বরিশাল নগরীর উন্নয়নে বরাদ্দ হওয়া ৪শ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগবাঁটোয়ারা-এভাবে নানা খাতে মাত্র ১ বছরেই শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন বরিশালের তৎকালীন এই মেয়র। তার দুর্নীতির তদন্তে নামা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চিঠি দিয়েছে নগরভবনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের। জিজ্ঞাসাবাদ আর অনুসন্ধানও চালাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগ আমলে মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক স্টিভেডরের ব্যবসা করে খোকন আগেই হন শতকোটি টাকার মালিক। এসব টাকায় সম্পদ গড়েন বন্দরনগরী খুলনা ও রাজধানী ঢাকায়। নির্বাচনি হলফনামায় তার নিজের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে-ঢাকায় তার ৯টি ফ্ল্যাট, জমি এবং খুলনায় বিশাল বাড়িসহ অন্যান্য সম্পদের বর্ণনা। তার সম্পর্কে ভালো জানেন এমন অনেকেই বলেছেন, হলফনামায় উল্লেখিত সম্পদের চেয়ে প্রকৃতপক্ষে তার অনেক বেশি সম্পদ রয়েছে। তবে বরিশালে করেননি কিছুই। নির্বাচন করতে এসে প্রথমে নগরীর কালুশাহ সড়কে আলেকান্দা মসজিদসংলগ্ন একটি ভবনে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন খোকন। পরে গিয়ে ওঠেন একই সড়কে থাকা ‘করিম মঞ্জিল’ নামে অপর একটি ভবনে। জুলাই বিপ্লবের উত্তাল দিনগুলোতে বরিশালেই ছিলেন তিনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন ও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবহারে চালান সর্বোচ্চ চেষ্টা। গত বছরের ৪ আগস্ট গভীর রাতে সপরিবারে পালিয়ে যান বরিশাল থেকে। গত ১৫ মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন সেই ভাড়া বাসা থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির নজরদারি আর প্রচ্ছন্ন বাধার কারণে সফল হয়নি সেই চেষ্টা। অবশেষে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সরিয়ে নিয়েছেন ভাড়া বাসার মালামাল। এবার আর স্থানীয় বিএনপির সরাসরি কিংবা প্রচ্ছন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাকে।

খবর পেয়ে রাত আড়াইটায় কয়েকজন সংবাদকর্মী সেখানে গিয়ে দেখতে পান একটি বড় ও ছোট ট্রাকে উঠানো হচ্ছে মালামাল। ট্রাকের শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ‘মালামাল খুলনা যাবে। রুবেল স্যার সবকিছুর দেখভাল করছেন।’ এই রুবেল ছিলেন খোকনের ব্যক্তিগত সহকারী। তার বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। ধারণা করা হচ্ছে খুলনায় অবস্থানরত খোকনের শ্যালক মিঠুর বাসায় আপাতত রাখা হচ্ছে এসব মালামাল। বাড়ির কেয়ারটেকার রেজাউল করিম বলেন, এর আগেও কয়েকবার মালামাল নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বাধার কারণে পারেননি। এবার অবশ্য কেউ বাধা দেয়নি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম