Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পাঠ্যবইয়ে স্থান পেল শহীদ আনাসের চিঠি

হুমায়ুন কবির

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাঠ্যবইয়ে স্থান পেল শহীদ আনাসের চিঠি

ফাইল ছবি

আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে জুলাইয়ের শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠি। মা-বাবাকে নিয়ে আবেদনময়ী এক চিঠি লিখে জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিল সে। দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার মিছিলে গিয়ে ঘাতকের গুলিতে শহীদ হয়। তার সেই ছোট্ট বার্তা কাঁদিয়েছিল হাজারো মানুষকে। সেই চিঠি এবার অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের (সাহিত্য কণিকা) পেছনে প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যায় আনাস। একটি বুলেট তার বুকের বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

আনাস সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পড়ার টেবিলের ওপর মা-বাবাকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি লিখে বেরিয়ে যায়। ৫ আগস্ট আনাসের মা সকালের নাশতা আনতে ছোট ছেলেকে পাঠান তাকে ডাকতে। সে এসে বলে, ভাইয়া ঘরে নেই। আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি তৎক্ষণাৎ ছুটে যান আনাসের রুমে। ঘর খালি, হঠাৎ চোখে পড়ে আনাসের পড়ার টেবিলে থাকা একটি চিঠি।

আনাসের মা যুগান্তরকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে। আনাসের চিঠি পাঠ্যবইয়ে স্থান পাওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। এটা শুধু আনাসের চিঠি নয়, জুলাইয়ের শহীদ ও আহত সবার আকুতি। আনাসের যে চিঠি পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে : ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয়, সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী যুগান্তরকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অবদান তুলে ধরতে আমরা এই চিঠি বইয়ে দিয়েছি। শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশনায় আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। শাহরিয়ার খান আনাসের মতো শত শত জীবনের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি। এবারের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে পেছনের প্রচ্ছদে এই চিঠি ছাপানো হবে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, এদিকে আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের ভয়াবহ দুঃশাসন ও অর্থ পাচারের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার বিষয়ও রয়েছে পাঠ্যবইয়ে। এছাড়া খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব সরকার সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে স্থান পেয়েছে ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের অভূতপূর্ব গণজাগরণ, ১৯৭১ সালে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এবার ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান’ নামের নতুন অধ্যায়ে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বই থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম