Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ব্লক ব্যবহারের নির্দেশনা উপেক্ষা

চট্টগ্রামে ইট পোড়াতে উজাড় হচ্ছে বন, সাবাড় হচ্ছে পাহাড়

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে ইট পোড়াতে উজাড় হচ্ছে বন, সাবাড় হচ্ছে পাহাড়

ইট পোড়াতে উজাড় হচ্ছে বন, সাবাড় হচ্ছে পাহাড়। ফাইল ছবি

গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্বাসন এবং সরকারি বিভিন্ন ভবন নির্মাণকাজে ভাটায় পোড়ানো ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহারের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), সিটি করপোরেশনসহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্লক ব্যবহারের নির্দেশনা প্রতিপালনে গড়িমসি করছে। এদিকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ এবং সরকারি কাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার-দুই ক্ষেত্রেই উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবে সরকারি সংস্থাগুলো সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে তিন শতাধিক অবৈধ ও অননুমোদিত ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ, পাহাড়ের মাটি। নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও পুনর্বাসন এবং সরকারি ভবন নির্মাণে পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী ধীরে ধীরে পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ বা বৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত ছিল। এ লক্ষ্যে সহজশর্তে ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। সরকারি এই সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৮০০ ব্লক কারখানা গড়ে উঠেছে। যেখানে উৎপাদন হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইউনি ব্লক হলো ব্লকসহ নানা ধরনের ব্লক।

মূলত অবৈধ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মাধ্যমে বন উজাড় হচ্ছে। ইটভাটায় টপ সয়েল ব্যবহারের কারণে কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। পাহাড়ের মাটি সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের এই ক্ষতি রোধে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে কংক্রিট বা ইউনি ব্লক ব্যবহার এবং ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে হলো ব্লক ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছিল। সরকারি পর্যায়ে সড়ক ও ভবন নির্মাণে ব্লক ইট ব্যবহার ধাপে ধাপে শতভাগ নিশ্চিত করতে শুরু হয় প্রক্রিয়া। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠিও দেওয়া হয়। ‘গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্প’-এর ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিবেশবান্ধব ইউনি ব্লক দ্বারা সড়ক পুনর্বাসনের প্রাক্কলন প্রণয়ন ও প্রেরণ’ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান স্বাক্ষর করেন। ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখে ইস্যু করা এ সংক্রান্ত চিঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংস্থার দায়িত্বশীলদের কাছে পাঠানো হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দিয়েছেন আনিসুর রহমান। সরকারি কাজে ব্লক ইট ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ব্লক ইট এখন সহজলভ্য হয়েছে। শুরুতে সরকারি কাজে ৮-১০ ভাগ ব্লক ইট ব্যবহার হলেও এখন তা ২০-২৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে। তবে তা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কারণ ব্লক ইটের ব্যবহারে কাজের গুণগত মান, সৌন্দর্য ও পরিবেশ সব কিছুই ঠিক থাকে। অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধ হলে ব্লক ইটের ব্যবহার দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ সর্বশেষ ২৩ নভেম্বর প্রদত্ত এক রায়ে সব ধরনের অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ বা তার কম বেশি জরিমানা করছে। ভাটা মালিকরা জরিমানা দিয়ে আবার নতুন উদ্যমে চিমনি স্থাপন করে ভাটা চালু রাখছে। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই অবৈধ ইটভাটার রমরমা ব্যবসা চলছে বলে সূত্র অভিযোগ করেছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ৪১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদিত ইটভাটা রয়েছে মাত্র ১২০টি। সর্বোচ্চ ইটভাটা রয়েছে সাতকানিয়ায়, ৭০টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইটভাটা রয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়, ৬৯টি। এছাড়া ফটিকছড়িতে ৫৫টি, লোহাগাড়ায় ৪৮টি, চন্দনাইশে ৩২টি ইটভাটা রয়েছে। রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে বেশির ভাগ ইটভাটা পাহাড়ের পদদেশে। সাতকানিয়ার ইটভাটাগুলো গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে। চন্দনাইশেও পাহাড়ের পাদদেশে ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি কেটে ইট বানানো হয়। পাহাড়ের বন উজাড় করে ভাটায় পোড়ানো হয় কাঠ। সাতকানিয়ায় বেশির ভাগ ইটভাটা গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে। এসব ইটভাটায় কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ইট বানানো হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম