গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ
একসঙ্গে ৭৫ রাজাকারকে হত্যা করেন বোমা সিরাজ
তফাজ্জল হোসেন, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিরাজুল হক
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার পৌরশহরের ৭নং ওয়ার্ডের শিলাসী মহল্লার সিরাজুল হক ওরফে বোমা সিরাজ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সতেরো বছরের টগবগে তরুণ। নবম শ্রেণি পাশ করেই পাকিস্তান আর্মিতে চাকরি নেন। সেসময় দেশমাতৃকার টানে মায়ের অসুস্থতা দেখিয়ে চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসেন দেশে। ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান দেশ স্বাধিকার আন্দোলনে। তিনি একসঙ্গে ৭৫ জন রাজাকারকে হত্যা করেন।
নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের বেলুচিস্থানের কোয়েটার ট্রেনিং শেষ করে করাচির মালির ক্যান ক্যান্টনমেন্টে চাকরি করি। ১৯৭১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩ মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসি। ছুটি থাকাকালীন মাথায় চিন্তা এলো আর চাকরিতে যাব না। মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে এলাকার যুবক, ছাত্র, উৎসাহী জনতা নিয়ে ইসলামিয়া হাইস্কুল মাঠে ট্রেনিং শুরু করি। এরপর ১৭ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে পাকিস্তানি বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করে গফরগাঁও বাজারে। দলবল নিয়ে গফরগাঁও থানায় আক্রমণ করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এপ্রিলের শেষের দিকে ত্রিশাল, ভালুকা, গফরগাঁওয়ের ছাত্র-যুবক, জনতা নিয়ে ভালুকার মেজর আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে ১১নং সেক্টরের অধীনে মল্লিক বাড়ি নামক স্থানে হেডকোয়ার্টরে অবস্থান নিই সবাই।
জুলাই-আগস্টের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ভালুকা আক্রমণ করার জন্য যাওয়ার পথে ভাওয়ালিয়া বাজুবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীদের সঙ্গে দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে শহীদ হন আব্দুল মান্নান, আহত হন আফাজ উদ্দিন ভুঞা নামের একজন। আনুমানিক ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। আহত হয় দেড় শতাধিক।
বোমা সিরাজ বলেন, এরপর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মেজর আফসারের নির্দেশে ত্রিশালের কাশিগঞ্জ ও গফরগাঁওয়ের রসুলপুর ইউনিয়নের আমলিতলা এলাকায় বোমা মেরে পাকিস্তানি বাহিনীর ২টি ক্যাম্প দখল করি। ওই যুদ্ধে ২৫০ পাকিস্তানি সেনা, আনসার, মুজাহিদ, রাজাকার, আলসামস, আলবদর আত্মসমর্পণ করে। এ সময় যুদ্ধে শহীদ হন মমতাজ উদ্দিন। পরবর্তীকালে আমার দলসহ আগরতলা হাপানিয়া ক্যাম্প থেকে নবীনগর কশবা আলগীরচর হয়ে যুদ্ধে যাই।
সিরাজুল হক বলেন, একদিন মুক্তিযোদ্ধা বেলাল ভাই ও মেজর আফসার উদ্দিন নির্দেশ দিয়ে বললেন, বোমা সিরাজ অপারেশন ডাকবাংলোয়। কথা ও কাজ, নভেম্বরের মাঝামাঝি রাত ১০টার দিকে হামাগুড়ি দিয়ে ডাকবাংলো পাকিদের হেড কোয়ার্টরে আক্রমণ করি। কাশিগঞ্জের যুদ্ধে বোমা মেরে ৭৫ রাজাকারকে হত্যা করা হয় একসঙ্গে, ওটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ। বোমা ছুড়তে ছুড়তে একসময় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। সহকর্মীরা ভেবেছিল মারাই গেছে, হয়তো দেশের স্বাধীনতা দেখার জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা ১১নং সেক্টর কমান্ডার পরিচালক হামিদুল্লাহ খানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করি। ৯ ডিসেম্বর ভোরের সোনালি সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তির উল্লাসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। হানাদারমুক্ত হয় গফরগাঁও।
