স্মরণকালের সর্বোচ্চ ফোর্স মোতায়েন
ঢাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লন্ডনে ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমন উপলক্ষ্যে এদিন রাজধানী ঢাকায় ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয় স্মরণকালের সর্বোচ্চ ফোর্স। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেই মাঠে ছিলেন ৮ হাজার সদস্য। ছিলেন সেনাবাহিনীর দুই হাজার এবং বিজিবির পাঁচ শতাধিক সদস্য।
এছাড়া বিপুলসংখ্যক আনসার ও র্যাব সদস্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও ছিল পৃথক নিরাপত্তাব্যবস্থা। রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয় নিরাপত্তা ছক।
কেবল তিনশ ফিটের সংবর্ধনাস্থলই নয়, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় ও স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়। মোড়ে মোড়ে ছিল চেকপোস্ট। তল্লাশি করা হয় সন্দেহভাজন গাড়ি। নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশকিছু সড়কে যান চলাচল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও গুলশান এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাস্তায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা যায়নি। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে তারেক রহমানের গাড়িবহর এগিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এ সময় লাঠিচার্জের ঘটনাও ঘটে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে সব ফোর্স কাজ করেছে। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার সদস্যরা মাঠে ছিলেন। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা অনেক সমন্বয় সভা করেছি। ১০-১২ দিন ধরেই চলছিল সমন্বয় সভা। বুধবারও পুলিশ সদর দপ্তরে সমন্বয় সভা হয়েছে। এতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসারসহ সব নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ না করে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ছক বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছি। এ কারণেই এত বড় জমায়েতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। একেক সংস্থা একেকভাবে কাজ করলে সমন্বয়হীনতা দেখা দিত। পাশাপাশি গ্যাপ তৈরি হয়ে যেত। আর ওই গ্যাপ গলে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে যেতে পারত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট অন্য একটি ইউনিটের সম্পূরক হিসাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, অতীতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এবার সে ধরনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক ফোর্স মোতায়েন ছিল। ঢাকা মহানগরের ইতিহাসে কোনো কর্মসূচি ঘিরে এর আগে কখনো এত পুলিশ মোতায়েন হয়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব এজেন্সির লোক নিয়ে আমি সভা করেছি। রাজনীতিকদেরও সহযোগিতা আছে। আমি নিজে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে কথা বলেছি। সবকিছুই নিশ্ছিদ্রভাবে করার চেষ্টা করেছি।
সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর থেকে বের হন তারেক রহমান। বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট এলাকায় এদিন সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন। পরে তার গাড়িবহর তিনশ ফিটের সমাবেশ মঞ্চের দিকে রওয়ানা হয়। এ সময় গাড়িবহরের চারপাশে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল। চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) থেকে শুরু করে সেনা সদস্য, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন নিরাপত্তা প্রটোকল দেয়। নিরাপত্তা প্রটোকলের মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় তারেক রহমানকে বহনকারী ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ খচিত বাসটি। তিনশ ফিটের সমাবেশস্থলের আশপাশেও নেওয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা।
এদিকে সমাবেশস্থল থেকে তারেক রহমান মাকে দেখতে যান রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে। হাসপাতাল এলাকায়ও বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান নেন। গুলশানে তার বাসভবন ঘিরেও নেওয়া হয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কোথাও কোথাও ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়। সড়কে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরে কড়াকড়ি : তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। কেবল যাত্রীরাই এ সময়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গমনাগমনের জন্য পুলিশ প্রটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা পান।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গুলশানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তারেক রহমানের বাসভবন এবং তারেক রহমানের অফিসকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। বাসা ও অফিসের মাঝখানের দূরত্ব এবং চলাচলের পথকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সাধারণত গুলশান, বনানী ও বারিধারায় ৯টি চেকপোস্ট চালু থাকে। যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
মাঠে ছিল সোয়াত টিম-বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট : তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা উপলক্ষ্যে মাঠে ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াত টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার গুলশানের বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ। ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক আলম যুগান্তরকে বলেন, পুরো এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন : নিরাপত্তা জোরদারে বিমানবন্দর, তিনশ ফিট, গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। সরেজমিন দেখা যায় রাজধানীর গুলশান থেকে বিমানবন্দর এলাকায় বিভিন্ন মোড়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবির সতর্ক অবস্থান। বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশান এক নম্বর মোড়ে দেখা যায় সেখান থেকে গুলশান দুই নম্বর অভিমুখী সড়ক বন্ধ। বিপুল পরিমাণ বিজিবি সদস্যের সরব উপস্থিতি। গুলশান এক থেকে দুই নম্বর এবং সেখান থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালগামী পুরো সড়কের মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো। প্রতিটি মোড়েই বিজিবির উপস্থিতি দেখা গেছে।
