সংঘবদ্ধ চক্রের ভুয়া কপিরাইট রিপোর্ট
জুলাইপন্থিদের পেজ একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংঘবদ্ধ চক্রের ফেক (ভুয়া) কপিরাইট রিপোর্টের ভিত্তিতে জুলাইপন্থিদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও আইডি একের পর এক বন্ধ (ডিজেবল) হয়ে যাচ্ছে। এ তালিকায় রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট, সমন্বয়ক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেটার (ফেসবুক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান) কনটেন্ট রিপোর্টিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি পরিকল্পিতভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
ফেসবুক থেকে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল পেজ থেকে শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ভিডিও (বিদ্রোহী কবিতা) ও প্রোফাইল ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই চক্রের টার্গেটিংয়ের শিকার হয়ে নিজের অফিশিয়াল পেজ হারিয়েছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এটি কোনো টেকনিক্যাল গ্লিচ (কারিগরি ত্রুটি) নয়। টার্গেট করেই পেজ সরানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশ্লেষক তানভির জোহা বলেন, সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হারানোর ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাজনীতি, অ্যাক্টিভিজম ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য একটি স্পষ্ট টেকনিক্যাল অ্যালার্ম (কারিগরি সতর্কতা)। ভুয়া কপিরাইট রিপোর্টকে হাতিয়ার বানিয়ে পরিকল্পিতভাবে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অপব্যবহার উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং নিজেদের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে শহীদ ওসমান হাদির লেখা বহুল আলোচিত বিদ্রোহী কবিতার ভিডিও অদৃশ্য হয়ে গেছে। একই সঙ্গে পেজে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত প্রোফাইল ছবিটিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রোফাইল ছবি বা শহীদ ওসমান হাদির কবিতার ভিডিওটি ডিলিট করা হয়নি। তিনি বলেন, এটি ফেসবুকের কোনো টেকনিক্যাল এররের (কারিগরি ত্রুটি) কারণে হয়ে থাকতে পারে। আমরা কোনো কনটেন্ট সরাইনি। সম্ভবত কমিউনিটি গাইডলাইন বা প্রযুক্তিগত সমস্যার বিষয় থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের সমস্যার সমাধানে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং কোথায় ত্রুটি হয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অভিযোগ করেন-পরিকল্পিতভাবে ভুয়া রিপোর্ট ও কপিরাইট স্ট্রাইক দিয়ে তার ৩০ লাখের বেশি ফলোয়ারসমৃদ্ধ অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি রিমুভ করা হয়েছে। পোস্টে তিনি লেখেন, ওসমান হাদি ভাই সংশ্লিষ্ট সব পোস্ট ও ভিডিওতে একযোগে স্ট্রাইক এবং সংঘবদ্ধ রিপোর্ট করে আমার অফিশিয়াল পেজটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন-বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপে লিংক শেয়ার করে পরিকল্পিতভাবে গণরিপোর্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে ওসমান হাদিকে নিয়ে প্রকাশিত তিনটি ভিডিওতেই কপিরাইট স্ট্রাইক দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিও ডিজেবল (বন্ধ) হয়ে গেছে। ফেসবুকে সার্চ করেও তার ব্যক্তিগত আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ সচল রয়েছে।
নাজিয়া ইসলাম নামে একজন ফেসবুকে স্ক্রিনশট শেয়ার করে জানান, একটি কনটেন্ট আপলোড করেছিলাম। এতে হাদি ভাইয়ের বক্তব্য ছিল। এরই মধ্যে সেটি মেটা থেকে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। পোস্টে তিনি লেখেন-কী কারণে কনটেন্টটি সরানো হয়েছে। তা বুঝতে পারছি না।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও ‘সাইবার-৭১ বাংলাদেশ’-এর পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ভিডিও ও ছবি যারাই ব্যবহার করেছেন, সেলিব্রিটি বা পাবলিক ফিগার সবার অ্যাকাউন্টই একের পর এক টেকডাউন হয়ে যাচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতেও মারাত্মক জটিলতা তৈরি হচ্ছে; অনেক আইডি রিস্টোর করা সম্ভব হচ্ছে না। তার মতে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। তিনি বলেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে মেটা কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া জরুরি।

