আহমদ শফীর বক্তব্যে হতবাক মির্জা ফখরুল
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের নারী শিক্ষা নিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যে হতবাক হয়েছে বিএনপি। রোববার এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজতে ইসলামের আমীরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি।
তিনি নারীবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। আমরা মনে করি, একবিংশ শতাব্দীর দশকে এ ধরনের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সস্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশিদের বিব্রত করবে।
নারী শিক্ষায় দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী, প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কারের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে জাতি গঠনমূলক ও জাতীয় অর্থনীতিতে যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষা। এটি বিএনপি ঘোষিত নীতি।
শক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে আল্লামা শফী মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নারী শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের বিরোধ নেই। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষালাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষর পরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হল মায়ের সাহচর্য। মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না। সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই নারীর শিক্ষা অপরিহার্য। বিএনপি মনে করে, নারী সুশিক্ষায় আলোকিত না হলে তাদের বিকাশ ও প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষিত হওয়া ছাড়া ইসলামে সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক ও মানবিক সাম্যসহ ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী বুঝতে সক্ষম হবে না। দলের সহ দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তারা সমাজে অমানবিক নষ্টবুদ্ধির মানুষদের প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ-বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না।
সরকারের বক্তব্য জানতে চায় মহিলা পরিষদ : আহমদ শফীর বক্তব্যে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরিষদ নেতারা বলেছেন, তার এমন ন্যক্কারজনক বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি অবিলম্বে সেই বক্তব্য যেন তিনি প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে শফীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন পরিষদের নেতারা।
রোববার পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বিবৃতিতে বলেন, আহমদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানো বা পাঠালেও চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো নিয়ে বক্তব্যে ফের তার পুরনো রেকর্ড বাজালেন।
এ বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী, নারীর মানবাধিকার বিরোধী, লিঙ্গীয় সমঅধিকারের বিরোধী এবং নারীর ব্যক্তি অধিকার বিরোধী। মহিলা পরিষদ তার এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং নিন্দা ও ক্ষোভ জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই শফীগণ দীর্ঘদিন ধরে জনসমক্ষে যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তা সবই নারীর মানবাধিকারবিরোধী। শতাব্দীর দীর্ঘ বহুমাত্রিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নারীর যে অধিকার অর্জন হয়েছে এবং ক্ষমতায়নের পথ প্রসারিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে এ ধরনের বক্তব্য অযৌক্তিক, হাস্যকর ও অবান্তর। এমন বক্তব্যের জন্য সে যেন দুঃখ প্রকাশ করে।
একটি মহল আমাকে বিতর্কিত করতে মরিয়া- আহমদ শফী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, কারও বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার না করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার হেফাজতের কার্যালয় থেকে বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেছেন, কারও বক্তব্যকে ব্যাখ্যা দিতে হলে আপনাকে তার কথা বুঝতে ও অনুধাবন করতে হবে। নিজের মতো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো একধরনের অপরাধ। আর খণ্ডিত বক্তব্যকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা আরও বড় অপরাধ।
কোনো কিছু লিখতে চাইলে সঠিক কথাটি লিখবেন। তিনি বলেন, আমাকে নারীবিদ্বেষী, নারী শিক্ষাবিরোধী হিসেবে উপস্থাপনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমি এর জবাব দিয়েছি। মিথ্যাচার করবেন না।
তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি, নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষার ব্যবস্থা করুন এবং তাদের জীবন ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কেউ কারও কন্যাকে অনিরাপদ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিতে পারে না। কারণ দৈনিক পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন চোখে পড়ছে কোথাও না কোথাও কোনো নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে অথবা খুন করা হয়েছে। নৈতিকতা অর্জন না হলে ধর্ষণ, খুন ও উত্ত্যক্তকরণ বন্ধ হবে না। নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হবে না। ইসলামই ফিরিয়ে দিয়েছে নারীর প্রকৃত সম্মান। কিন্তু কেউ কেউ আমার খণ্ডিত বক্তব্যকে ভুলভাবে প্রচার করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এসব হীন কাজ করবেন না। আমার কথার সারাংশ হল উচ্চশিক্ষা কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াতে চাইলে বোরকা গায়ে দিয়ে পড়বে এবং তাদের শিক্ষকও মহিলা হবে বলে তিনি তার বিবৃতিতে এমনটা দাবি করেন।
